০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • 68

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতির্বিদ্যা এবং গ্রহউপগ্রহ

মায়াদের পিরামিড, মন্দিরকে নিয়ে অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস ও শক্তির পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যার চর্চাও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। মায়াদের জোতির্বিদ্যায় আকাশের অনেক তারা, চন্দ্র, শুক্র এবং তাদের অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। নক্ষত্রলোকের প্রতি তাদের কৌতূহল ও অনুসন্ধানের প্রশংসা করতে হয়। এক্ষেত্রে আবার কিছু মন্দিরের দরজা এবং অন্যকিছু দিক আছে যা নক্ষত্রকথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। গোলাকার মন্দির অনেক সময় কুকুক্লানকে (Kukuclan) উৎসর্গ করা হয় এবং আধুনিক পর্যটক-সহায়ক একে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও (Observatories) বলেন। যদিও এই ধরনের সমর্থনে স্পষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। এই সঙ্গে একথা বরং বলা হয় যে বিভিন্ন আকারের পিরামিডকে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (Observatories) হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

লিখন-পদ্ধতি, প্রস্তরলিপি ইত্যাদি: মায়াদের আকাশবিজ্ঞান পিরামিড সম্পর্কিত ধর্মীয় বিশ্বাসের পরেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের অক্ষর, লিখন-পদ্ধতি এবং শিলালিপির নানা বৈচিত্র্য। এইসব শিল্প মহিমা-সৌন্দর্য প্রাক্-ক্লাসিক পর্বেই বেশি দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীকালেও তার অবশিষ্টাংশ চোখে লাগার মত। মায়াদের লিখন- পদ্ধতির সঙ্গে অনেকে প্রাচীন মিশরীয় লিখনের মিল খুঁজে পান। কিন্তু সেইরকম স্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ বা প্রেক্ষাপটের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে মায়াদের এই লেখা, শব্দ- রচনা বাক্যের মধ্যে রয়েছে ধ্বনি (Phonetic) এবং চিত্ররেখার (Logogrames) মিশ্রণ।

এই ধরনের লিখনশৈলীকে সাধারণভাবে চিত্ররেখা এবং চিত্রক্ষেপ (Logoslyllabie) সুষম মিশ্রণ হিসেবে দেখা যায়। এর মধ্যে শব্দ চিহ্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতিও থাকে। লেখার এই বিশেষ পদ্ধতি, শৈলী প্রাক্-কলম্বিয়া যুগের একমাত্র লিখন-পদ্ধতি এবং কথ্যভাষা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত। মোটামুটিভাবে সমীক্ষা চালিয়ে এরকম কমবেশি হাজার রকমের প্রস্তরলিপি মায়াদের মধ্যে পাওয়া গেছে। তবে এসবের মধ্যে বেশিরভাগই মোটামুটি একরকমের। চিহ্ন ও অর্থগত পার্থক্য খুবই কম দেখা গেছে। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে আনুমানিক ৫০০-র মত লিপি ব্যবহৃত হোত। এর মধ্যে ভিন্নতর চিহ্ন নিয়ে লিপি ছিল দু’শ রকম।

সবচেয়ে প্রাচীন লিপির নমুনার সন্ধান পাওয়া গেছে খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৩০০ শতকে। কিন্তু এখানেই লিপি-লিখনের প্রাচীনত্ব শেষ হয়নি। অনুসন্ধান, গবেষণার ফলে এর থেকে আগেও মেসোআমেরিকায় ব্যবহৃত হয়েছিল অন্যান্য লিখন-পদ্ধতি। এই সময়টা পুরাতাত্ত্বিকদের মতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-৫০০ শতক। মায়া বিশেষজ্ঞরা একথাও মনে করেন মায়া লিখন-পদ্ধতির অনেকটাই পূর্ববর্তী ওলমেক (Olmec) পদ্ধতি থেকে এসেছে। কিন্তু তা সত্বেও একথা স্বীকার করতে হয় মায়ারা পরবর্তীকালে ক্রমশ তাদের লিখন-পদ্ধতি উন্নত করেছে।

কিন্তু সমাজ-রাজনীতি, বাইরের শক্তির অনুপ্রবেশ (ইউরোপীয় বা স্প্যানিশ)-এর পর থেকে এই লিখন-পদ্ধতির প্রাধান্য কিছুটা শিথিল হয়েছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জনগোষ্ঠী তখনো এই শব্দ, লিখন-পদ্ধতি জানত। এমনকি স্প্যানিশ শাসকের সূচনা ঘটার পরও কিছু কিছু স্প্যানিশ মায়াদের লেখা পড়তে পারত এবং লিখতেও জানত। একটি খসড়ার হিসেব থেকে জানা যায় ব্যক্তিগতভাবে পাথরের উপর লেখা এমন প্রায় দশ হাজার নমুনা পাওয়া গেছে।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪২)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪২)

