০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও অবনতি : ৫ মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১,০৩৪ জন ‘ভারত ৬২ কিলোমিটার দখল করেছে’ — এই তথ্য ভুল ও বিভ্রান্তিকর: বিজিবি দুই ভাগের গল্প: বাণিজ্যযুদ্ধের উত্থান-পতনে ক্যান্টন মেলা কাঁপিয়ে দিল চীন গ্রাহক সুরক্ষায় বৈশ্বিক স্বীকৃতি: ‘সিপিসি গোল্ড’ অর্জন করল ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের প্রতি যৌন হয়রানি: নারী সহিংসতা নিয়ে নতুন বিতর্ক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে আপিলের শুনানি ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষে ধ্বংসস্তূপের মাঝে জীবন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে স্থগিত পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন গাজীপুরে অভিযান: সাবেক ছাত্রদল নেতা এনামুলসহ ৭ জন অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতীফ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর

‘বাড়িঘর সমস্তই পুড়াইয়া ফালাইছে’

  • Sarakhon Report
  • ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
  • 79

(প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ)

নাম: মালতী শিকদার

স্বামী: স্বর্গীয় কৃষ্ণকান্ত শিকদার (১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে নিহত)

গ্রাম : ডান্ডুহাট, ডাক: বাইশারি, ইউনিয়ন: বাইশারি

থানা: বানারীপাড়া, জেলা: বরিশাল

শিক্ষাগত যোগ্যতা: নিরক্ষর

 

১৯৭১ সালে বয়স:?

১৯৭১ সালে পেশা: গৃহিণী

বর্তমান পেশা: গৃহিণী

প্র: ১৯৭১ সালে আপনাদের গ্রামে যখন মিলিটারি আসলো, কিভাবে আসলো আপনি কি জানেন?

উ: তারা আইছে গানবোটে।

প্র: কোথা থেকে আসছে?

উ: আইছে বালিগোড়া থেইকা, পল্টন থেইকা আইছে। গানবোট থেইকা নাইমা হাঁটিয়া আইয়া আর কি গেরামে ঢুইকা গেছে, ঢুইকা যাইয়া তারপর ঘর দোয়ার পুড়াই দেয়, হেদের রাইফেল থেইকা ফায়ার করছে।

প্র: কতগুলি বাড়ি পুড়াইলো?

উ: আমাগো এ জাগা দিয়া বাড়িঘর আছিলোই না। হিন্দুদের বাড়িঘর মোটেই আছিলো না। সমস্তই পুড়াই ফালাইছে।

প্র: ২/৪ জনের নাম বলতে পারবেন কার কার বাড়িঘর পুড়াইলো?

উ: বাড়িঘর পুড়াইছে কৃষ্ণকান্ত শিকদারের। হেরপর তারকনাথ শিকদার, হেরপর

অইছে সূর্যকান্ত শিকদার, হেরপর সুধীরের বাপের নাম অইলো চন্দ্রকান্ত শিকদার, শশীকুমার শিকদার।

প্র: আপনি শাহপুরের কথা কিছু বলতে পারবেন?

উ: শাহপুরের কেউর নাম তো আমি বলতে পারবো না।

প্র: যখন মিলিটারি আসলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন?

উ: আমি ঘরের মধ্যেই আছিলাম। ওদের দেইখ্যা আর কি গেছি পোলাপান, স্বামী লইয়া ঐ আশ্রমের মধ্যে। আশ্রমের মধ্যে চইলা যাইয়া আর তো যাইতে পারি না কোথাও। ঐ দিগদা মিলিটারি আইয়া পড়ছে, আমরা তো আশ্রমের মধ্যে ঢুকছি। হেই সময় ওরা আইয়া আর কি আশ্রমে সবরে আটকাইছে। মহিলা মারে নাই, পুরুষ মারছে।

প্র: কিভাবে মারলো?

উ: গুলি করছে, গুলি অইছে।

প্র: কার গায়ে গুলি পড়ছিলো?

উ: পড়ছিলো আমার স্বামীর গায়ে।

 

 

প্র: আপনার স্বামী তখন কি করতেছিলো?

উ: দাঁড়াইয়া দেখতে আরাই করে। উনার জন্মস্থান এই জাগায়। বাড়িঘর পুড়িয়া যায় হেইয়ার লাইগা দেখতে বাইর অইছে।

প্র: তারপর?

উ: তারপরে আর কি! হে সময় গুলি করছে, বাম হাতে গুলি লাগছে।

প্র: তারপর?

উঃ দুই সাইডে আর কি ফাইট অইতে আছে। এপার ওই পার, নদীর দুই পারে ফাইট অইছে।

প্র: নদীর ওপারে কারা ছিলো?

উ: নদীর ওপার আছিলো মিলিটারি, আর এপার আছিলো মুক্তিবাহিনী।

প্র: তারপরে?

উ: হেই সময় আর কি গুলি করছে।

প্র: গুলি করার পর কি অবস্থা অইলো আপনার?

উ: আশ্রমে সাধুরা আছিলো। হেরা আর কি কিছু করছে। এরপর আমার স্বামীরে বরিশাল লইয়ে গেলাম। কোনো কাজ অয় নাই।

 

 

প্র: আপনার স্বামী কতদিন পরে মারা গেলো?

উ: বেশি দিন আছিলো না। অল্প কয়েকদিন আছিলো।

প্র: আপনার কি বাড়িঘর পুড়াই দিছিলো?

উ: হ্যাঁ, আমাদের কিছুই আছিলো না। সমস্তই পুড়াইয়া ফালাইছে। একবার না,

দুইবার পুড়াইছে।

প্র: কারা পুড়াইলো?

