সি রাজা মোহন
মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পৃক্ততার প্রয়োজন
মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে দিল্লিকে তাদের মূল উদ্বেগগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। এর জন্য অঞ্চল সম্পর্কে ভারতের পুরোনো ধ্যানধারণাগুলো পরিত্যাগ করাও জরুরি। দিল্লির আরও প্রয়োজন একটি স্পষ্ট মূল্যায়ন, যা মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্র এবং অঞ্চলের অন্যান্য শক্তি যেমন ইরান, ইসরায়েল, এবং তুরস্কের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্বের শ্রেণিবিন্যাস নির্ধারণ করবে। মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলো তাদের ভূমিতে অটোমান সাম্রাজ্যের আধিপত্য পুনরুদ্ধার করতে চায় না বা পারস্যের আঞ্চলিক আধিপত্যের দাবিকে মান্যতা দিতে আগ্রহী নয়। তদুপরি, তারা চায় না যে চরমপন্থী ইসলামী প্রজাতন্ত্রগুলো বাথ পার্টির প্রজাতন্ত্রগুলো প্রতিস্থাপন করুক এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টি করুক।
কুয়েতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন কুয়েত সফর উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার চূড়ান্ত পর্ব সম্পন্ন করবে। এই অঞ্চল ভারতের নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চার দশকের বেশি সময় পর কুয়েতে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সফর করছেন। মোদির এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন দামেস্কে আসাদ শাসনের পতনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
১৯৯০ সালে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেন কুয়েত আক্রমণ এবং দখল করার পর, দিল্লির তৎকালীন সরকার ঘটনাটিকে স্পষ্টভাবে নিন্দা করতে অক্ষম ছিল। এটি ভারতীয় রাজনৈতিক শ্রেণি এবং পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও তেমন কোনও সমালোচনা তৈরি করেনি। একইভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান দখল বা রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসন নিয়েও ভারতের প্রতিক্রিয়া খুবই সংযত ছিল।
ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান
উপনিবেশ-পরবর্তী একটি দেশ হিসেবে ভারত সব সময় অঞ্চলগত সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, সাদ্দাম হোসেনের ইরাক বা ব্রেজনেভের সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় ভারতের এই আগ্রাসনগুলোর নিন্দা করতে দ্বিধা ছিল।
ভারত-উপসাগর সম্পর্কের বিবর্তন
১৯৯০-৯১ সালে ভারতের ইরাক নীতির প্রভাব কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর পড়েছিল। তবে ২০০০-এর দশক থেকে ভারত ও কুয়েতের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর পুনরায় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৮১ সালের কুয়েত সফরের পর ২০০৯ সালে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সফর ছিল উল্লেখযোগ্য।
নরেন্দ্র মোদি আমলের পরিবর্তন
মোদির সময়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এ অঞ্চলে বহুবার সফর করেছেন, যা আগে দেখা যায়নি। এই সফরগুলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুণগত রূপান্তর আনতে সাহায্য করেছে। নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সংযোগ প্রকল্পগুলো ভারত ও উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
নতুন মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের ভূমিকা
সিরিয়ার আসাদ শাসনের পতন মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলো এখন ধর্মীয় সহনশীলতা, সামাজিক আধুনিকীকরণ, এবং তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনৈতিক রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছে। এসব ক্ষেত্রেই আরব উপসাগর ভারতের জন্য একটি প্রাকৃতিক অংশীদার।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আর মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে জটিল করে না। বরং, ভারত এখন মিশর, উপসাগরীয় দেশ, জর্ডান, এবং মরক্কোর মতো মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে আরও গভীর করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
উপসংহার
মধ্যপ্রাচ্যের এই গঠনমূলক পরিবর্তনের সময়ে কুয়েত সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ভারতের জন্য মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করা, এবং ইসরায়েলকে মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল হতে উৎসাহিত করা জরুরি। এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।