প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের বেশি ঘটে দীর্ঘস্থায়ী অসুখে—যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সার। মোট চিকিৎসা খরচের প্রায় ৬৮ শতাংশই পরিবারকেই বহন করতে হচ্ছে, যা বহু জ households পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি সত্ত্বেও ক্রনিক অসুখগুলো এখনো জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব পায়নি; পরিদর্শন, নিয়মিত চিকিৎসা ও সাশ্রয়ী ঔষধ সবার জন্য সহজলভ্য নয়।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন
১০ জুলাই ২০২৫ ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (DGHS), ব্র্যাক ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক ল্যাবস “৩৬০-ডিগ্রি এনসিডি কেয়ার ইনিশিয়েটিভ” উন্মোচন করে। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তারা, উন্নয়ন অংশীদার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফ্রন্টলাইন কর্মীরা অংশ নেন এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনার এই পূর্ণাঙ্গ মডেলের মূল দিকগুলো উপস্থাপন করেন।
দূর্গম অঞ্চলে সেবার চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সচিব মোঃ সাইদুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার চর-পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এখনও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না। দরোজাদরোজা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক স্বাস্থ্য ডাটাবেস গড়ে তোলার আগে-পরে দর-কষাকষি ছাড়া সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে মানুষের ওপর—প্রতিরোধমূলক পন্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে। এটি সম্পদ ও জনসম্পৃক্ততার সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে সম্প্রদায়ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।
দেশীয় পরিসংখ্যান ও সতর্কবার্তা
DGHS মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবু জাফর জানালেন, প্রতি চার প্রাপ্তবয়স্কের একজনই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এবং দশজনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিক। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অক্রিয় জীবনযাপন এসব বৃদ্ধির মূল কারণ; WHO তথ্য অনুযায়ী এসব মৃত্যুর ৪০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য।
কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্যোগ ও ডিজিটাল সহায়তা
CCHST চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, এনসিডি মোকাবিলায় শুধুমাত্র হাসপাতালের বাইরে, মানুষের দোরগোড়ায় থেকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সম্প্রদায়ভিত্তিক সেবা, ডিজিটাল ফলো-আপ টুল ও সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ব্র্যাকের ভূমিকা
ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. মো. আকরামুল ইসলাম জানান, তাদের কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কাররা টেলিকনসালটেশন ও ফলাফল ট্র্যাকিংয়ে ডেটা ব্যবহার করছে, যা রোগীর স্বাস্থ্য অবস্থা মনিটরিংয়ে সহায়তা করে।
মডেলের কার্যকারিতা ও সম্প্রসারণ
SPICE প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে CHW-রা গৃহপরিদর্শন, রোগী রেফারাল ও নিয়মিত ফলো-আপ নিশ্চিত করছে। DHIS2-এর সঙ্গে সংযোগের ফলে জাতীয় স্বাস্থ্যসিস্টেমে রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ারিং সম্ভব হচ্ছে। পাইলট পর্যায়ে নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭৮ শতাংশ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ৪১ শতাংশ সফলতা এসেছে। এখন এটি সাত জেলায় ৪৩ উপজেলায় চালু।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ক্রমবর্ধমান এনসিডি ঝুঁকি ও আর্থিক বোঝা মোকাবিলায় এই মডেল সময়োপযোগী ও সম্প্রসারযোগ্য সমাধান। সরকারের নেতৃত্ব, ব্র্যাকের সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ ও মেডট্রনিক ল্যাবসের প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশের ক্ষুদ্রতম জনগোষ্ঠী পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু কমিয়ে একটি সমতার উপর নির্ভরশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।