বিশেষ সংবাদাতা
আমেরিকার কযেকটি স্টেটে ইতোমধ্যে ভোট গ্রহন শুরু হয়ে গেছে। দুটো টাইম জোনে বিভক্ত আমেরিকায় দুই টাইম জোনেই ভোট গ্রহন ও শেষ হবে। আমেরিকার ৭ কোটি মানুষ ইতোমধ্য তাদের ভোট আগেই দিয়েছেন। তারা যখন আগাম ভোট দিয়েছেন সে সময় তাদের মাথায় যেমন বেশ কিছু বিষয় রাখতে হয়েছিলো এ মুহূর্তে যারা ভোট দিচ্ছেন এবং কিছুক্ষণ পরে যারা ভোট দেবেন তাদেরও সামনে বেশ কিছু বিষয় আসবে।
তারা এক টার্ম আগের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামল মনে রাখবেন। যারা আদর্শগতভাবে অনেকটা লিবারেল ডেমক্রেসিতে বিশ্বাস করেন,তারা মনে করেন, ওই টার্মে ট্রাম্প গনতন্ত্রকে একটি ন্যারো করিডোরে নিয়ে এসেছিলেন। আবার তাদের বিপরীতে অন্য আরেকটি গোষ্টি যারা মনে করেন, ট্রাম্প নিজ দেশের গণতন্ত্র’র থেকে বেশি জোর দিয়েছিলেন, নিজ দেশের অর্থনীতির ওপর। এবং অনেকটা কর্পোরেট স্টাইলে তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন। বর্তমানের অর্থনীতিতে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়েও বির্তক আছে। কারণ থিওরির অর্থনীতি অনেক সময় প্রাকটিকাল অর্থনীতির সঙ্গে মেলে না।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপরীতে এবার প্রার্থী থাকার কথা ছিলো জো বাইডেনের। যাকে অনেকটা জোর করেই তাঁর শারিরিক অক্ষমতার জন্য তার দল নির্বাচনের অনেকটা শেষ মুহূর্তে এসে তাঁকে প্রার্থীতা থেকে টেনে নিয়েছেন। এবং সেখানে পার্টির অভ্যন্তরীন নির্বাচনের মাধ্যমে মনোনয়ন নয় সরাসরি মনোনীতি করেছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হারিসকে। যে কারণে কমলাকে অনেক মিডিয়া আন্ডার ডগ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। তাছাড়া তিনি প্রয়োজনীয় নির্বাচনী প্রচারের সময়ও পাননি।
তারপরেও ডেমোক্র্যাটদের প্রচারের যে বাড়তি সুবিধা অর্থাৎ সে দেশের বড় কয়েকটি পত্রিকা ও জনপ্রিয় কয়েকটি কেবল টিভি সরাসরি ডেমোক্র্যাটকে সমর্থন করে। কমলাও সেটা পেয়েছেন। তাছাড়া নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে তিনি ওই সব পত্র পত্রিকার জরিপে পপুলার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের আগের রাতে আনডিসাইডেড ভোটারদের বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়া ভোটারদের জরিপে কমলা দুই পারসেন্ট ভোটে পিছিয়ে পড়েন। যদিও অতীতেও এই জরিপগুলো কখনই সঠিক হয়নি এবারও অনেকেই বলছেন জরিপগুলো শুধুমাত্র ধারনা। তাছাড়া আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই সকল জরিপের ধারনার অবসান ঘটবে।
এবারের আমেরিকার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী যদি জো বাইডেন হতেন তাহলে তিনি দাবী করতে পারতেন তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী আমেরিকার অর্থনীতিকে সচল ও স্বাস্থ্যবান করেছিলেন। কমলাও তার উত্তরাধিকার হিসেবে সেটা বলতে পারেন। যে তার দল এটা করেছিলো। তবে যে সময়ে এই নির্বাচন হচ্ছে সে সময়ে আমেরিকার একটি বড় অংশ মানুষ ওই সফলতার থেকে বেশি বলছে, জো বাইডেন সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষ নেবার ফলে আমেরিকাকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। যা তাদের জন্যে একটি অপচয়। ঠিক তেমনি কমলা যে সময়ে প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়েছেন ওই সময়ে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যে’র সংঘাতের বা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। যা তাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
