০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৯৭)

  • Sarakhon Report
  • ১০:৫৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 16

সন্ন্যাসী ঠাকুর

সন্ন্যাসী ঠাকুরের আশ্রমে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় শহর হইতে বহু লোক আসিতেন। তাঁহাদের কেহ কেহ সন্ন্যাসী ঠাকুরকে গান শুনাইতেন। তিনি গান বড় ভালোবাসিতেন। তিনি তান্ত্রিক সন্ন্যাসী ছিলেন বলিয়া এখানে প্রায়ই শ্যামা-বিষয়ক গান হইত। কয়েকটি গানের প্রথম পদ এখনও আমার মনে আছে,

(১) আয় মা সাধন সমরে, দেখি, মা হারে কি পুত্র হারে।

(২) এবার কালী তোমায় খাব, খাব খাব তোর মুণ্ডমালা চিবিয়ে খাব।

(৩) শ্মশান ভালোবাসিস বলে শ্মশান হৃদি।

(৪) ভক্তের কাঙাল ভবে চিরকাল ভক্ত আমার প্রাণের প্রাণ।

(৫) তারা তারা তারা বলে।

(৬) আগে পাছে দুঃখ চলে মা।

১১মিলি নীতীরে বসিয়া এইসব গানের যতগুলি কালি আমার মনে থাকিত একা একা গাহিয়া যাইতাম। সেকালে এরূপ বাগানের সুর আমি শিখিয়া ফেলিয়াছিলাম। সরাকা মাহিয়ার একজন চেলা ভালো গান গাহিতে পারিতেন। নাম মনে নাই। তিনি আমাকে কায়েকারী ভান শিখাইয়া দিয়াছিলেন। গানের জগতে আমার প্রথম হাতেখড়ি হইয়াছিল এইসব ভদ্রলোকি শশুরে-গানের মারফত। আজ ভাবিয়া আশ্চর্য হই, অপরিণত বয়সে এইসব ভদ্রলোকি গাি এমন বিরূপ সমালোচক আমি কি করিয়া হইয়া জ সামাজিক এবং ইতিহাসেরও মু প্রবিভিংকর প্র উপাখ্যান নিয়ে অনাড়ম্বর ও অরচিয়ে থাকা এ লাটের ভিত

একবার আমাদের এক ভগ্নীপতি পদ্মাপার হইতে আমাদের বাড়ি বেড়াইতে আসিলেন। তাঁহার সঙ্গে একখানা বিষাদসিন্ধু বই ছিল। তিনি সন্ন্যাসী ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করিয়া তাঁহার বড়ই অনুরক্ত হইয়া পড়িলেন। তাঁর সেই বিষাদসিন্ধু বইখানা ঠাকুরকে তিনি পড়িতে দিলেন। সেই বই পড়িতে পড়িতে সন্ন্যাসী ঠাকুর প্রায়ই চোখের জল মুছিতেন। এই পুস্তকের করুণ কাহিনী তাঁহাকে এতই প্রভাবিত করিয়াছিল যে, সন্ধ্যাবেলায় শহর হইতে ভক্তমণ্ডলী আসিলে তিনি প্রায়ই তাহাদের নিকট বিষাদসিন্ধুর কাহিনী বলিতেন। বলিতে বলিতে তাঁহার সঙ্গে তাঁহার শ্রোতাদেরও চক্ষু অশ্রুসিক্ত হইত।

সন্ন্যাসী ঠাকুর তান্ত্রিক সাধক ছিলেন। বৈষ্ণবদের মতো রাগ, হিংসা দমন করার শিক্ষা তাঁহার ছিল না। কোনো দুশ্চরিত্র লোক তাঁহার নিকট আসিলে তিনি তাহাকে বড়ই বকিতেন। এজন্য একদল লোক সন্ন্যাসী ঠাকুরের প্রতি বিরূপ হইয়া উঠিল। শহর হইতে বারবনিতাদের আনিয়া দুষ্টলোকেরা মাঝে মাঝে শ্মশানে আসিয়া মদ খাইত। সন্ন্যাসী ঠাকুর এখানে আশ্রম করায় তাহাদের পক্ষে বড়ই অসুবিধা হইল। সন্ন্যাসী ঠাকুর শহরে গেলে বহু স্ত্রীলোক তাঁহাকে দেখিতে আসিত। একবার সুহৃদদার শহরের বাড়িতে সন্ন্যাসী ঠাকুর রাত্র যাপন করেন। তখন শহরের বহু স্ত্রীপুরুষ তাঁহার উপদেশ শুনিতে আসেন। এমন সময় দুইটি লোক সন্ন্যাসী ঠাকুরকে তাঁহার চরিত্র লইয়া আপত্তিজনক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। ইহাতে সন্ন্যাসী ঠাকুর বড়ই রুষ্ট হইয়া পড়েন। শিষ্যেরা লোক দুইটিকে ঘাড় ধরিয়া সেখান হইতে বাহির করিয়া দেন।

