আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
দাঁড়কাকের সঙ্গে সেই দেখা হওয়ার পর কয়েক মাস কেটে গেছে।
সালনিকভ সিট্রটে উচ্চ ধর্ম’ শিক্ষালয়ের প্রকাণ্ড বাড়িটার পাশেই ছিল বাগানওয়ালা একটা ছোট্ট বাড়ি। রাস্তার লোকে ওই বাড়ির খোলা জানলাগুলোর পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখতে পেত ঘন সিগারেটের ধোঁয়ার আড়ালে কিছু কিছু মুখের আনাগোনা। আর তারা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে জায়গাটা পেরিয়ে এসে, ওদের কানে কথাটা যাতে না-যায় সেদিক খেয়াল রেখে, রাগ দেখিয়ে থুথু ফেলে বলত:
‘উস্কুনিদাতাদের গুলুস্তানির জায়গা আর কি!
জায়গাটা ছিল বলশেভিকদের ক্লাব। শহরে মোটমাট জনাবিশেক বলশেভিক ছিলেন, কিন্তু ওই বাড়িটা সব সময়ে লোকে গিঙ্গিস করত। ওখানকার দোর অবিশ্যি সকলের জন্যেই খোলা ছিল, তবু সচরাচর যাঁরা ওখানে যেতেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন হাসপাতালে ভরতি-হওয়া সৈনিক, অস্ট্রিয়ান যুদ্ধবন্দী আর চামড়া কারখানা ও পশমী কাপড়ের কলের মজুররা।
বলতে গেলে, আমার পুরো অবসর সময়টাই আমি ওখানে কাটাতুম। নিছক কৌতূহলবশেই দাঁড়কাকের সঙ্গে প্রথমে ওখানে গিয়েছিলুম। তারপর যেতুম অভ্যেসবশে। আর তারও পরে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য আমাকে গ্রাস করে নিল ওই ঘূর্ণি’। আর মাথার মধ্যে যে-সব জঞ্জাল এতদিন ধরে জমা হয়ে ছিল ধারালো ছুরির ফলায় ছাড়ানো আলুর খোসার মতো তা খসে পড়ল।
গির্জে’র বিতর্ক সভায় কিংবা মহাজন-ব্যাপারীদের জমায়েতে আমাদের বলশেভিকরা বক্তৃতা দিতেন না। তাঁরা সভাসমিতির অনুষ্ঠান করতেন শ্রমিক-বস্তির ধারে-কাছে, শহরের বাইরে আর রণক্লান্ত গ্রামগুলোয়।
কামেন্কায় এমনি একটা সভার কথা আমার এখনও মনে পড়ে।