০৯:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৮৭)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • 20
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

তিতু তার শিষ্যদের কাছারি আদালত, মামলার পথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পরামর্শ দিলেন। নিম্নবর্ণের হিন্দু চাষিরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অংশ না নিলেও পূর্বের মতো নিষ্ক্রিয় থাকল না, ফকির মিশকিন শাহ-এর শিষ্যদের মধ্যে নিম্নবর্ণের অনেক হিন্দু ছিল। ফকির তিতুর সঙ্গে যোগ দিল। ইতিমধ্যে তার লোকেরা একের পর এক নীলকুঠি দখল করে প্রজাদের বায়নানামা চুক্তিপত্রাদি পোড়াতে শুরু করল। এতে হিন্দু চাষিদের একাংশ উৎসাহিত হয়ে উঠল। বাদুড়িয়ার নিকটবর্তী শেরপুর গ্রামের ধনী মহাজন ইয়ারমহম্মদ- এর বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা সংগ্রহ করা হল। জঙ্গলপুরের নীলকুঠির সাহেব শিলিংফোর্ডকে বাধ্য করল টাকা দিতে এবং জঙ্গলপুরের রামনারায়ণ পোদ্দারের বাড়ি লুঠ করা হল।

লাউহাটির সংঘর্ষে দেবনাথ রায় মারা গেল এবং তার ভাই হরদেব রায় সহ অনেকে আহত হল। এই এলাকার নীলকুঠির ওভারসীয়র স্মিথকে আক্রমণ করল চাষিরা; স্মিথ সাংঘাতিক ভাবে আহত হল এবং তার কয়েকজন সঙ্গী মারা গেল। পরপর এই কয়টি ঘটনা বসিরহাট থেকে শুরু করে গোবরডাঙা পর্যন্ত, তৎকালীন বারাসত নদীয়া জেলার এক, বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভীতির সঞ্চার হল। কার্যত তিতুই হলেন এই এলাকার সর্বময় কর্তা। নীলকুঠীর সাহেব, জমিদার, কলিঙ্গ, বসিরহাট থানার দারোগা, পুলিশ সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেল। ইংরেজ রাজত্বের শুরুতে তখনও এসব এলাকায় থানা পুলিশের ক্ষমতা খুবই দুর্বল ছিল- সে সময় বসিরহাট থানায় একজন দারোগা দু-জন সেপাই ছিল মাত্র।

তিতু এক ঘোষণাপত্রে প্রচার করলেন কোম্পানি রাজত্বের অবসান ঘটেছে, ইউরোপীয়রা বে-আইনিভাবে মুঘলদের সাম্রাজ্য দখল করেছিল। উত্তরাধিকারের স্বাভাবিক নিয়মানুসারে মুসলমানরাই এদেশের শাসক। সমস্ত জমিদারদের আদেশ দিলেন ইংরেজ কোম্পানির পরিবর্তে তার কাছে খাজনা জমা দেবার এবং আদেশ অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তি দেবার নির্দেশ দেওয়া হল। এই আদেশনামা রাণাঘাটের পালচৌধুরীদের কাছারিতে পৌঁছে গিয়েছিল।

বিদ্রোহের প্রথমদিকে সরকারি কর্তৃপক্ষ তিতুর আন্দোলনের ব্যাপারে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি। পুঁড়া, লাউহাটি এবং কয়েকটা নীলকুঠি আক্রমণের পর বিষয়টা বেশ গুরুত্ব পেল। বারঘরিয়া নীলকুঠির মিঃ স্টর্মের প্রতিনিধি মিঃ পিরন সব ঘটনা সরকারকে জানাল। তৎকালীন ২৪ পরগনার কালেকটর বারওয়েল ব্যাপারটাতে খুব গুরুত্ব দিলেন। ইতিমধ্যে বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ আলেকজান্ডার এবং নদীয়ার ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ম্যাগটে তাদের ওপর তিতুর অক্রমণের ঘটনা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন। ১৮৩১ এর ১০ই নভেম্বর বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার তিতুর বাহিনীর কাছে চরম বিপর্যয় স্বীকার করে নিলেন এবং পালিয়ে সুন্দরবনের নদীপথে কলকাতায় পৌঁছলেন। ম্যাজিস্ট্রেট এ ভাবে পালিয়ে আসার বিবরণ সরকারকে দিলেন After runing about five miles 1 reached a Nallah where I was obliged to swim across and go on to Baduria at which place I providently, obtained a boat and arrived at Bagundi at sunset.’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৮৭)