জনপ্রিয় সংবাদ

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪৩)

০৭:০০:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতির্বিদ্যা এবং গ্রহউপগ্রহ

মায়াদের পিরামিড, মন্দিরকে নিয়ে অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস ও শক্তির পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যার চর্চাও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। মায়াদের জোতির্বিদ্যায় আকাশের অনেক তারা, চন্দ্র, শুক্র এবং তাদের অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। নক্ষত্রলোকের প্রতি তাদের কৌতূহল ও অনুসন্ধানের প্রশংসা করতে হয়। এক্ষেত্রে আবার কিছু মন্দিরের দরজা এবং অন্যকিছু দিক আছে যা নক্ষত্রকথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। গোলাকার মন্দির অনেক সময় কুকুক্লানকে (Kukuclan) উৎসর্গ করা হয় এবং আধুনিক পর্যটক-সহায়ক একে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও (Observatories) বলেন। যদিও এই ধরনের সমর্থনে স্পষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। এই সঙ্গে একথা বরং বলা হয় যে বিভিন্ন আকারের পিরামিডকে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (Observatories) হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

লিখন-পদ্ধতি, প্রস্তরলিপি ইত্যাদি: মায়াদের আকাশবিজ্ঞান পিরামিড সম্পর্কিত ধর্মীয় বিশ্বাসের পরেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের অক্ষর, লিখন-পদ্ধতি এবং শিলালিপির নানা বৈচিত্র্য। এইসব শিল্প মহিমা-সৌন্দর্য প্রাক্-ক্লাসিক পর্বেই বেশি দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীকালেও তার অবশিষ্টাংশ চোখে লাগার মত। মায়াদের লিখন- পদ্ধতির সঙ্গে অনেকে প্রাচীন মিশরীয় লিখনের মিল খুঁজে পান। কিন্তু সেইরকম স্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ বা প্রেক্ষাপটের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে মায়াদের এই লেখা, শব্দ- রচনা বাক্যের মধ্যে রয়েছে ধ্বনি (Phonetic) এবং চিত্ররেখার (Logogrames) মিশ্রণ।

এই ধরনের লিখনশৈলীকে সাধারণভাবে চিত্ররেখা এবং চিত্রক্ষেপ (Logoslyllabie) সুষম মিশ্রণ হিসেবে দেখা যায়। এর মধ্যে শব্দ চিহ্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতিও থাকে। লেখার এই বিশেষ পদ্ধতি, শৈলী প্রাক্-কলম্বিয়া যুগের একমাত্র লিখন-পদ্ধতি এবং কথ্যভাষা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত। মোটামুটিভাবে সমীক্ষা চালিয়ে এরকম কমবেশি হাজার রকমের প্রস্তরলিপি মায়াদের মধ্যে পাওয়া গেছে। তবে এসবের মধ্যে বেশিরভাগই মোটামুটি একরকমের। চিহ্ন ও অর্থগত পার্থক্য খুবই কম দেখা গেছে। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে আনুমানিক ৫০০-র মত লিপি ব্যবহৃত হোত। এর মধ্যে ভিন্নতর চিহ্ন নিয়ে লিপি ছিল দু’শ রকম।

সবচেয়ে প্রাচীন লিপির নমুনার সন্ধান পাওয়া গেছে খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৩০০ শতকে। কিন্তু এখানেই লিপি-লিখনের প্রাচীনত্ব শেষ হয়নি। অনুসন্ধান, গবেষণার ফলে এর থেকে আগেও মেসোআমেরিকায় ব্যবহৃত হয়েছিল অন্যান্য লিখন-পদ্ধতি। এই সময়টা পুরাতাত্ত্বিকদের মতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-৫০০ শতক। মায়া বিশেষজ্ঞরা একথাও মনে করেন মায়া লিখন-পদ্ধতির অনেকটাই পূর্ববর্তী ওলমেক (Olmec) পদ্ধতি থেকে এসেছে। কিন্তু তা সত্বেও একথা স্বীকার করতে হয় মায়ারা পরবর্তীকালে ক্রমশ তাদের লিখন-পদ্ধতি উন্নত করেছে।

কিন্তু সমাজ-রাজনীতি, বাইরের শক্তির অনুপ্রবেশ (ইউরোপীয় বা স্প্যানিশ)-এর পর থেকে এই লিখন-পদ্ধতির প্রাধান্য কিছুটা শিথিল হয়েছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জনগোষ্ঠী তখনো এই শব্দ, লিখন-পদ্ধতি জানত। এমনকি স্প্যানিশ শাসকের সূচনা ঘটার পরও কিছু কিছু স্প্যানিশ মায়াদের লেখা পড়তে পারত এবং লিখতেও জানত। একটি খসড়ার হিসেব থেকে জানা যায় ব্যক্তিগতভাবে পাথরের উপর লেখা এমন প্রায় দশ হাজার নমুনা পাওয়া গেছে।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪২)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪২)