০৭:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩০)

  • Sarakhon Report
  • ০৬:০৬:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • 8

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়া প্রাক্ক্লাসিক এবং ক্লাসিক পর্ব

 মায়া-সভ্যতাকে প্রধানত প্রাক্-ক্লাসিক, ক্লাসিক এবং পরবর্তী ক্লাসিক এই তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রাক্-ক্লাসিক পর্বটি খুব স্পষ্ট ও উজ্জ্বল না হলেও তার নানা বৈশিষ্ট্য ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এক্ষেত্রে প্রাক্-ক্লাসিক পর্বের সময়কে ধরা হয় ২৫০০ খ্রিঃ পূর্ব বা তারও কিছুটা আগে থেকে। এই পর্বের শুরুটা করেছিল ওলমেকরা। (পূর্বে কিছুটা আলোচিত) এই পর্বের মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক জনজীবন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নিজস্ব ঘরানায় তৈরি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং নানাক্ষেত্রে তার সুকৌশলী ব্যবহার।

যার অন্যতম সফল প্রকাশ ঘটেছিল স্থাপত্য বিদ্যা ও সৌন্দর্যে। এছাড়া চোখে পড়ার মত ছিল জ্যোতির্বিদ্যা,বর্ষপঞ্জী গঠন এবং শিলালিপি ভাস্কর্য। এই অংশটির সম্পূর্ণ উন্মোচন এবং স্বরূপ বিকশিত হয় ক্লাসিক মায়াপর্বের সময়সীমার মধ্যে। মায়া-ক্লাসিক পর্বের সময়কালকে সাধারণত ধরা হয় ৩০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ। এই সময়ের মধ্যে মায়ারা পর্যায়ক্রমে নানা স্তরে বিভক্ত একটি সমাজ গড়ে তুলেছিল। এবং এর মধ্যে ছিল নানাবিধ জীবিকার বৈচিত্র্য। ছিল কেন্দ্রীভূত একটি শাসনব্যবস্থা যাকে আধুনিক ভাষায় ‘সরকার’ও বলতে পারি।

যদিও এই সরকারের প্রধান নব্যবস্থা যাকে আধুনিক ভাষায় রাজার অধীনস্থ ভৌগোলিক অঞ্চলও বিধিবদ্ধ ও সীমানায় বাঁধা ছিল। এই ভৌগোলিক সীমানা অবশ্য সময়ান্তরে অন্যান্য রাজার আক্রমণ, যুদ্ধ-দ্বন্দ্বর জন্য কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছিল। মায়াদের কেন্দ্রগুলি প্রসারিত হয়েছিল প্রধানত মেক্সিকো গুয়াতেমালা, পালাঙ্গে, ইয়াক্সচিলান (Yaxchilan), কোপান (Copan) এবং কিরিগুয়া (Quirigua) বা আধুনিক হন্ডুরাস পর্যন্ত। তবে এসত্ত্বেও মায়া জনবসতি প্রধানত কেন্দ্রীভূত ছিল মেক্সিকো এবং চেলিজে। এছাড়া আধুনিক কানকুন অঞ্চলের নাম ছিল উত্তর ইউকাতান।

নবম শতকের শুরু থেকে জনবসতির নানা অঞ্চল ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। জনসংখ্যাও খুব দ্রুতহারে হ্রাস পেতে শুরু করে প্রধানত খরা, বাণিজ্যের মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হল শহর এবং অঞ্চলগত শত্রুতা, বৈরিতার ফলে রাজ্যগুলি ছোট হল। নীচু বা সমতল এলাকার শহরগুলির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হওয়ার জন্য উকসমাল, উত্তর ইউকাতান অঞ্চলে নতুন করে নগরসূলভ জনপদ গড়ে উঠেছিল। এক্ষেত্রে মায়াদের মূল ধর্মীয় প্রবণতা প্রসঙ্গে নৃতাত্ত্বিকগণ বলেন যে, মায়ারা আজতেকদের (পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচিত) তুলনায় শান্তিপূর্ণ।

আজতেকরা রক্তপান, রক্তদান-এ খুব বিশ্বাস করে। তবুও একথা বলা যায় না যে মায়ারা রক্তদান বা অন্য কোনো কিছু দানে বিশ্বাসী নয়। মায়ারা তাদের জীবন দান না করলেও ঈশ্বরকে রক্তদান করে এবং এই রক্তদান-এর লোকাচার অনেক সময় খুবই কষ্টদায়ক। ধাতব কিছু শরীরে ঢুকিয়ে রক্ত বার করা হয় এবং সেই তাজা রক্ত ঈশ্বর গ্রহণ করলে তাদের খুব মঙ্গল হয়। মনে করা হয় মায়াদের মধ্যে কমবেশি সবাই তাদের ধর্মীয় আচার পালনের সময় রক্তদান করেন। মায়ারা কমবেশি যুদ্ধও করেছিল এবং প্রতিবেশী অঞ্চলের উপর আক্রমণ করে সেই এলাকা দখলের কাজেও ব্যস্ত হত। সাধারণত প্রথমে বন্দীদের শরীরের ভেতর থেকে কলজে বার করে নিত এবং তারপরে তাদের মাথা ধারাল অস্ত্রে ছেদন করে সেই রক্ত পৃথিবীর দেবতাকে দান করা হত।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-২৯)

