কৃষি ও কৃষক
চতুর্থ অধ্যায়
এই লড়াই- এ দশজন সিপাই তেরজন বরকন্দাজ মারা গেল, বসিরহাট থানার দারোগাকে বিদ্রোহীরা বন্দি করে কেল্লার মধ্যে হত্যা করে। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে নদীয়ার ম্যাজিস্ট্রেট, গোবরডাঙার কালীপ্রসন্ন এবং রুদ্রপুরের নীলকুঠির David Andrews এর সম্মিলিত বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায় বনগাঁতে এবং সেখান থেকে কৃষ্ণনগর পৌঁছে অসহায় ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে পালিয়ে এসেছেন তার বিস্তৃত রিপোর্ট সরকারকে পৌঁছে দিলেন। নদীয়া যশোর বারাসতের সমস্ত নীলকর সাহেব, জমিদার ধনী মহাজন সরকারি কর্তৃপক্ষ বিনিদ্ররজনী যাপন করতে শুরু করলেন।
সরকার সক্রিয় হলেন বিদ্রোহ দমনের। ১৫ই নভেম্বর ১৮৩১ ডেপুটি সেক্রেটারি ২৪ পরগণার কালেক্টব E. R. Barwell কে নির্দেশ দিলেন কলকাতা মিলিশিয়া থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে তিতুর বিদ্রোহ দমনের জন্য। কলকাতার ফেটি উইলিয়াম, ব্যারাকপুরের দেশীয় সৈন্য এবং দমদম ক্যান্টনমেন্টের কামান নিয়ে মেজর স্কট, ক্যাপটেন সাদারল্যান্ড এবং লেফটেন্যান্ট ম্যাকডোনাল্ড প্রায় ৫০০ সৈন্য নিয়ে নারকেলবেড়িয়ার অভিমুখে যাত্রা শুরু করলেন ১৭ই নভেম্বর। রাতের অন্ধকারে বসিরহাট বারাসত রাস্তার ওপরে বাদুড়িয়ার অনতিদূরে মেটিয়াহাটে অবস্থান করল সৈন্যবাহিনী। ভোর তিনটায় মেটিয়াহাট থেকে যাত্রা করে ১৮ই নভেম্বর সকালের দিকে নারকেলবেড়িয়াতে পৌঁছে গেল সেনাবাহিনী।
বাগুন্ডীর সল্ট সুপারের অফিস পাহারা দেবার জন্য ইতিমধ্যে ৫০ জন সৈন্য পাঠানো হয়েছে। আলিপুরের কালেকটর স্থানীয় জমিদার, নীলকঠিদের আদেশ পাঠালেন সৈন্য বাহিনীকে সব রকমের সাহায্য দেবার। কয়েক ঘন্টা তুমুল লড়াই এর পর বাঁশের কেল্লার পশ্চিম দিক ভেঙে পড়ল বিদ্রোহীদের মধ্যে তিতু সমেত ৫০ জন মারা গেলেন, ৩০ জন আহত হল এবং ৩৫০ জনকে বন্দি করে বাগুণ্ডিতে চালান দেওয়া হল। তিতু ও তাঁর সঙ্গীদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হল জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের নির্দেশে। বন্দিদের বাগুণ্ডি থেকে নদীপথে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জেলে পাঠানো হল ৩৩৩ জনকে বাকি ১৭ জন পথে মারা যায়। প্রচুর অর্থ ও সম্পদ বাঁশের কেল্লা থেকে সৈন্যরা লুঠ করল যার কথা Major Scot স্বীকার করেছেন। সৈনিকদের কাছ থেকে কিছু সম্পদ উদ্ধার করে বারঘরিয়ার নীলকুঠির মালিক মিঃ স্টর্মের হেফাজতে রাখা হল-প্রমাণ দিয়ে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হবে এই আদেশ দিয়ে।
বন্দিদের আলিপুর কোর্টে বিচারের পর শাস্তি দেওয়া হল ১৯৭ জনকে। সেনাপতি গোলাম মাসুমের ফাঁসি দেওয়া হল নারকেলবেড়িয়ায় এখনও সেই জায়গা ফাঁসিতলা মাঠ নামে স্থানীয় মানুষদের কাছে পরিচিত। তিতুর এক ছেলে তোরাব আলিকে দু- বছরের শাস্তি দেওয়া হল আর ছোট ছেলে গহর আলিকে মুক্তি দেওয়া হল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করল ১১ জন। একজন হিন্দু এই কেসে ধরা পড়ে কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কেস থেকে অব্যাহতি দেন। আলিপুর জেলে চরম সতর্কতার মধ্যে এসব বন্দিদের পৃথকভাবে রাখা হল যাতে এরা অন্য বন্দিদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারে।