০১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
গেম অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫: বড় সিক্যুয়েল আর সাহসী ইন্ডি গেমে ঠাসা মনোনয়নের তালিকা ম্যাচা জ্বরের আড়ালে সংকট: ভাইরাল সবুজ চায়ের ট্রেন্ডে টানাপোড়েন সরবরাহে শেষ সপ্তাহে ঢুকল বেলেমের কপ৩০, অর্থসহায়তা আর জ্বালানি ইস্যুতে গভীর অচলাবস্থা জাপানে নিজস্ব জেনারেটিভ এআই গড়ছে সাকানা: ১৩৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল মঙ্গলগ্রহের নিচে একসময় পানি প্রবাহিত হতো: নতুন গবেষণায় জীবনের সম্ভাবনায় বড় ইঙ্গিত আবু ধাবিতে টালাবাত অ্যাপে ড্রোনে খাবার ডেলিভারি শুরু বিবিসি কি ব্রিটেনে টিকে থাকতে পারবে? শেখ হাসিনার বিচার ‘গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ’—হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কড়া অভিযোগ লালকেল্লা হামলা: তিন বছরের গোপন প্রস্তুতি ফাঁস – ভারতজুড়ে জঙ্গি মডিউল শনাক্তে সতর্কতা বৃদ্ধি নবান্ন: বাংলার নতুন ফসলের গন্ধভরা উৎসব এখন স্মৃতির পাতায়

বাংলাদেশে বস্তি সংস্কৃতি বনাম নাগরিক-সংস্কৃতি: সম্ভাবনা ও সংকট

বাংলাদেশের নগরায়নের চিত্রে এক বড় বাস্তবতা হলো বস্তি। ICDDR,B-এর গবেষণা বলছে, ঢাকা  নগর এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। কোটি কোটি মানুষের জীবনে বস্তি-সংস্কৃতি সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বস্তি কেবল আবাসন নয়—একটি সামাজিক পরিসর, যার নিজস্ব সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও অপরাধজগতের যোগসূত্র রয়েছে।

বস্তি বলতে আমরা বুঝি অস্থায়ী, অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ঢাকায়, চট্টগ্রামে, খুলনায় এমন শত শত বস্তি আছে যেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তা সুবিধা নেই। স্থানীয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অনেক বস্তি-বাসিন্দার জন্য অপরাধ অর্থনৈতিক বেঁচে থাকার একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক, অপরাধ ও অবৈধ যৌনতা

ICDDR,B এবং বিভিন্ন এনজিওয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী:

  • মাদক সেবন ও সরবরাহ
  • গ্যাং কালচার
  • শিশু ও কিশোরদের অপরাধে জড়ানো
  • বাণিজ্যিক যৌনকর্ম

বস্তির অর্থনীতির একটি অংশই হলো মাদক-বাণিজ্য, সস্তা যৌনতা ও পকেটমারীর মতো অপরাধ, যা বড় অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর ফলে একটি আন্ডারওয়ার্ল্ড সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা নাগরিক মূল্যবোধের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।

নাগরিক বা “সফিস্টিকেটেড” সংস্কৃতির হুমকি

বস্তি-সংস্কৃতি যদি অপরাধমুখী হয়ে ওঠে, তাহলে শহরের মূলধারার জীবনযাত্রায় ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়তে পারে। নগর অপরাধ, মাদক, যৌনব্যবসা, ছিনতাই এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসে বস্তির অপরাধী গোষ্ঠী ব্যবহার হলে নাগরিক সংস্কৃতি দূষিত হতে পারে। কোনো সমন্বিত নীতি না থাকলে সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিবর্তনের সুযোগ

সরকার পরিকল্পিত পুনর্বাসন, শিক্ষার সুযোগ, মাদকমুক্তি কর্মসূচি, চাকরি ও ঋণসহ দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বস্তি সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কিছু রাজ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বাধ্যতামূলক রেখে মাদক আসক্তি কমানো হয়েছে, এবং ব্রাজিলের ফাভেলা পিসিফিকেশন প্রকল্পে অপরাধচক্র ভেঙে স্কুল-চাকরি-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সামাজিক চিত্র

