১২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘ইনল্যান্ড টাইপ্যান’: প্রাণঘাতী বিষ, শান্ত স্বভাবের এই সরীসৃপের অজানা বিস্ময় কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭৩)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • 30

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, রাণী ভবানীর সমস্ত ‘সৎকীর্ষির উল্লেখ করা এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। কেবল বড়নগরসংক্রান্ত পুণ্যকীর্ত্তির কথামাত্র উল্লিখিত হইবে। আমরা প্রথমতঃ তাঁহার বড়নগরের দৈনন্দিন ক্রিয়ার উল্লেখ করিতেছি। রাণী ভবানী প্রতিদিন রাত্রি চারিদণ্ড থাকিতে গাত্রোত্থান করিয়া, জপকার্য্যে উপবিষ্ট হইতেন; রাত্রি অর্থদণ্ড থাকিতে জপশেষ হইলে, পুষ্পোস্থানে প্রবেশ করিয়া স্বহস্তে পুষ্পচরন করি- তেন। যেদিন অন্ধকার থাকিত, সেদিন ভৃত্যেরা অগ্রপশ্চাৎ মশাল ধরিয়া যাইত।

পুষ্পচয়নের পর প্রত্যুষে গঙ্গাস্নান করিয়া, বেলা দুই দণ্ড পর্যন্ত ঘাটে বসিয়া জপ, গঙ্গাপূজা ও শিবপূজা করা হইত। তাহার পর প্রত্যেক দেবালয়ে ‘পুষ্পাঞ্জলি দিয়া, গৃহে আগমনপূর্ব্বক পুরাণশ্রবণ, শিবপূজা ও ইষ্টপূজা করিতেন। বেলা দুইপ্রহর পর্যন্ত এই সমস্ত কার্য্যে অতি- ১। বাহিত হইত। তাহার পর স্বহস্তে রন্ধন করিয়া। দশজন ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইতেন; অবশেষে পরিবারস্থ ব্রাহ্মণসকলের ভোজনের ব্যবস্থা করিয়া আড়াই প্রহর বেলার পর স্বয়ং হবিষ্যান্ন আহার করিতেন।

তদনন্তর দেওয়ান-দপ্তরে কুশাসনে উপবেশনপূর্ব্বক মুখশুদ্ধি করিয়া কৰ্ম্ম- চারিগণকে বিষয়কর্ম্মের আজ্ঞা দিতেন; তাহারা সেই সমস্ত আদেশ লিখিয়া লইত। তৃতীয় প্রশ্নের পর পুনর্ব্বার ভাষাতে পুরাণশ্রবণ করি- তেন। দুই দণ্ড বেলা থাকিতে পুরাণশ্রবণ শেষ হইত। সেই সময়ে কর্মচারিগণ তাঁহার আদেশানুযায়ী লিখনাদি প্রস্তুত করিয়া স্বাক্ষর করাইতে আসিত। রাণী এই লিখনাদি শুনিয়া তাঁহাতে মুদ্রাঙ্কন করিয়া দিতেন। সায়ংকালে পুনর্ব্বার গঙ্গাদর্শন ও গঙ্গাতে স্বতপ্রদীপ দিয়া, বাসভবনে আসিয়া রাত্রি চারিদণ্ড পর্যন্ত মালা জপ’ করিতেন; তাহার পর জলগ্রহণান্তে দেওয়ান-দপ্তরে বিষয়সংক্রান্ত কার্য্যের আজ্ঞা দিতেন।

রাত্রি এক প্রহরের সময় প্রজাদিগের প্রার্থনা শুনিয়া বিচার করিতেন; অবশেষে পৌরজন কে কিভাবে থাকে, অনুসন্ধান লইয়া, রাত্রি দেড়- প্রহরের সময় শয্যায় গমন করিতেন। রাণী ভবানী বড়নগর ও তাহার নিকটস্থ অন্যান্য দেবালয়ের জন্য প্রায় লক্ষ টাকার ‘বৃত্তি নির্দেশ করিয়া দেন। এই সমস্ত-অর্থ দেবকার্য্যে ব্যয়িত হইত। তিনি তাহা হইতে এক কপর্দকও গ্রহণ করিতেন না। তাঁহার নিজের ও তাঁহার সহচরী বিধবামণ্ডলীর জন্য অবশেষে তাঁহাকে গবর্ণমেন্টের বৃত্তির উপর নির্ভর করিতে হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭৩)

