শোভাযাত্রা এই মন্দিরের কাছে এসে পৌঁছলে সকলেই হাতী থেকে নামলেন, আর বেদীতে প্রতিমা ধুয়ে রাজা স্বয়ং ঘাড়ে করে প্রতিমাটি মন্দিরে রাখলেন
মহারাজার আদেশে দুইটা প্রকাও প্রকাণ্ড সভামণ্ডপ এখানে তৈরি ছিল। তাঁর নিজের সাময়িক প্রাসাদ ছিল এর মাইলখানেক পশ্চিমে। ‘হিউএনচাঙের বিবরণ থেকে যতদূর বোঝা যায়, সভা সম্ভবত আঠারো দিনব্যাপী ছিল। সভার প্রথম দিন প্রত্যুষে শীলাদিত্য রাজার সাময়িক প্রাসাদে একটা প্রকাণ্ড হাতীর উপর একটা মহার্ঘ হাওদা রাখা হল।
আর তার উপর বুদ্ধের এক স্বর্ণপ্রতিমা রাখা হল। তার পর একটা শোভাযাত্রা তৈয়ারী হল। বুদ্ধ প্রতিমার ডান দিকে সজ্জিত হস্তীপৃষ্ঠে শত্রুদেবের বেশে চামর হস্তে শীলাদিত্য, আর বাঁ দিকে ঐরকম হস্তীপৃষ্ঠে ব্রহ্মাদেবের বেশে ছত্র হস্তে কামরূপরাজ কুমাররাজা। এরা প্রত্যেকেই দেবতাদের মতন মুকুট, ফুলের মালা, আর রত্নখচিত ফিতায় সজ্জিত ছিলেন। আর প্রত্যেকেরই অনুচরস্বরূপ পাঁচ শত বর্মাবৃত রণহস্তী ছিল।
বুদ্ধপ্রতিমার সামনে আর পিছনে একশত বড় বড় হাতীতে বাদ্যকররা ছিল। রাজ-কর্মচারীরা আর স্বয়ং হিউএনচাঙ প্রত্যেকেই এক-এক হাতীতে রাজার সঙ্গে যাবার অদেশ পেলেন। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের রাজন্য, রাজমন্ত্রী ইত্যাদি জোড়া জোড়া হাতীতে চললেন।
সভামণ্ডপের কাছে একশত ফুট উঁচু একটা মন্দির আর বেদী তৈরি ছিল। শোভাযাত্রা এই মন্দিরের কাছে এসে পৌঁছলে সকলেই হাতী থেকে নামলেন, আর বেদীতে প্রতিমা ধুয়ে রাজা স্বয়ং ঘাড়ে করে প্রতিমাটি মন্দিরে রাখলেন, আর নানা বস্ত্র-অলঙ্কার দিয়ে পূজা করলেন।
তার পর রাজাদের আর বাছাই-করা এক হাজার বিদ্যাবিশ্রুত ভিক্ষু, পাঁচশত বিখ্যাত ব্রাহ্মণ ও অন্য বিধর্মী পণ্ডিত, আর নানা দেশের দুইশত রাজমন্ত্রীদের সভায় প্রবেশ করতে বলা হল। অন্য দর্শকদের বাইরে বসবার স্থান নির্দিষ্ট হল। তার পর বাইরে ভিতরে যারা যারা ছিল, সকলকেই একটা ভোজ দেওয়া হল।
এই ভোজে কী কী খেতে দেওয়া হয়েছিল জানতে ইচ্ছা হয়; কিন্তু হিউএনচাঙ সে কথা বলেন নি। তবে আমিষ ছিল না নিশ্চয়ই। কারণ পশুবধ নিষেধ হয়ে গিয়েছিল।
তার পর রাজারা ও ভিক্ষুরা (এর মধ্যে হিউএনচাঙও ছিলেন) আবার যথাশক্তি বুদ্ধপ্রতিমার সামনে পূজা দিলেন।
এখন সভার কাজ আরম্ভ হল। প্রথমে হর্ষবর্ধন এক মহামূল্য আসন আনিয়ে ধর্মগুরুকে তর্কপতি নিয়োগ করে আসনে বসালেন।
(চলবে)