০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

পুতিনের পারমাণবিক শিকল: তুরস্ক, বাংলাদেশ ও ইউরোপ

পারমাণবিক বাণিজ্যে নতুন মহারণ

ইসরায়েল-ইরান স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের সময় বিশ্বদৃষ্টি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির দিকে ছিল। ওই আলোচনার আড়ালে চলেছে আরেকটি ঠান্ডা লড়াই—আন্তর্জাতিক পরমাণু প্রযুক্তি ও সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বাজার দখলের প্রতিযোগিতা। বেসামরিক পারমাণবিক শিল্প মূলত দু ভাগে বিভক্ত: বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম-জ্বালানি উৎপাদন-সরবরাহ। প্রথম খাতে নিজস্ব বড় বড় কেন্দ্র থাকা দেশগুলো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া) নিজেরা নির্মাণ করলেও রপ্তানি বাজারও আছে। জ্বালানি বাজার আরও কেন্দ্রীভূত—মাত্র কয়েকটি দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। এই বাজার যে দখলে রাখবে, সে কূটনৈতিক প্রভাব, অ-প্রসারণ পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা মানদণ্ড নির্ধারণে বিরাট ভূমিকা পাবে।

রাশিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য

বিশ্ব নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, রুশ রাষ্ট্রীয় কোম্পানি রোসআটম বৈদ্যুতিক পারমাণবিক কেন্দ্র রপ্তানির প্রায় ৬৫ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বাজারেও রাশিয়া প্রথম; বৈশ্বিক সক্ষমতার ৪৪ শতাংশ তাদের দখলে। ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রয়োজনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে এনেছে; পাঁচটি রুশ নকশার রিঅ্যাক্টরযুক্ত দেশ—বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া—এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরশীল। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রও প্রায় ২৫ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে কিনেছে।

কাঁচা টাকা আর কূটনৈতিক চাপ

বিশ্বব্যাংকের বাণিজ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে রাশিয়া সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রপ্তানি করে আয় করেছে প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রিঅ্যাক্টর-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ থেকে আরও ১.১ বিলিয়ন ডলার। রোসআটমের বিদেশি কার্যকলাপ মোট রাজস্ব এনেছে ১৬ বিলিয়নের বেশি; এর মধ্যে ৭ বিলিয়নের বেশি এসেছে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে, যেগুলোর বড় অংশই রুশ রাষ্ট্রীয় ঋণে চালিত। অর্থের চেয়েও বড় হলো নির্ভরশীল দেশগুলোর ওপর রাশিয়ার চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা। ইইউ রুশ ইউরেনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বললেও স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির আপত্তিতে তা পিছিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৪ সালে হাঙ্গেরি টেন্ডার ছাড়াই রোসআটমকে দুটি রিঅ্যাক্টর নির্মাণের কাজ দেওয়ায় দেশটি আজ মস্কোমুখী অবস্থানে পড়ে গেছে।

উদাহরণ: তুরস্কবাংলাদেশ ও ইউরোপ

২০১০ সালে রোসআটম তুরস্কে চারটি রিঅ্যাক্টর নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি করে। পরে তুরস্ক রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনলে ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে বিলম্ব ও অর্থসংকটে জর্জরিত; রোসআটম এখন ২৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে চায়।
বাংলাদেশে রোসআটম দুটি রিঅ্যাক্টর গড়ছে, যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় প্রায় ১০ শতাংশ যোগ করবে। গবেষকদের মতে, এর ফলে বাংলাদেশ, বেলারুস ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশ ‘উচ্চ’ মাত্রার রুশ নির্ভরতায় পড়বে। গড়পড়তা একটি রিঅ্যাক্টরের নির্মাণ থেকে বিরতিতে অবসান পর্যন্ত ৮০ বছরের চুক্তি-চক্র তৈরি হয়—ঋণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণে দশকের পর দশক বন্ধন গড়ে তোলে।

রাশিয়ার প্যাকেজ ডিল” কেন আকর্ষণীয়

রোসআটম “সব কিছু একসঙ্গে” সেবা দেয়—প্রকৌশলী প্রশিক্ষণ থেকে জ্বালানি সরবরাহ পর্যন্ত। রুশ রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি থাকায় তারা প্রকল্পের আর্থিক ঝুঁকি বহন করতে পারে; যেমন, বাংলাদেশের প্রথম কেন্দ্র নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই রাশিয়ার ঋণ।