১২:০০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

তিতু তার শিষ্যদের কাছারি আদালত, মামলার পথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পরামর্শ দিলেন। নিম্নবর্ণের হিন্দু চাষিরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অংশ না নিলেও পূর্বের মতো নিষ্ক্রিয় থাকল না, ফকির মিশকিন শাহ-এর শিষ্যদের মধ্যে নিম্নবর্ণের অনেক হিন্দু ছিল। ফকির তিতুর সঙ্গে যোগ দিল। ইতিমধ্যে তার লোকেরা একের পর এক নীলকুঠি দখল করে প্রজাদের বায়নানামা চুক্তিপত্রাদি পোড়াতে শুরু করল। এতে হিন্দু চাষিদের একাংশ উৎসাহিত হয়ে উঠল। বাদুড়িয়ার নিকটবর্তী শেরপুর গ্রামের ধনী মহাজন ইয়ারমহম্মদ- এর বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা সংগ্রহ করা হল। জঙ্গলপুরের নীলকুঠির সাহেব শিলিংফোর্ডকে বাধ্য করল টাকা দিতে এবং জঙ্গলপুরের রামনারায়ণ পোদ্দারের বাড়ি লুঠ করা হল।

লাউহাটির সংঘর্ষে দেবনাথ রায় মারা গেল এবং তার ভাই হরদেব রায় সহ অনেকে আহত হল। এই এলাকার নীলকুঠির ওভারসীয়র স্মিথকে আক্রমণ করল চাষিরা; স্মিথ সাংঘাতিক ভাবে আহত হল এবং তার কয়েকজন সঙ্গী মারা গেল। পরপর এই কয়টি ঘটনা বসিরহাট থেকে শুরু করে গোবরডাঙা পর্যন্ত, তৎকালীন বারাসত নদীয়া জেলার এক, বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভীতির সঞ্চার হল। কার্যত তিতুই হলেন এই এলাকার সর্বময় কর্তা। নীলকুঠীর সাহেব, জমিদার, কলিঙ্গ, বসিরহাট থানার দারোগা, পুলিশ সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেল। ইংরেজ রাজত্বের শুরুতে তখনও এসব এলাকায় থানা পুলিশের ক্ষমতা খুবই দুর্বল ছিল- সে সময় বসিরহাট থানায় একজন দারোগা দু-জন সেপাই ছিল মাত্র।

তিতু এক ঘোষণাপত্রে প্রচার করলেন কোম্পানি রাজত্বের অবসান ঘটেছে, ইউরোপীয়রা বে-আইনিভাবে মুঘলদের সাম্রাজ্য দখল করেছিল। উত্তরাধিকারের স্বাভাবিক নিয়মানুসারে মুসলমানরাই এদেশের শাসক। সমস্ত জমিদারদের আদেশ দিলেন ইংরেজ কোম্পানির পরিবর্তে তার কাছে খাজনা জমা দেবার এবং আদেশ অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তি দেবার নির্দেশ দেওয়া হল। এই আদেশনামা রাণাঘাটের পালচৌধুরীদের কাছারিতে পৌঁছে গিয়েছিল।

বিদ্রোহের প্রথমদিকে সরকারি কর্তৃপক্ষ তিতুর আন্দোলনের ব্যাপারে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি। পুঁড়া, লাউহাটি এবং কয়েকটা নীলকুঠি আক্রমণের পর বিষয়টা বেশ গুরুত্ব পেল। বারঘরিয়া নীলকুঠির মিঃ স্টর্মের প্রতিনিধি মিঃ পিরন সব ঘটনা সরকারকে জানাল। তৎকালীন ২৪ পরগনার কালেকটর বারওয়েল ব্যাপারটাতে খুব গুরুত্ব দিলেন। ইতিমধ্যে বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ আলেকজান্ডার এবং নদীয়ার ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ম্যাগটে তাদের ওপর তিতুর অক্রমণের ঘটনা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন। ১৮৩১ এর ১০ই নভেম্বর বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার তিতুর বাহিনীর কাছে চরম বিপর্যয় স্বীকার করে নিলেন এবং পালিয়ে সুন্দরবনের নদীপথে কলকাতায় পৌঁছলেন। ম্যাজিস্ট্রেট এ ভাবে পালিয়ে আসার বিবরণ সরকারকে দিলেন After runing about five miles 1 reached a Nallah where I was obliged to swim across and go on to Baduria at which place I providently, obtained a boat and arrived at Bagundi at sunset.’