ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান এবং মায়া-অর্থনীতি
প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান এবং দেওয়াল লিখন-পাঠ আমাদের মায়া-অর্থনীতির আরেক দিক সম্পর্কেও কিছু তথ্য সরবরাহ করে। বিশিষ্ট গবেষক এ্যানথনি এ্যান্ড্রস (Anthony Andrews)-এর তথ্য থেকেও এ বিষয়ে কিছু সংবাদ আমরা পেয়ে যাই। বাণিজ্য-অর্থনীতির প্রধান উপাদানও ছিল প্রধানত কৃষিব্যবস্থা। প্রাচীন মায়া জনগোষ্ঠীর অর্থনীতিকে একটা আকার দিয়েছিল কৃষি, চাষ-আবাদের সম্পূর্ণ কাঠামো।
কিন্তু এইসঙ্গে কারো কারো মতে বাণিজ্য- অর্থনীতি এবং সেই সূত্রে পেশা-কাঠামোকে সমৃদ্ধ করার অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে সম্পদের সুষম বণ্টন। দ্বিতীয় কারণ হল বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন। এ প্রসঙ্গে আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক চার্লস লিনকন-এর অভিমত উল্লেখ করতে পারি। লিনকন বলেছেন ক্লাসিক এবং ক্লাসিক উত্তর যুগে চিচেন ইতজা মেসোআমেরিকান সভ্যতার অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
এই অঞ্চলে পরবর্তীকালে মায়াদের বসতি ও জনপদ গড়ে উঠেছিল। এইসব নতুন জনবসতি এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ার ফলে নতুন বাণিজ্যিক লেনদেনের প্রয়োজন হয়েছিল। এর স্বাভাবিক প্রতিফল হিসেবে অঞ্চলের সাধারণ নাগরিক এবং বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠী ঐ অঞ্চলের ও নগরের পেশা এবং বহুবিধ জীবিকার মধ্যে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এই প্রসঙ্গকে প্রসারিত করে আরো বলা যায় বাণিজ্যিক পরিকাঠামোর এই উন্নয়ন ঘটেছিল ক্লাসিক, ক্লাসিক-উত্তর এবং প্রাস্তিক-ক্লাসিক যুগে।
এই বাণিজ্যিক উন্নয়ন মায়া জনগোষ্ঠীকে নানাবিধ দ্রব্য সংগ্রহে সাহায্য করেছিল। আবার অন্যদিকে কিছু গবেষক মনে করেন ক্লাসিক ও ক্লাসিক-পরবর্তী যুগের কিছু অঞ্চলের জনসংখ্যা কমে গিয়েছিল কৃষিকাজের ত্রুটি ও অবনতির জন্য। এই কৃষি ও চাষ ফলনের অবনতির কারণ হিসেবে ছিল খরা, বনাঞ্চলের অবনতি, ব্যাপক হারে গাছ-গাছালি কাটা। এইসঙ্গে ইতিবচক দিক ছিল এর উন্নতমাত্রার সেচ।
(চলবে)