 

চলবে…

 

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৯৭)

১০:৫৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সন্ন্যাসী ঠাকুর

সন্ন্যাসী ঠাকুরের আশ্রমে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় শহর হইতে বহু লোক আসিতেন। তাঁহাদের কেহ কেহ সন্ন্যাসী ঠাকুরকে গান শুনাইতেন। তিনি গান বড় ভালোবাসিতেন। তিনি তান্ত্রিক সন্ন্যাসী ছিলেন বলিয়া এখানে প্রায়ই শ্যামা-বিষয়ক গান হইত। কয়েকটি গানের প্রথম পদ এখনও আমার মনে আছে,

(১) আয় মা সাধন সমরে, দেখি, মা হারে কি পুত্র হারে।

(২) এবার কালী তোমায় খাব, খাব খাব তোর মুণ্ডমালা চিবিয়ে খাব।

(৩) শ্মশান ভালোবাসিস বলে শ্মশান হৃদি।

(৪) ভক্তের কাঙাল ভবে চিরকাল ভক্ত আমার প্রাণের প্রাণ।

(৫) তারা তারা তারা বলে।

(৬) আগে পাছে দুঃখ চলে মা।

১১মিলি নীতীরে বসিয়া এইসব গানের যতগুলি কালি আমার মনে থাকিত একা একা গাহিয়া যাইতাম। সেকালে এরূপ বাগানের সুর আমি শিখিয়া ফেলিয়াছিলাম। সরাকা মাহিয়ার একজন চেলা ভালো গান গাহিতে পারিতেন। নাম মনে নাই। তিনি আমাকে কায়েকারী ভান শিখাইয়া দিয়াছিলেন। গানের জগতে আমার প্রথম হাতেখড়ি হইয়াছিল এইসব ভদ্রলোকি শশুরে-গানের মারফত। আজ ভাবিয়া আশ্চর্য হই, অপরিণত বয়সে এইসব ভদ্রলোকি গাি এমন বিরূপ সমালোচক আমি কি করিয়া হইয়া জ সামাজিক এবং ইতিহাসেরও মু প্রবিভিংকর প্র উপাখ্যান নিয়ে অনাড়ম্বর ও অরচিয়ে থাকা এ লাটের ভিত

একবার আমাদের এক ভগ্নীপতি পদ্মাপার হইতে আমাদের বাড়ি বেড়াইতে আসিলেন। তাঁহার সঙ্গে একখানা বিষাদসিন্ধু বই ছিল। তিনি সন্ন্যাসী ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করিয়া তাঁহার বড়ই অনুরক্ত হইয়া পড়িলেন। তাঁর সেই বিষাদসিন্ধু বইখানা ঠাকুরকে তিনি পড়িতে দিলেন। সেই বই পড়িতে পড়িতে সন্ন্যাসী ঠাকুর প্রায়ই চোখের জল মুছিতেন। এই পুস্তকের করুণ কাহিনী তাঁহাকে এতই প্রভাবিত করিয়াছিল যে, সন্ধ্যাবেলায় শহর হইতে ভক্তমণ্ডলী আসিলে তিনি প্রায়ই তাহাদের নিকট বিষাদসিন্ধুর কাহিনী বলিতেন। বলিতে বলিতে তাঁহার সঙ্গে তাঁহার শ্রোতাদেরও চক্ষু অশ্রুসিক্ত হইত।

সন্ন্যাসী ঠাকুর তান্ত্রিক সাধক ছিলেন। বৈষ্ণবদের মতো রাগ, হিংসা দমন করার শিক্ষা তাঁহার ছিল না। কোনো দুশ্চরিত্র লোক তাঁহার নিকট আসিলে তিনি তাহাকে বড়ই বকিতেন। এজন্য একদল লোক সন্ন্যাসী ঠাকুরের প্রতি বিরূপ হইয়া উঠিল। শহর হইতে বারবনিতাদের আনিয়া দুষ্টলোকেরা মাঝে মাঝে শ্মশানে আসিয়া মদ খাইত। সন্ন্যাসী ঠাকুর এখানে আশ্রম করায় তাহাদের পক্ষে বড়ই অসুবিধা হইল। সন্ন্যাসী ঠাকুর শহরে গেলে বহু স্ত্রীলোক তাঁহাকে দেখিতে আসিত। একবার সুহৃদদার শহরের বাড়িতে সন্ন্যাসী ঠাকুর রাত্র যাপন করেন। তখন শহরের বহু স্ত্রীপুরুষ তাঁহার উপদেশ শুনিতে আসেন। এমন সময় দুইটি লোক সন্ন্যাসী ঠাকুরকে তাঁহার চরিত্র লইয়া আপত্তিজনক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। ইহাতে সন্ন্যাসী ঠাকুর বড়ই রুষ্ট হইয়া পড়েন। শিষ্যেরা লোক দুইটিকে ঘাড় ধরিয়া সেখান হইতে বাহির করিয়া দেন।

 

চলবে…