০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮১)

অষ্টম পরিচ্ছেদ

‘বোসো, বোসো,’ সোফাটা দেখিয়ে বৃদ্ধ বলল। ‘এখানে আমি একাই থাকি, বুঝেছ। অনেক কাল বাড়িতে অতিথ-জন আসে না। চাষীরা কচিৎ-কখনও আসে এটা-ওটা জিনিস নিয়ে। তবে অনেক কাল কোনো ভন্দরলোকের মুখ দেখি নি। ক্যাপটেন ভার্ৎস অবিশ্যি একবার এসেছিলেন বটে। তাঁকে চেনো নাকি তোমরা? ওহো, কিছু মনে কোরো না, তোমরা যে আবার লাল। তাও তো বটে।’

আমাদের গৃহকর্তা সাইডবোর্ডের কাছে গিয়ে দু-খানা প্লেট আর দুটো কাঁটা বের করল। প্লেট দুটো, বোঝা গেল, বিপর্যয়ের হাত এড়াতে পেরেছিল। কাঁটা দুটোর একটা ছিল কাঠের হাতলওয়ালা রান্নাঘরে ব্যবহার করার মতো সাধারণ কাঁটা, আর দ্বিতীয়টা ছিল কারুকাজ-করা আর বাঁকানো, ভোজের শেষে ফল-মিষ্টি খাওয়ার কাঁটা। এই দ্বিতীয় কাঁটাটার একটা দাঁড়া আবার ছিল ভাঙা। যাই হোক, এরপর গৃহকর্তা সাইডবোর্ড থেকেই বের করল একখানা আন্ত কালো পাঁউরুটি আর ইউক্রেনীয় সসেজের মালার আধখানা।

তারপর ঝুলকালিতে প্রায় কালো-হয়ে-গেছে এমন একটা কেটলি ত্রিভঙ্গমুরারি একটা কেরোসিন স্টোভের ওপর বসিয়ে গৃহকর্তা তোয়ালেয় হাত মুছল। তোয়ালেটা-ষে কতদিন কাচা হয় নি তা ভগবানই জানে। তারপর সে দেয়াল থেকে একটা অদ্ভুত আকারের সুন্দর পাইপ নামাল। পাইপটার গায়ে খোদাই-করা ছাগলের মূর্তিতে মানুষের মুখ ছিল বসানো।

ছাগলটার দন্তহীন মুখে ছিল একগাল হাসি। পাইপে মাখোকা তামাক ভরে লোকটি এবার মচমচ-আওয়াজ-করা স্প্রিং-উ’চনো একটা ভাঙাচোরা আরাম-কেদারায় বসল। আর ওর এইসব কাজকর্ম চলার সময় আগাগোড়া আমরা চুপচাপ সোফাটার ওপর বসে রইলুম। বৃদ্ধ একবার আমাদের দিকে পেছন ফিরতে চুবুক আমাকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে দুষ্টু হাসি হেসে আঙুল দিয়ে নিজের মাথাটা দেখালেন। উনি কী বলতে চাইছিলেন বুঝে আমিও হাসলুম।

‘অনেক দিন পর আবার লালেদের দেখছি, গৃহকর্তা বলল। তারপর প্রশ্ন করল: ‘আচ্ছা, লেনিনের শরীরগতিক কেমন? ভালো তো?’

‘লেনিন ভালোই আচেন। ধন্যবাদ,’ চুবুক গম্ভীরভাবে বললেন।

‘হুম্, ভালোই, ভালোই।’

 

জনপ্রিয় সংবাদ

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮১)

০৮:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

অষ্টম পরিচ্ছেদ

‘বোসো, বোসো,’ সোফাটা দেখিয়ে বৃদ্ধ বলল। ‘এখানে আমি একাই থাকি, বুঝেছ। অনেক কাল বাড়িতে অতিথ-জন আসে না। চাষীরা কচিৎ-কখনও আসে এটা-ওটা জিনিস নিয়ে। তবে অনেক কাল কোনো ভন্দরলোকের মুখ দেখি নি। ক্যাপটেন ভার্ৎস অবিশ্যি একবার এসেছিলেন বটে। তাঁকে চেনো নাকি তোমরা? ওহো, কিছু মনে কোরো না, তোমরা যে আবার লাল। তাও তো বটে।’

আমাদের গৃহকর্তা সাইডবোর্ডের কাছে গিয়ে দু-খানা প্লেট আর দুটো কাঁটা বের করল। প্লেট দুটো, বোঝা গেল, বিপর্যয়ের হাত এড়াতে পেরেছিল। কাঁটা দুটোর একটা ছিল কাঠের হাতলওয়ালা রান্নাঘরে ব্যবহার করার মতো সাধারণ কাঁটা, আর দ্বিতীয়টা ছিল কারুকাজ-করা আর বাঁকানো, ভোজের শেষে ফল-মিষ্টি খাওয়ার কাঁটা। এই দ্বিতীয় কাঁটাটার একটা দাঁড়া আবার ছিল ভাঙা। যাই হোক, এরপর গৃহকর্তা সাইডবোর্ড থেকেই বের করল একখানা আন্ত কালো পাঁউরুটি আর ইউক্রেনীয় সসেজের মালার আধখানা।

তারপর ঝুলকালিতে প্রায় কালো-হয়ে-গেছে এমন একটা কেটলি ত্রিভঙ্গমুরারি একটা কেরোসিন স্টোভের ওপর বসিয়ে গৃহকর্তা তোয়ালেয় হাত মুছল। তোয়ালেটা-ষে কতদিন কাচা হয় নি তা ভগবানই জানে। তারপর সে দেয়াল থেকে একটা অদ্ভুত আকারের সুন্দর পাইপ নামাল। পাইপটার গায়ে খোদাই-করা ছাগলের মূর্তিতে মানুষের মুখ ছিল বসানো।

ছাগলটার দন্তহীন মুখে ছিল একগাল হাসি। পাইপে মাখোকা তামাক ভরে লোকটি এবার মচমচ-আওয়াজ-করা স্প্রিং-উ’চনো একটা ভাঙাচোরা আরাম-কেদারায় বসল। আর ওর এইসব কাজকর্ম চলার সময় আগাগোড়া আমরা চুপচাপ সোফাটার ওপর বসে রইলুম। বৃদ্ধ একবার আমাদের দিকে পেছন ফিরতে চুবুক আমাকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে দুষ্টু হাসি হেসে আঙুল দিয়ে নিজের মাথাটা দেখালেন। উনি কী বলতে চাইছিলেন বুঝে আমিও হাসলুম।

‘অনেক দিন পর আবার লালেদের দেখছি, গৃহকর্তা বলল। তারপর প্রশ্ন করল: ‘আচ্ছা, লেনিনের শরীরগতিক কেমন? ভালো তো?’

‘লেনিন ভালোই আচেন। ধন্যবাদ,’ চুবুক গম্ভীরভাবে বললেন।

‘হুম্, ভালোই, ভালোই।’