১২:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

মার্কো রুবিওর মালয়েশিয়া সফর: আসিয়ান সম্মেলনে মার্কিন বার্তা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মালয়েশিয়া সফর

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে অংশ নেন। সফরের সময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো’ সেরি মহামাদ হাসানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষরিত হয়, যা কৌশলগত বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা নিয়ে।

সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের বিবরণ

কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহামাদ হাসান তাঁর বক্তৃতায় মার্কো রুবিওকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং বলেন, রুবিওর এ সফর দুই দেশের দীর্ঘকালীন সম্পর্কের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

তিনি বলেন, এই সমঝোতা স্মারক দুই দেশের বিস্তৃত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মালয়েশিয়া নিরাপদ ও দায়িত্বশীলভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন যে মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২৩ চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

মালয়েশিয়া তার উপকূলীয় নিরাপত্তা রক্ষায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবৈধ জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর রোধে নতুন নিয়ম শিগগিরই কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

মার্কো রুবিওর বক্তব্য

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মালয়েশিয়ার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই সমঝোতা স্মারক বিশ্বকে দেখায় যে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা সম্ভব এবং এটি কিভাবে সঠিকভাবে করা যায় তার একটি উদাহরণ।

তিনি বলেন, ১২৩ চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে তিনি আগ্রহী। এই সমঝোতা শুধু পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের নয়, বরং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও অ-প্রসারণ নীতি বজায় রেখে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগ।

রুবিও বলেন, এশিয়ায় তাঁর প্রথম সরকারি সফর হিসেবে এই অনুষ্ঠান তাঁর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এটি শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয় বরং গোটা অঞ্চলের জন্যও ইতিবাচক বার্তা দেবে।

MOU স্বাক্ষর এবং সমাপ্তি

আলোচনা শেষে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। উপস্থিত অতিথিদের করতালির মধ্যে নথি বিনিময় হয় এবং অনুষ্ঠান শেষ হয়।

আসিয়ানযুক্তরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন

মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যানশিপে কুয়ালালামপুরে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র পোস্ট মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মার্কো রুবিও প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অংশ নেন।

ক্যাম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সোখন মালয়েশিয়াকে সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং রুবিওকে আন্তরিক স্বাগত জানান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়ে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আসিয়ানযুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্ব

আসিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে সম্পর্ককে “বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব”-এ উন্নীত করে। পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি, প্রযুক্তি, সমুদ্র নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং জনগণের মধ্যে বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ অগ্রগতি হয়েছে।

প্রাক সোখন বলেন, আমাদের লক্ষ্য সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করা। তিনি ফলপ্রসূ আলোচনার প্রত্যাশা করেন।

রুবিওর বক্তব্য আসিয়ান বৈঠকে

রুবিও ধন্যবাদ জানান মালয়েশিয়াকে চেয়ারম্যানশিপের জন্য এবং ক্যাম্বোডিয়াকে পূর্ববর্তী বছর যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ক হিসেবে ভূমিকার জন্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসিয়ানকে অঞ্চলগত স্থিতিশীলতার মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ এখানেই হবে। তাই এ অঞ্চলকে উপেক্ষা করার প্রশ্নই নেই। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চায় এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের অনুমতি ছাড়া তা করবে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলা। প্রায় ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের অভিজ্ঞতা আমাদের যৌথ স্বার্থে কাজ করার ভিত্তি তৈরি করেছে।

রুবিও তাঁর বক্তব্য শেষ করে সহ-চেয়ারকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলন পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির এবং নতুন ধারণা বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে শেষ হয়।

মার্কো রুবিওর মালয়েশিয়া সফর: আসিয়ান সম্মেলনে মার্কিন বার্তা

০৮:০০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মালয়েশিয়া সফর

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে অংশ নেন। সফরের সময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো’ সেরি মহামাদ হাসানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষরিত হয়, যা কৌশলগত বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা নিয়ে।

সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের বিবরণ

কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহামাদ হাসান তাঁর বক্তৃতায় মার্কো রুবিওকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং বলেন, রুবিওর এ সফর দুই দেশের দীর্ঘকালীন সম্পর্কের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

তিনি বলেন, এই সমঝোতা স্মারক দুই দেশের বিস্তৃত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মালয়েশিয়া নিরাপদ ও দায়িত্বশীলভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন যে মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২৩ চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

মালয়েশিয়া তার উপকূলীয় নিরাপত্তা রক্ষায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবৈধ জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর রোধে নতুন নিয়ম শিগগিরই কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

মার্কো রুবিওর বক্তব্য

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মালয়েশিয়ার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই সমঝোতা স্মারক বিশ্বকে দেখায় যে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা সম্ভব এবং এটি কিভাবে সঠিকভাবে করা যায় তার একটি উদাহরণ।

তিনি বলেন, ১২৩ চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে তিনি আগ্রহী। এই সমঝোতা শুধু পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের নয়, বরং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও অ-প্রসারণ নীতি বজায় রেখে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগ।

রুবিও বলেন, এশিয়ায় তাঁর প্রথম সরকারি সফর হিসেবে এই অনুষ্ঠান তাঁর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এটি শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয় বরং গোটা অঞ্চলের জন্যও ইতিবাচক বার্তা দেবে।

MOU স্বাক্ষর এবং সমাপ্তি

আলোচনা শেষে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। উপস্থিত অতিথিদের করতালির মধ্যে নথি বিনিময় হয় এবং অনুষ্ঠান শেষ হয়।

আসিয়ানযুক্তরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন

মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যানশিপে কুয়ালালামপুরে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র পোস্ট মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মার্কো রুবিও প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অংশ নেন।

ক্যাম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সোখন মালয়েশিয়াকে সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং রুবিওকে আন্তরিক স্বাগত জানান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়ে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আসিয়ানযুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্ব

আসিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে সম্পর্ককে “বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব”-এ উন্নীত করে। পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি, প্রযুক্তি, সমুদ্র নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং জনগণের মধ্যে বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ অগ্রগতি হয়েছে।

প্রাক সোখন বলেন, আমাদের লক্ষ্য সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করা। তিনি ফলপ্রসূ আলোচনার প্রত্যাশা করেন।

রুবিওর বক্তব্য আসিয়ান বৈঠকে

রুবিও ধন্যবাদ জানান মালয়েশিয়াকে চেয়ারম্যানশিপের জন্য এবং ক্যাম্বোডিয়াকে পূর্ববর্তী বছর যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ক হিসেবে ভূমিকার জন্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসিয়ানকে অঞ্চলগত স্থিতিশীলতার মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ এখানেই হবে। তাই এ অঞ্চলকে উপেক্ষা করার প্রশ্নই নেই। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চায় এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের অনুমতি ছাড়া তা করবে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলা। প্রায় ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের অভিজ্ঞতা আমাদের যৌথ স্বার্থে কাজ করার ভিত্তি তৈরি করেছে।

রুবিও তাঁর বক্তব্য শেষ করে সহ-চেয়ারকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলন পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির এবং নতুন ধারণা বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে শেষ হয়।