যদি সরকার যথাযথ হস্তক্ষেপ নেয়, তবে বস্তিবাসীরা ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত সমাজের অংশ হতে পারবে, অপরাধ কমবে, মাদক ও যৌনব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং নাগরিক সংস্কৃতি শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে, যদি সহায়তা না দিয়ে অবহেলা করা হয়, তাহলে বস্তি সংস্কৃতি আরও অপরাধমুখী হয়ে পড়বে, যা সামাজিক দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে।

বাংলাদেশের নগর উন্নয়ন নীতিতে বস্তি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। নগর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বস্তি-বাসিন্দাদের ভাগ্যের ওপর। বস্তিকে শত্রু নয়, অংশীদার করে পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং শিক্ষিত, সচেতন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গেম অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫: বড় সিক্যুয়েল আর সাহসী ইন্ডি গেমে ঠাসা মনোনয়নের তালিকা

বাংলাদেশে বস্তি সংস্কৃতি বনাম নাগরিক-সংস্কৃতি: সম্ভাবনা ও সংকট

০৫:১০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের নগরায়নের চিত্রে এক বড় বাস্তবতা হলো বস্তি। ICDDR,B-এর গবেষণা বলছে, ঢাকা  নগর এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। কোটি কোটি মানুষের জীবনে বস্তি-সংস্কৃতি সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বস্তি কেবল আবাসন নয়—একটি সামাজিক পরিসর, যার নিজস্ব সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও অপরাধজগতের যোগসূত্র রয়েছে।

বস্তি বলতে আমরা বুঝি অস্থায়ী, অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ঢাকায়, চট্টগ্রামে, খুলনায় এমন শত শত বস্তি আছে যেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তা সুবিধা নেই। স্থানীয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অনেক বস্তি-বাসিন্দার জন্য অপরাধ অর্থনৈতিক বেঁচে থাকার একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক, অপরাধ ও অবৈধ যৌনতা

ICDDR,B এবং বিভিন্ন এনজিওয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী:

  • মাদক সেবন ও সরবরাহ
  • গ্যাং কালচার
  • শিশু ও কিশোরদের অপরাধে জড়ানো
  • বাণিজ্যিক যৌনকর্ম

বস্তির অর্থনীতির একটি অংশই হলো মাদক-বাণিজ্য, সস্তা যৌনতা ও পকেটমারীর মতো অপরাধ, যা বড় অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর ফলে একটি আন্ডারওয়ার্ল্ড সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা নাগরিক মূল্যবোধের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।

নাগরিক বা “সফিস্টিকেটেড” সংস্কৃতির হুমকি

বস্তি-সংস্কৃতি যদি অপরাধমুখী হয়ে ওঠে, তাহলে শহরের মূলধারার জীবনযাত্রায় ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়তে পারে। নগর অপরাধ, মাদক, যৌনব্যবসা, ছিনতাই এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসে বস্তির অপরাধী গোষ্ঠী ব্যবহার হলে নাগরিক সংস্কৃতি দূষিত হতে পারে। কোনো সমন্বিত নীতি না থাকলে সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিবর্তনের সুযোগ

সরকার পরিকল্পিত পুনর্বাসন, শিক্ষার সুযোগ, মাদকমুক্তি কর্মসূচি, চাকরি ও ঋণসহ দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বস্তি সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কিছু রাজ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বাধ্যতামূলক রেখে মাদক আসক্তি কমানো হয়েছে, এবং ব্রাজিলের ফাভেলা পিসিফিকেশন প্রকল্পে অপরাধচক্র ভেঙে স্কুল-চাকরি-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সামাজিক চিত্র

যদি সরকার যথাযথ হস্তক্ষেপ নেয়, তবে বস্তিবাসীরা ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত সমাজের অংশ হতে পারবে, অপরাধ কমবে, মাদক ও যৌনব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং নাগরিক সংস্কৃতি শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে, যদি সহায়তা না দিয়ে অবহেলা করা হয়, তাহলে বস্তি সংস্কৃতি আরও অপরাধমুখী হয়ে পড়বে, যা সামাজিক দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে।

বাংলাদেশের নগর উন্নয়ন নীতিতে বস্তি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। নগর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বস্তি-বাসিন্দাদের ভাগ্যের ওপর। বস্তিকে শত্রু নয়, অংশীদার করে পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং শিক্ষিত, সচেতন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে।