আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
অস্থায়ী সরকার যে কঠিন অবস্থার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে তার কথা বলল ও। বলল, জার্মানরা সমস্ত ফ্রন্টে চাপ দিচ্ছে, ওদিকে অশুভ শক্তিগুলো- জার্মান গুপ্তচর আর বলশেভিকরা ভিহেরে সপক্ষে প্রচার করে চলেছে।
‘আগে আমাদের দেশে ছিল জার নিকোলাস, এখন আসতে চাইছে ভিলহেল্ম। আপনারা কি আবার একজন জার চান?’ ও প্রশ্ন করল।
‘না-না, যথেষ্ট হয়েচে!’ ভিড়ের ভেতর থেকে কয়েক-শো গলা জবাব দিল।
কুগুলিকভ বলে চলল, ‘যুদ্ধ করে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বলুন, আমরা কি হয়রান হয়ে পড়ি নি? যুদ্ধ শেষ করে দেয়ার কি সময় হয় নি এখনও?’
‘হয়েচে, হয়েচে!’ জনতা এবার আগের চেয়েও একমত হয়ে সায় দিল।
চটে উঠে আমি দাঁড়কাকের কানে ফিসফিস করে বললুম, ‘ব্যাপারখানা কী, অন্যের কর্মসূচি নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে যে? ওরা তো যুদ্ধ থামাতে চায় না, চায় কি?’
দাঁড়কাক আমার পাঁজরে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘আহা, চুপ করে শোনই না।’
‘এস-আর’-এর লোকটি তখনও বলে চলেছে, ‘যুদ্ধ শেষ করার সময় হয়েছে, নয় কি? তাহলে, দেখছেন, আপনারা সকলে একবাক্যে এ-কথাই বলছেন তো। অথচ, দেখুন, বলশেভিকরা আমাদের এই রণক্লান্ত দেশটাকে জয়গৌরব নিয়ে যুদ্ধ
শেষ করার সুযোগ দিতে চায় না। ওরা সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিচ্ছে, তাই সেনাবাহিনী লড়াইয়ের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের যদি লড়াইয়ের যোগ্যতাসম্পন্ন সেনাদল থাকত তাহলে শত্রুকে চরম আঘাত হেনে জয়লক্ষত্রীকে আমরা ছিনিয়ে আনতুম আর সঙ্গে সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতুম। কিন্তু এখন আমরা শান্তিস্থাপন করতে পারছি না। এ কার দোষ? কার দোষে আমাদের ছেলে, ভাই, স্বামী, বাপ সব বাড়িঘরে ফিরে এসে শান্তিতে কাজকর্ম না করে রণক্ষেত্রে ট্রেন্ডে পচে মরছেন? আপনারাই বলুন, কে, কারা জয়কে সুদূরপরাহত করে তুলে লড়াইকে বছরের পূর বছর জাঁইয়ে রাখছে? আমরা, সোশ্যালিস্ট-রেভোলিউশনারিরা, গুরুত্ব দিয়ে ঘোষণা করছি: শত্রুর ওপর শেষ, চরম আঘাত দীর্ঘজীবী হোক, জার্মান শত্রুর বিরুদ্ধে বিপ্লবী সেনাবাহিনীর বিজয় দীর্ঘজীবী হোক, আর তার পরেই যুদ্ধ নিপাত যাক, শান্তি দীর্ঘজীবী হোক!’