উ: পুড়াইছে মিলিটারিরা।

প্র: আপনার এলাকায় মিলিটারি কয়জন লোক মারছে?

উ: লোক অনেক। আমি সবার নাম কইতে পারমু না।

প্র: কত জন লোক মারছিলো আপনার এলাকায় জানা আছে?

উ: ২৭ জনরে মারছে শুনছি।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর নাম: নিরঞ্জন দাশগুপ্ত অনু

সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ: অগাস্ট ১৮, ১৯৯৬

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও অবনতি : ৫ মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১,০৩৪ জন

‘বাড়িঘর সমস্তই পুড়াইয়া ফালাইছে’

১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

(প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ)

নাম: মালতী শিকদার

স্বামী: স্বর্গীয় কৃষ্ণকান্ত শিকদার (১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে নিহত)

গ্রাম : ডান্ডুহাট, ডাক: বাইশারি, ইউনিয়ন: বাইশারি

থানা: বানারীপাড়া, জেলা: বরিশাল

শিক্ষাগত যোগ্যতা: নিরক্ষর

 

১৯৭১ সালে বয়স:?

১৯৭১ সালে পেশা: গৃহিণী

বর্তমান পেশা: গৃহিণী

প্র: ১৯৭১ সালে আপনাদের গ্রামে যখন মিলিটারি আসলো, কিভাবে আসলো আপনি কি জানেন?

উ: তারা আইছে গানবোটে।

প্র: কোথা থেকে আসছে?

উ: আইছে বালিগোড়া থেইকা, পল্টন থেইকা আইছে। গানবোট থেইকা নাইমা হাঁটিয়া আইয়া আর কি গেরামে ঢুইকা গেছে, ঢুইকা যাইয়া তারপর ঘর দোয়ার পুড়াই দেয়, হেদের রাইফেল থেইকা ফায়ার করছে।

প্র: কতগুলি বাড়ি পুড়াইলো?

উ: আমাগো এ জাগা দিয়া বাড়িঘর আছিলোই না। হিন্দুদের বাড়িঘর মোটেই আছিলো না। সমস্তই পুড়াই ফালাইছে।

প্র: ২/৪ জনের নাম বলতে পারবেন কার কার বাড়িঘর পুড়াইলো?

উ: বাড়িঘর পুড়াইছে কৃষ্ণকান্ত শিকদারের। হেরপর তারকনাথ শিকদার, হেরপর

অইছে সূর্যকান্ত শিকদার, হেরপর সুধীরের বাপের নাম অইলো চন্দ্রকান্ত শিকদার, শশীকুমার শিকদার।

প্র: আপনি শাহপুরের কথা কিছু বলতে পারবেন?

উ: শাহপুরের কেউর নাম তো আমি বলতে পারবো না।

প্র: যখন মিলিটারি আসলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন?

উ: আমি ঘরের মধ্যেই আছিলাম। ওদের দেইখ্যা আর কি গেছি পোলাপান, স্বামী লইয়া ঐ আশ্রমের মধ্যে। আশ্রমের মধ্যে চইলা যাইয়া আর তো যাইতে পারি না কোথাও। ঐ দিগদা মিলিটারি আইয়া পড়ছে, আমরা তো আশ্রমের মধ্যে ঢুকছি। হেই সময় ওরা আইয়া আর কি আশ্রমে সবরে আটকাইছে। মহিলা মারে নাই, পুরুষ মারছে।

প্র: কিভাবে মারলো?

উ: গুলি করছে, গুলি অইছে।

প্র: কার গায়ে গুলি পড়ছিলো?

উ: পড়ছিলো আমার স্বামীর গায়ে।

 

 

প্র: আপনার স্বামী তখন কি করতেছিলো?

উ: দাঁড়াইয়া দেখতে আরাই করে। উনার জন্মস্থান এই জাগায়। বাড়িঘর পুড়িয়া যায় হেইয়ার লাইগা দেখতে বাইর অইছে।

প্র: তারপর?

উ: তারপরে আর কি! হে সময় গুলি করছে, বাম হাতে গুলি লাগছে।

প্র: তারপর?

উঃ দুই সাইডে আর কি ফাইট অইতে আছে। এপার ওই পার, নদীর দুই পারে ফাইট অইছে।

প্র: নদীর ওপারে কারা ছিলো?

উ: নদীর ওপার আছিলো মিলিটারি, আর এপার আছিলো মুক্তিবাহিনী।

প্র: তারপরে?

উ: হেই সময় আর কি গুলি করছে।

প্র: গুলি করার পর কি অবস্থা অইলো আপনার?

উ: আশ্রমে সাধুরা আছিলো। হেরা আর কি কিছু করছে। এরপর আমার স্বামীরে বরিশাল লইয়ে গেলাম। কোনো কাজ অয় নাই।

 

 

প্র: আপনার স্বামী কতদিন পরে মারা গেলো?

উ: বেশি দিন আছিলো না। অল্প কয়েকদিন আছিলো।

প্র: আপনার কি বাড়িঘর পুড়াই দিছিলো?

উ: হ্যাঁ, আমাদের কিছুই আছিলো না। সমস্তই পুড়াইয়া ফালাইছে। একবার না,

দুইবার পুড়াইছে।

প্র: কারা পুড়াইলো?

উ: পুড়াইছে মিলিটারিরা।

প্র: আপনার এলাকায় মিলিটারি কয়জন লোক মারছে?

উ: লোক অনেক। আমি সবার নাম কইতে পারমু না।

প্র: কত জন লোক মারছিলো আপনার এলাকায় জানা আছে?

উ: ২৭ জনরে মারছে শুনছি।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর নাম: নিরঞ্জন দাশগুপ্ত অনু

সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ: অগাস্ট ১৮, ১৯৯৬