০৯:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৮৬)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • 19
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

এ সব ঘটনায় বারাসতের ম্যাজিস্ট্রেট কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিলেন না। জমিদার ও দারোগার বিরুদ্ধে চাষীদের কেস বারাসত কোর্টে শুরু হল। ম্যাজিস্ট্রেট পরস্পর বিপরীত কথা শোনার পর কোন সিদ্ধান্তে আসতে না পেরে উভয়পক্ষের দুটি কেস বাতিল করলেন এবং প্রজাদের একতরফাভাবে বন্ডে সই করতে হল-ভবিষ্যতে শাস্তি ভঙ্গ করবে না। পরবর্তীকালে কলভিন এ ব্যাপারে তদন্ত করে মন্তব্য করেছেন- প্রজাদের বক্তব্য সঠিক ছিল; তিতু ও মাসুমের নামে ডাকাতির অভিযোগ মিথ্যা, দাড়ির ওপর ট্যাক্স থেকে শুরু করে মসজিদে আগুন লাগানো সবই সত্য ছিল। বসিরহাট থানার দারোগা কৃষ্ণদেব রায়ের এজেন্ট হিসাবে সব সময় কাজ করেছেন।

১৮৩১ এর ২রা সেপ্টেম্বর বারাসত কোর্টে তিতুর বিরুদ্ধে কেস বাতিল হবার পরদিন জমিদার কৃষ্ণদেব রায় বেশ কিছু মুসলমান চাষিকে খাজনা বাকির কারণে কয়েদ করেন এবং প্রচণ্ডভাবে মারধর করা হল। স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন জমিদার প্রজাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। প্রজারা বারাসত কোর্টে সুবিচার না পেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করার ব্যবস্থা করল। তিতুর একজন গ্রামবাসী মহমদ মাসুদের সাথে কলকাতায় যোগাযোগ ছিল। তিনি প্রজাদের কয়েকজনকে নিয়ে আলিপুর গেলেন কমিশনারের কাছে নালিশ জানানোর জন্য কমিশনার অন্যত্র থাকায় তার সঙ্গে প্রজাদের দেখা হল না। প্রজারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল বিচারের কোন সুযোগ না পেয়ে হতাশা ও একটা মরিয়া ভাব তাদের পেয়ে বসল।

প্রজারা বুঝল জমিদার থানাদারদের অত্যাচারের প্রতিবিধান সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না। আইন কানুনের সাহায্য গরিব চাষি পাবে না। তিতুর অদ্ভুত ক্ষমতার ওপর তার শিষ্যদের প্রবল বিশ্বাস ছিল। মরিয়া চাষীদের সামনে তিতু অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেন।

১৮৩১ এর ২৩ শে অক্টোবর তিতু তাঁর সমস্ত শিষ্যদের নারকেলবেড়িয়াতে সমবেত হবার আদেশ দিলেন। শুরু হল তিতুর আক্রমণ। সর্বপ্রথম তিতুর আক্রমণ গিয়ে পড়ল – পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের ওপর। তার কাছাড়িবাড়ি ও পুড়ার বাজার তিতু লুঠ করলেন। পুড়ার বাজারের ব্যবসায়ী মহাজন লক্ষ্মণদেব, মোহন সাহা ও গোলক সাহার দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হল। স্থানীয় হিন্দুমন্দিরে গোরুর রক্ত ছিটিয়ে দিয়ে মসজিদে আগুন দেবার প্রতিশোধ তিতু গ্রহণ করলেন।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৮৬)

১২:০০:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

এ সব ঘটনায় বারাসতের ম্যাজিস্ট্রেট কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিলেন না। জমিদার ও দারোগার বিরুদ্ধে চাষীদের কেস বারাসত কোর্টে শুরু হল। ম্যাজিস্ট্রেট পরস্পর বিপরীত কথা শোনার পর কোন সিদ্ধান্তে আসতে না পেরে উভয়পক্ষের দুটি কেস বাতিল করলেন এবং প্রজাদের একতরফাভাবে বন্ডে সই করতে হল-ভবিষ্যতে শাস্তি ভঙ্গ করবে না। পরবর্তীকালে কলভিন এ ব্যাপারে তদন্ত করে মন্তব্য করেছেন- প্রজাদের বক্তব্য সঠিক ছিল; তিতু ও মাসুমের নামে ডাকাতির অভিযোগ মিথ্যা, দাড়ির ওপর ট্যাক্স থেকে শুরু করে মসজিদে আগুন লাগানো সবই সত্য ছিল। বসিরহাট থানার দারোগা কৃষ্ণদেব রায়ের এজেন্ট হিসাবে সব সময় কাজ করেছেন।

১৮৩১ এর ২রা সেপ্টেম্বর বারাসত কোর্টে তিতুর বিরুদ্ধে কেস বাতিল হবার পরদিন জমিদার কৃষ্ণদেব রায় বেশ কিছু মুসলমান চাষিকে খাজনা বাকির কারণে কয়েদ করেন এবং প্রচণ্ডভাবে মারধর করা হল। স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন জমিদার প্রজাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। প্রজারা বারাসত কোর্টে সুবিচার না পেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করার ব্যবস্থা করল। তিতুর একজন গ্রামবাসী মহমদ মাসুদের সাথে কলকাতায় যোগাযোগ ছিল। তিনি প্রজাদের কয়েকজনকে নিয়ে আলিপুর গেলেন কমিশনারের কাছে নালিশ জানানোর জন্য কমিশনার অন্যত্র থাকায় তার সঙ্গে প্রজাদের দেখা হল না। প্রজারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল বিচারের কোন সুযোগ না পেয়ে হতাশা ও একটা মরিয়া ভাব তাদের পেয়ে বসল।

প্রজারা বুঝল জমিদার থানাদারদের অত্যাচারের প্রতিবিধান সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না। আইন কানুনের সাহায্য গরিব চাষি পাবে না। তিতুর অদ্ভুত ক্ষমতার ওপর তার শিষ্যদের প্রবল বিশ্বাস ছিল। মরিয়া চাষীদের সামনে তিতু অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেন।

১৮৩১ এর ২৩ শে অক্টোবর তিতু তাঁর সমস্ত শিষ্যদের নারকেলবেড়িয়াতে সমবেত হবার আদেশ দিলেন। শুরু হল তিতুর আক্রমণ। সর্বপ্রথম তিতুর আক্রমণ গিয়ে পড়ল – পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের ওপর। তার কাছাড়িবাড়ি ও পুড়ার বাজার তিতু লুঠ করলেন। পুড়ার বাজারের ব্যবসায়ী মহাজন লক্ষ্মণদেব, মোহন সাহা ও গোলক সাহার দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হল। স্থানীয় হিন্দুমন্দিরে গোরুর রক্ত ছিটিয়ে দিয়ে মসজিদে আগুন দেবার প্রতিশোধ তিতু গ্রহণ করলেন।