১১:০০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, রাণী ভবানীর সমস্ত ‘সৎকীর্ষির উল্লেখ করা এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। কেবল বড়নগরসংক্রান্ত পুণ্যকীর্ত্তির কথামাত্র উল্লিখিত হইবে। আমরা প্রথমতঃ তাঁহার বড়নগরের দৈনন্দিন ক্রিয়ার উল্লেখ করিতেছি। রাণী ভবানী প্রতিদিন রাত্রি চারিদণ্ড থাকিতে গাত্রোত্থান করিয়া, জপকার্য্যে উপবিষ্ট হইতেন; রাত্রি অর্থদণ্ড থাকিতে জপশেষ হইলে, পুষ্পোস্থানে প্রবেশ করিয়া স্বহস্তে পুষ্পচরন করি- তেন। যেদিন অন্ধকার থাকিত, সেদিন ভৃত্যেরা অগ্রপশ্চাৎ মশাল ধরিয়া যাইত।

পুষ্পচয়নের পর প্রত্যুষে গঙ্গাস্নান করিয়া, বেলা দুই দণ্ড পর্যন্ত ঘাটে বসিয়া জপ, গঙ্গাপূজা ও শিবপূজা করা হইত। তাহার পর প্রত্যেক দেবালয়ে ‘পুষ্পাঞ্জলি দিয়া, গৃহে আগমনপূর্ব্বক পুরাণশ্রবণ, শিবপূজা ও ইষ্টপূজা করিতেন। বেলা দুইপ্রহর পর্যন্ত এই সমস্ত কার্য্যে অতি- ১। বাহিত হইত। তাহার পর স্বহস্তে রন্ধন করিয়া। দশজন ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইতেন; অবশেষে পরিবারস্থ ব্রাহ্মণসকলের ভোজনের ব্যবস্থা করিয়া আড়াই প্রহর বেলার পর স্বয়ং হবিষ্যান্ন আহার করিতেন।

তদনন্তর দেওয়ান-দপ্তরে কুশাসনে উপবেশনপূর্ব্বক মুখশুদ্ধি করিয়া কৰ্ম্ম- চারিগণকে বিষয়কর্ম্মের আজ্ঞা দিতেন; তাহারা সেই সমস্ত আদেশ লিখিয়া লইত। তৃতীয় প্রশ্নের পর পুনর্ব্বার ভাষাতে পুরাণশ্রবণ করি- তেন। দুই দণ্ড বেলা থাকিতে পুরাণশ্রবণ শেষ হইত। সেই সময়ে কর্মচারিগণ তাঁহার আদেশানুযায়ী লিখনাদি প্রস্তুত করিয়া স্বাক্ষর করাইতে আসিত। রাণী এই লিখনাদি শুনিয়া তাঁহাতে মুদ্রাঙ্কন করিয়া দিতেন। সায়ংকালে পুনর্ব্বার গঙ্গাদর্শন ও গঙ্গাতে স্বতপ্রদীপ দিয়া, বাসভবনে আসিয়া রাত্রি চারিদণ্ড পর্যন্ত মালা জপ’ করিতেন; তাহার পর জলগ্রহণান্তে দেওয়ান-দপ্তরে বিষয়সংক্রান্ত কার্য্যের আজ্ঞা দিতেন।

রাত্রি এক প্রহরের সময় প্রজাদিগের প্রার্থনা শুনিয়া বিচার করিতেন; অবশেষে পৌরজন কে কিভাবে থাকে, অনুসন্ধান লইয়া, রাত্রি দেড়- প্রহরের সময় শয্যায় গমন করিতেন। রাণী ভবানী বড়নগর ও তাহার নিকটস্থ অন্যান্য দেবালয়ের জন্য প্রায় লক্ষ টাকার ‘বৃত্তি নির্দেশ করিয়া দেন। এই সমস্ত-অর্থ দেবকার্য্যে ব্যয়িত হইত। তিনি তাহা হইতে এক কপর্দকও গ্রহণ করিতেন না। তাঁহার নিজের ও তাঁহার সহচরী বিধবামণ্ডলীর জন্য অবশেষে তাঁহাকে গবর্ণমেন্টের বৃত্তির উপর নির্ভর করিতে হয়।