এই দুই যুদ্ধের খরচ নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে সঠিক কোন জবাব নেই। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর অবস্থান এই যুদ্ধের বিপরীতে স্পষ্ট না হলেও তিনি তাঁর দেশে অভিবাসন বিরোধীতা স্পষ্ট করেছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকা বানিজ্যে যে ট্যারিফ ছাড় দেয় তিনি তাঁর বিরুদ্ধে। এই দুই মিলিয়ে তিনি তার নির্বাচনী স্লোগান তুলেছেন “ আমেরিকা গ্রেট” । তিনি যে কোন মূল্যে আমেরিকার অর্থনীতিকে ভালো করতে চান। এর বিপরীতে কমলা হারিস গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া, সমকামীতাকে বৈধতা দেয়া ও ওবামা কেয়ার হিসেবে পরিচিত স্বাস্থ্য সেবাকে জোর দিয়েছেন বেশি। মানুষ আমেরিকা গ্রেট এর বিপরীতে ডেমোক্র্যাটদের ওই বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই ভোট দিচ্ছেন।
সারা পৃথিবী সহ আমেরিকার মানুষ এবার নির্বাচনে আরো দুটো বিষয়কে অনেক বেশি চিহ্নিত করেছে। তারা চিহ্নিত করেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সব থেকে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। এবং কমলা একজন ইন্ডিয়ান আমেরিকান। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেউ কেউ দোষারোপ করেছেন, তিনি আমেরিকাকে ভাগ করে ফেলেছেন। অর্থাৎ শেতাঙ্গ আমেরিকা ও অভিাবাসীদের মধ্যে তিনি একটা পার্থক্য রেখা টেনে দিতে সমর্থ হয়েছেন। কমলা সেই অভিবাসীদের একজন। তিনি ইন্ডিয়ান আমেরিকান।
কিন্তু জরিপে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের ৩০% ভোট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে। তাছাড়া নির্বাচন শুরু হবার কয়েক ঘন্টা আগে ভারতের সাবেক ফরেন সেক্রেটারি হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা সি এন এন কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যা দুই দেশের মানুষের জন্যে সুবিধাজনক। তবে যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কোন অসুবিধার নয়।কারণ,পররাষ্ট্রনীতি একটি সিস্টেম এখানে ব্যক্তি কম গুরুত্ব রাখে। সি এন এন এ দেয়া ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের আরেক নেতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে যে সহানুভূতি জানিয়ে যে টুইট করেছেন তা আমেরিকান হিন্দু ভোটের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে কিনা? ওই নেতা অবশ্য বলেন, তারা আগে আমেরিকান- তবে সব ইন্ডিয়ান আমেরিকান যে একক চিন্তায় ভোট দেবে এটা ভাবা উচিত নয়।
অন্যদিকে,এশিয়ান বেশ কয়েকজন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্ট্রেইট টাইমকে এশিয়া স্টাডিজের ফেলো হিসেবে বলেছেন,ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে এশিয়ার প্রতিক্রিয়া মিশ্র হবে। কারণ,তিনি বানিজ্যে ট্যারিপ আরোপ করবেন অনেক বেশি। আবার সাউথ এশিয়ার কিছু থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জো বাইডেন যার উত্তরাধিকার কমলা হারিস তাকে দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানে মৌলবাদ ও এনার্কি সৃষ্টি হবার জন্যে দায়ী করেন। আবার অনেকটা সরাসরি ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন রাশিয়ান মিডিয়া অনেক রুশ পলিটিক্যাল এনালিস্ট। তারা মনে করছেন,ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে কিছুটা হলেও আমেরিকাকে উথড্র করবেন।
অন্যদিকে, মিডলইস্টের অনেক এনালিস্ট মনে করেন নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, ইউক্রেন ও মিডল ইস্ট যুদ্ধ বন্ধ হবে না।