১০:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে বস্তি সংস্কৃতি বনাম নাগরিক-সংস্কৃতি: সম্ভাবনা ও সংকট

বাংলাদেশের নগরায়নের চিত্রে এক বড় বাস্তবতা হলো বস্তি। ICDDR,B-এর গবেষণা বলছে, ঢাকা  নগর এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। কোটি কোটি মানুষের জীবনে বস্তি-সংস্কৃতি সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বস্তি কেবল আবাসন নয়—একটি সামাজিক পরিসর, যার নিজস্ব সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও অপরাধজগতের যোগসূত্র রয়েছে।

বস্তি বলতে আমরা বুঝি অস্থায়ী, অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ঢাকায়, চট্টগ্রামে, খুলনায় এমন শত শত বস্তি আছে যেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তা সুবিধা নেই। স্থানীয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অনেক বস্তি-বাসিন্দার জন্য অপরাধ অর্থনৈতিক বেঁচে থাকার একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক, অপরাধ ও অবৈধ যৌনতা

ICDDR,B এবং বিভিন্ন এনজিওয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী:

  • মাদক সেবন ও সরবরাহ
  • গ্যাং কালচার
  • শিশু ও কিশোরদের অপরাধে জড়ানো
  • বাণিজ্যিক যৌনকর্ম

বস্তির অর্থনীতির একটি অংশই হলো মাদক-বাণিজ্য, সস্তা যৌনতা ও পকেটমারীর মতো অপরাধ, যা বড় অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর ফলে একটি আন্ডারওয়ার্ল্ড সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা নাগরিক মূল্যবোধের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।

নাগরিক বা “সফিস্টিকেটেড” সংস্কৃতির হুমকি

বস্তি-সংস্কৃতি যদি অপরাধমুখী হয়ে ওঠে, তাহলে শহরের মূলধারার জীবনযাত্রায় ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়তে পারে। নগর অপরাধ, মাদক, যৌনব্যবসা, ছিনতাই এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসে বস্তির অপরাধী গোষ্ঠী ব্যবহার হলে নাগরিক সংস্কৃতি দূষিত হতে পারে। কোনো সমন্বিত নীতি না থাকলে সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিবর্তনের সুযোগ

সরকার পরিকল্পিত পুনর্বাসন, শিক্ষার সুযোগ, মাদকমুক্তি কর্মসূচি, চাকরি ও ঋণসহ দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বস্তি সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কিছু রাজ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বাধ্যতামূলক রেখে মাদক আসক্তি কমানো হয়েছে, এবং ব্রাজিলের ফাভেলা পিসিফিকেশন প্রকল্পে অপরাধচক্র ভেঙে স্কুল-চাকরি-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সামাজিক চিত্র

যদি সরকার যথাযথ হস্তক্ষেপ নেয়, তবে বস্তিবাসীরা ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত সমাজের অংশ হতে পারবে, অপরাধ কমবে, মাদক ও যৌনব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং নাগরিক সংস্কৃতি শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে, যদি সহায়তা না দিয়ে অবহেলা করা হয়, তাহলে বস্তি সংস্কৃতি আরও অপরাধমুখী হয়ে পড়বে, যা সামাজিক দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে।

বাংলাদেশের নগর উন্নয়ন নীতিতে বস্তি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। নগর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বস্তি-বাসিন্দাদের ভাগ্যের ওপর। বস্তিকে শত্রু নয়, অংশীদার করে পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং শিক্ষিত, সচেতন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে বস্তি সংস্কৃতি বনাম নাগরিক-সংস্কৃতি: সম্ভাবনা ও সংকট

০৫:১০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের নগরায়নের চিত্রে এক বড় বাস্তবতা হলো বস্তি। ICDDR,B-এর গবেষণা বলছে, ঢাকা  নগর এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। কোটি কোটি মানুষের জীবনে বস্তি-সংস্কৃতি সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বস্তি কেবল আবাসন নয়—একটি সামাজিক পরিসর, যার নিজস্ব সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও অপরাধজগতের যোগসূত্র রয়েছে।

বস্তি বলতে আমরা বুঝি অস্থায়ী, অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ঢাকায়, চট্টগ্রামে, খুলনায় এমন শত শত বস্তি আছে যেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তা সুবিধা নেই। স্থানীয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অনেক বস্তি-বাসিন্দার জন্য অপরাধ অর্থনৈতিক বেঁচে থাকার একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক, অপরাধ ও অবৈধ যৌনতা

ICDDR,B এবং বিভিন্ন এনজিওয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী:

  • মাদক সেবন ও সরবরাহ
  • গ্যাং কালচার
  • শিশু ও কিশোরদের অপরাধে জড়ানো
  • বাণিজ্যিক যৌনকর্ম

বস্তির অর্থনীতির একটি অংশই হলো মাদক-বাণিজ্য, সস্তা যৌনতা ও পকেটমারীর মতো অপরাধ, যা বড় অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর ফলে একটি আন্ডারওয়ার্ল্ড সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা নাগরিক মূল্যবোধের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।

নাগরিক বা “সফিস্টিকেটেড” সংস্কৃতির হুমকি

বস্তি-সংস্কৃতি যদি অপরাধমুখী হয়ে ওঠে, তাহলে শহরের মূলধারার জীবনযাত্রায় ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়তে পারে। নগর অপরাধ, মাদক, যৌনব্যবসা, ছিনতাই এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসে বস্তির অপরাধী গোষ্ঠী ব্যবহার হলে নাগরিক সংস্কৃতি দূষিত হতে পারে। কোনো সমন্বিত নীতি না থাকলে সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিবর্তনের সুযোগ

সরকার পরিকল্পিত পুনর্বাসন, শিক্ষার সুযোগ, মাদকমুক্তি কর্মসূচি, চাকরি ও ঋণসহ দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বস্তি সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কিছু রাজ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বাধ্যতামূলক রেখে মাদক আসক্তি কমানো হয়েছে, এবং ব্রাজিলের ফাভেলা পিসিফিকেশন প্রকল্পে অপরাধচক্র ভেঙে স্কুল-চাকরি-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সামাজিক চিত্র

যদি সরকার যথাযথ হস্তক্ষেপ নেয়, তবে বস্তিবাসীরা ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত সমাজের অংশ হতে পারবে, অপরাধ কমবে, মাদক ও যৌনব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং নাগরিক সংস্কৃতি শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে, যদি সহায়তা না দিয়ে অবহেলা করা হয়, তাহলে বস্তি সংস্কৃতি আরও অপরাধমুখী হয়ে পড়বে, যা সামাজিক দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে।

বাংলাদেশের নগর উন্নয়ন নীতিতে বস্তি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। নগর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বস্তি-বাসিন্দাদের ভাগ্যের ওপর। বস্তিকে শত্রু নয়, অংশীদার করে পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং শিক্ষিত, সচেতন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে।