চীন সফরের প্রস্তুতি
ওয়াশিংটন সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষের দিকে চীন সফরে যাবেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করছেন। ওই সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে এক ডজনের বেশি শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) যাওয়ার কথা রয়েছে।
এটি অনেকটাই ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মতো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত মে মাসে সৌদি আরব সফরে তার সঙ্গে প্রায় ৩০ জন ব্যবসায়ী নেতা গিয়েছিলেন। সেখানেই ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।
আগের সফরে অংশ নেওয়া শীর্ষ সিইওরা
সৌদি সফরে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন:
- টেসলার ইলন মাস্ক
- ব্ল্যাকস্টোনের স্টিফেন শোয়ার্জম্যান
- ব্ল্যাকরকের ল্যারি ফিঙ্ক
- ওপেনএআইয়ের স্যাম অল্টম্যান
- এনভিডিয়ার জেনসেন হুয়াং
- পালান্টিয়ারের আলেক্স কার্প
- অ্যামাজনের অ্যান্ডি জ্যাসি
নতুন বাণিজ্য চুক্তি
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানান, চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তবে তিনি এর বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।
এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বেইজিংকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো চাপ দিয়ে দ্রুত সুবিধা আদায়ের কৌশল থেকে সরে গিয়ে এবার দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি কমানোর (ডি-রিস্কিং) লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
শুক্রবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, বিরল মাটি (রেয়ার-আর্থ) রপ্তানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে “পরিপূরক বোঝাপড়া” হয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, “চীন আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রিত পণ্যের রপ্তানির জন্য উপযুক্ত আবেদনগুলো পর্যালোচনা ও অনুমোদন করবে।”
তিনি আরও বলেন, “এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরোপিত একাধিক সীমাবদ্ধতা তুলে নেবে।” ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর বাইডেন প্রশাসনের সময়কালের নিয়ন্ত্রণগুলো অন্তর্ভুক্ত।
শুল্ক বিরোধ ও সমঝোতা
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ২৫ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। পরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং এর মধ্যে বৈঠকে বেশিরভাগ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক অভিযোগ করেন যে চীন বিরল মাটি রপ্তানি আবার শুরু করা নিয়ে অযথা দেরি করছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ঠিকাদার, গাড়ি উৎপাদক এবং বিমান শিল্পের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে।
বাইডেন আমলের নিয়ন্ত্রণ শিথিলের প্রস্তাব
বেসেন্টের উপদেষ্টারা প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, চীন যদি বিরল মাটি ও ম্যাগনেটের লাইসেন্সিং সহজ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বাইডেন-যুগের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবে। লক্ষ্য ছিল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া (ডি-কাপলিং) নয়, বরং ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে নির্ভরতা কমানো।
ট্রাম্প সফর নিয়ে আলোচনা
এ মাসের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর চীনে অভিজ্ঞ ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্ভাব্য সফর নিয়ে পরামর্শ শুরু করে। এমনকি অতিথি আপ্যায়নে চা পরিবেশন নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এসব পদক্ষেপ স্পষ্ট করে যে প্রশাসনে বেসেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রাধান্য পাচ্ছে।
প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ
সূত্রগুলো জানায়, চীন নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে মতবিরোধ রয়েছে। একদিকে আছেন বেসেন্ট, যিনি চীনের সঙ্গে “দৃঢ় ও ভারসাম্যপূর্ণ পুনর্গঠন” চান। অন্যদিকে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যিনি চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নেন।
দুইজনের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে যখন রুবিও জেনেভা বৈঠকের পরপরই ২৮ মে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের আক্রমণাত্মক নীতি ঘোষণা করেন।
শি জিনপিং এর বার্তা
৫ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, “চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিশাল জাহাজের দিক ঠিক রাখতে আমাদেরই হাল ধরা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন ধরনের বাধা ও বিঘ্ন এড়িয়ে চলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।” ধারণা করা হয়, রুবিওর ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়ায় শি এই মন্তব্য করেন।
পারস্পরিক স্বার্থের কথা
১২ জুন মার্কিন সিনেটের ফিন্যান্স কমিটিতে সাক্ষ্যে বেসেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনৈতিক লক্ষ্য আসলে একে অপরকে সম্পূরক।
তিনি বলেন, “চীনের নেতারা চান তাদের অর্থনীতি আরও বেশি ভোক্তা খাতে নির্ভর করুক। আর যুক্তরাষ্ট্র চায় উৎপাদন খাত আরও শক্তিশালী হোক। উভয় দেশ সদিচ্ছা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করলে আমরা এমন একটি শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ পুনর্গঠন অর্জন করতে পারি, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে আরও টেকসই পথে নিয়ে যাবে।”