১৪ জুলাই অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩০)

০৬:০৬:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়া প্রাক্ক্লাসিক এবং ক্লাসিক পর্ব

 মায়া-সভ্যতাকে প্রধানত প্রাক্-ক্লাসিক, ক্লাসিক এবং পরবর্তী ক্লাসিক এই তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রাক্-ক্লাসিক পর্বটি খুব স্পষ্ট ও উজ্জ্বল না হলেও তার নানা বৈশিষ্ট্য ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এক্ষেত্রে প্রাক্-ক্লাসিক পর্বের সময়কে ধরা হয় ২৫০০ খ্রিঃ পূর্ব বা তারও কিছুটা আগে থেকে। এই পর্বের শুরুটা করেছিল ওলমেকরা। (পূর্বে কিছুটা আলোচিত) এই পর্বের মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক জনজীবন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নিজস্ব ঘরানায় তৈরি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং নানাক্ষেত্রে তার সুকৌশলী ব্যবহার।

যার অন্যতম সফল প্রকাশ ঘটেছিল স্থাপত্য বিদ্যা ও সৌন্দর্যে। এছাড়া চোখে পড়ার মত ছিল জ্যোতির্বিদ্যা,বর্ষপঞ্জী গঠন এবং শিলালিপি ভাস্কর্য। এই অংশটির সম্পূর্ণ উন্মোচন এবং স্বরূপ বিকশিত হয় ক্লাসিক মায়াপর্বের সময়সীমার মধ্যে। মায়া-ক্লাসিক পর্বের সময়কালকে সাধারণত ধরা হয় ৩০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ। এই সময়ের মধ্যে মায়ারা পর্যায়ক্রমে নানা স্তরে বিভক্ত একটি সমাজ গড়ে তুলেছিল। এবং এর মধ্যে ছিল নানাবিধ জীবিকার বৈচিত্র্য। ছিল কেন্দ্রীভূত একটি শাসনব্যবস্থা যাকে আধুনিক ভাষায় ‘সরকার’ও বলতে পারি।

যদিও এই সরকারের প্রধান নব্যবস্থা যাকে আধুনিক ভাষায় রাজার অধীনস্থ ভৌগোলিক অঞ্চলও বিধিবদ্ধ ও সীমানায় বাঁধা ছিল। এই ভৌগোলিক সীমানা অবশ্য সময়ান্তরে অন্যান্য রাজার আক্রমণ, যুদ্ধ-দ্বন্দ্বর জন্য কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছিল। মায়াদের কেন্দ্রগুলি প্রসারিত হয়েছিল প্রধানত মেক্সিকো গুয়াতেমালা, পালাঙ্গে, ইয়াক্সচিলান (Yaxchilan), কোপান (Copan) এবং কিরিগুয়া (Quirigua) বা আধুনিক হন্ডুরাস পর্যন্ত। তবে এসত্ত্বেও মায়া জনবসতি প্রধানত কেন্দ্রীভূত ছিল মেক্সিকো এবং চেলিজে। এছাড়া আধুনিক কানকুন অঞ্চলের নাম ছিল উত্তর ইউকাতান।

নবম শতকের শুরু থেকে জনবসতির নানা অঞ্চল ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। জনসংখ্যাও খুব দ্রুতহারে হ্রাস পেতে শুরু করে প্রধানত খরা, বাণিজ্যের মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হল শহর এবং অঞ্চলগত শত্রুতা, বৈরিতার ফলে রাজ্যগুলি ছোট হল। নীচু বা সমতল এলাকার শহরগুলির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হওয়ার জন্য উকসমাল, উত্তর ইউকাতান অঞ্চলে নতুন করে নগরসূলভ জনপদ গড়ে উঠেছিল। এক্ষেত্রে মায়াদের মূল ধর্মীয় প্রবণতা প্রসঙ্গে নৃতাত্ত্বিকগণ বলেন যে, মায়ারা আজতেকদের (পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচিত) তুলনায় শান্তিপূর্ণ।

আজতেকরা রক্তপান, রক্তদান-এ খুব বিশ্বাস করে। তবুও একথা বলা যায় না যে মায়ারা রক্তদান বা অন্য কোনো কিছু দানে বিশ্বাসী নয়। মায়ারা তাদের জীবন দান না করলেও ঈশ্বরকে রক্তদান করে এবং এই রক্তদান-এর লোকাচার অনেক সময় খুবই কষ্টদায়ক। ধাতব কিছু শরীরে ঢুকিয়ে রক্ত বার করা হয় এবং সেই তাজা রক্ত ঈশ্বর গ্রহণ করলে তাদের খুব মঙ্গল হয়। মনে করা হয় মায়াদের মধ্যে কমবেশি সবাই তাদের ধর্মীয় আচার পালনের সময় রক্তদান করেন। মায়ারা কমবেশি যুদ্ধও করেছিল এবং প্রতিবেশী অঞ্চলের উপর আক্রমণ করে সেই এলাকা দখলের কাজেও ব্যস্ত হত। সাধারণত প্রথমে বন্দীদের শরীরের ভেতর থেকে কলজে বার করে নিত এবং তারপরে তাদের মাথা ধারাল অস্ত্রে ছেদন করে সেই রক্ত পৃথিবীর দেবতাকে দান করা হত।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-২৯)