পশ্চিমা বিশ্ব কী করছে

রাশিয়ার পারমাণবিক কূটনীতি ভাঙতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দুটি কৌশল নিয়েছে:
১) রুশ ইউরেনিয়াম ও ইন্ধন-সেবা থেকে স্বনির্ভরতা অর্জন। ২০২৪-এ ইউরোপের রুশ ইউরেনিয়াম-নির্ভরতা ৩৮ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে নেমেছে। আমেরিকান কোম্পানি ওয়েস্টিংহাউস রুশ VVER রিঅ্যাক্টরের উপযোগী বিকল্প ফুয়েল অ্যাসেম্বলি তৈরি করে বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেনে সরবরাহ করছে।
২) রিঅ্যাক্টর রপ্তানি বাজারে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স ও জাপান মিলে “সাপ্পোরো ফাইভ” গঠন করে সমৃদ্ধকরণ খাতে ৪.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সমস্যা—দীর্ঘ সময় ও বাজেট অতিক্রম করা। ফ্রান্সের ইডিএফ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ডে চলমান প্রকল্পে বড় বিলম্বে পড়েছে। ২০১৭ সালের পর আমেরিকায় কেবল একটি কেন্দ্র শেষ হয়েছে—খরচ দ্বিগুণ হয়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, হাতে-কলমে সাত বছর দেরি।

চীনের নতুন চ্যালেঞ্জ

পশ্চিমের দুর্বলতার মধ্যে উঠে আসছে চীন। তাদের অভিজ্ঞ জনবল, দ্রুত নির্মাণ (কয়েকটি ক্ষেত্রে ছয় বছরে রিঅ্যাক্টর চালু) ও রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন রয়েছে। তবে অ-প্রসারণ চুক্তি (এনপিটি) ইস্যুতে অতীত রেকর্ড সন্দেহজনক—১৯৯২ সালে চীন চুক্তিতে সই করলেও উত্তর কোরিয়ার বোমা কর্মসূচি নিয়ে ঢিলেঢালা নজরদারি চালিয়েছে।

উপসংহার: স্বৈরতান্ত্রিক দ্বৈরথের ফাঁদ

দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুগ পেরিয়ে পরমাণু বাজার এখন রাশিয়া-চীনের দ্বৈরথে বন্দি হচ্ছে। একটি নয়, দুটি স্বৈরতান্ত্রিক শক্তির হাতে বিশ্ব পারমাণবিক জ্বালানি ও প্রযুক্তির সিংহভাগ থাকলে নিরাপত্তা ও অ-প্রসারণ-নিয়ন্ত্রণ—দুটিই ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিশ্বশান্তির স্বার্থে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে পারমাণবিক শিল্পে সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পেতে হবে।

পুতিনের পারমাণবিক শিকল: তুরস্ক, বাংলাদেশ ও ইউরোপ

০৬:২০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

পারমাণবিক বাণিজ্যে নতুন মহারণ

ইসরায়েল-ইরান স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের সময় বিশ্বদৃষ্টি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির দিকে ছিল। ওই আলোচনার আড়ালে চলেছে আরেকটি ঠান্ডা লড়াই—আন্তর্জাতিক পরমাণু প্রযুক্তি ও সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বাজার দখলের প্রতিযোগিতা। বেসামরিক পারমাণবিক শিল্প মূলত দু ভাগে বিভক্ত: বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম-জ্বালানি উৎপাদন-সরবরাহ। প্রথম খাতে নিজস্ব বড় বড় কেন্দ্র থাকা দেশগুলো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া) নিজেরা নির্মাণ করলেও রপ্তানি বাজারও আছে। জ্বালানি বাজার আরও কেন্দ্রীভূত—মাত্র কয়েকটি দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। এই বাজার যে দখলে রাখবে, সে কূটনৈতিক প্রভাব, অ-প্রসারণ পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা মানদণ্ড নির্ধারণে বিরাট ভূমিকা পাবে।

রাশিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য

বিশ্ব নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, রুশ রাষ্ট্রীয় কোম্পানি রোসআটম বৈদ্যুতিক পারমাণবিক কেন্দ্র রপ্তানির প্রায় ৬৫ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বাজারেও রাশিয়া প্রথম; বৈশ্বিক সক্ষমতার ৪৪ শতাংশ তাদের দখলে। ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রয়োজনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে এনেছে; পাঁচটি রুশ নকশার রিঅ্যাক্টরযুক্ত দেশ—বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া—এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরশীল। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রও প্রায় ২৫ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে কিনেছে।

কাঁচা টাকা আর কূটনৈতিক চাপ

বিশ্বব্যাংকের বাণিজ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে রাশিয়া সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রপ্তানি করে আয় করেছে প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রিঅ্যাক্টর-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ থেকে আরও ১.১ বিলিয়ন ডলার। রোসআটমের বিদেশি কার্যকলাপ মোট রাজস্ব এনেছে ১৬ বিলিয়নের বেশি; এর মধ্যে ৭ বিলিয়নের বেশি এসেছে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে, যেগুলোর বড় অংশই রুশ রাষ্ট্রীয় ঋণে চালিত। অর্থের চেয়েও বড় হলো নির্ভরশীল দেশগুলোর ওপর রাশিয়ার চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা। ইইউ রুশ ইউরেনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বললেও স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির আপত্তিতে তা পিছিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৪ সালে হাঙ্গেরি টেন্ডার ছাড়াই রোসআটমকে দুটি রিঅ্যাক্টর নির্মাণের কাজ দেওয়ায় দেশটি আজ মস্কোমুখী অবস্থানে পড়ে গেছে।

উদাহরণ: তুরস্কবাংলাদেশ ও ইউরোপ

২০১০ সালে রোসআটম তুরস্কে চারটি রিঅ্যাক্টর নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি করে। পরে তুরস্ক রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনলে ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে বিলম্ব ও অর্থসংকটে জর্জরিত; রোসআটম এখন ২৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে চায়।
বাংলাদেশে রোসআটম দুটি রিঅ্যাক্টর গড়ছে, যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় প্রায় ১০ শতাংশ যোগ করবে। গবেষকদের মতে, এর ফলে বাংলাদেশ, বেলারুস ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশ ‘উচ্চ’ মাত্রার রুশ নির্ভরতায় পড়বে। গড়পড়তা একটি রিঅ্যাক্টরের নির্মাণ থেকে বিরতিতে অবসান পর্যন্ত ৮০ বছরের চুক্তি-চক্র তৈরি হয়—ঋণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণে দশকের পর দশক বন্ধন গড়ে তোলে।

রাশিয়ার প্যাকেজ ডিল” কেন আকর্ষণীয়

রোসআটম “সব কিছু একসঙ্গে” সেবা দেয়—প্রকৌশলী প্রশিক্ষণ থেকে জ্বালানি সরবরাহ পর্যন্ত। রুশ রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি থাকায় তারা প্রকল্পের আর্থিক ঝুঁকি বহন করতে পারে; যেমন, বাংলাদেশের প্রথম কেন্দ্র নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই রাশিয়ার ঋণ।

পশ্চিমা বিশ্ব কী করছে

রাশিয়ার পারমাণবিক কূটনীতি ভাঙতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দুটি কৌশল নিয়েছে:
১) রুশ ইউরেনিয়াম ও ইন্ধন-সেবা থেকে স্বনির্ভরতা অর্জন। ২০২৪-এ ইউরোপের রুশ ইউরেনিয়াম-নির্ভরতা ৩৮ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে নেমেছে। আমেরিকান কোম্পানি ওয়েস্টিংহাউস রুশ VVER রিঅ্যাক্টরের উপযোগী বিকল্প ফুয়েল অ্যাসেম্বলি তৈরি করে বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেনে সরবরাহ করছে।
২) রিঅ্যাক্টর রপ্তানি বাজারে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স ও জাপান মিলে “সাপ্পোরো ফাইভ” গঠন করে সমৃদ্ধকরণ খাতে ৪.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সমস্যা—দীর্ঘ সময় ও বাজেট অতিক্রম করা। ফ্রান্সের ইডিএফ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ডে চলমান প্রকল্পে বড় বিলম্বে পড়েছে। ২০১৭ সালের পর আমেরিকায় কেবল একটি কেন্দ্র শেষ হয়েছে—খরচ দ্বিগুণ হয়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, হাতে-কলমে সাত বছর দেরি।

চীনের নতুন চ্যালেঞ্জ

পশ্চিমের দুর্বলতার মধ্যে উঠে আসছে চীন। তাদের অভিজ্ঞ জনবল, দ্রুত নির্মাণ (কয়েকটি ক্ষেত্রে ছয় বছরে রিঅ্যাক্টর চালু) ও রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন রয়েছে। তবে অ-প্রসারণ চুক্তি (এনপিটি) ইস্যুতে অতীত রেকর্ড সন্দেহজনক—১৯৯২ সালে চীন চুক্তিতে সই করলেও উত্তর কোরিয়ার বোমা কর্মসূচি নিয়ে ঢিলেঢালা নজরদারি চালিয়েছে।

উপসংহার: স্বৈরতান্ত্রিক দ্বৈরথের ফাঁদ

দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুগ পেরিয়ে পরমাণু বাজার এখন রাশিয়া-চীনের দ্বৈরথে বন্দি হচ্ছে। একটি নয়, দুটি স্বৈরতান্ত্রিক শক্তির হাতে বিশ্ব পারমাণবিক জ্বালানি ও প্রযুক্তির সিংহভাগ থাকলে নিরাপত্তা ও অ-প্রসারণ-নিয়ন্ত্রণ—দুটিই ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিশ্বশান্তির স্বার্থে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে পারমাণবিক শিল্পে সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পেতে হবে।