আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
মাথোরকা তামাকের ধোঁয়ার কুয়াশার মধ্যে জনতা জোরে-জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এখান-ওখান থেকে সমর্থনসূচক চিৎকার কানে এল।
এবার হুগলিকভ বলতে শুরু করল সংবিধান-সভা সম্বন্ধে। বলল, ওই সভাই হবে দেশের সর্বময় কর্তা। তারপর ও বললে জমিদারী-সম্পত্তি খেয়ালখুশিমাফিক কেড়ে নেয়া সম্বন্ধে, শান্তি-শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখা সম্পর্কে আর অস্থায়ী সরকারের নির্দেশ আর হুকুমনামাগুলো প্রতিপালন করার বিষয়ে। শ্রোতাদের মনগুলোকে ও সূক্ষ্য জালে চমৎকার জড়িয়ে ফেলল। প্রথমে কুলিকভ বক্তৃতা দিল চাষীদের সপক্ষে, তাঁদের প্রয়োজনের কথাও তাঁদের আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল। আর জনতা যখন ‘শুনুন, শুনুন!’ ‘ঠিক বলেচেন মশায়!’ ‘অবস্তা এর চে’ আর কী খারাপ হতি পারে!’
এই সব বলে চিৎকার করে তাদের সমর্থন জানাচ্ছিল ক্রুগুলিকভ তখন অতি সন্তর্পণে, প্রায়-ধরা-যায়-না এমন সুক্ষভাবে, উল্টো কথা বলতে শুরু করল। তারপর একসময় হঠাৎ দেখা গেল, যে-জনতা একটু আগে ক্রুগুলিকভের সঙ্গে এ-ব্যাপারে একমত হয়েছিল যে জমি ছাড়া চাষীদের সত্যি- কার স্বাধীনতা আসতে পারে না, তাদেরই আবার এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছতে হচ্ছে যে একটা স্বাধীন দেশে জমিদারদের জমি কেড়ে নেওয়া চলতে পারে না।
অবশেষে ওর নদুই মিনিটের বক্তৃতা শেষ হল। প্রশংসাসূচক জোর গুঞ্জন উঠল চারদিকে। গুপ্তচর আর বলশেভিকদের উদ্দেশ্যে বর্ষিত হল আরেক দফা গালিগালাজ।
‘কুগুলিকভটার সঙ্গে আমাদের বাস্স্কাকভের কোনো তুলনাই হয় না,’ আমি ভাবলুম। ‘লোকটা কীভাবেই না সবাইকে খেপিয়ে তুলেছে।’
আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল বাস্স্কাকভ। অবাক হয়ে দেখলুম, ও দিব্যি পাইপ টেনে চলেছে, মঞ্চে ওঠার বিন্দুমাত্র ইচ্ছের লক্ষণ ওর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
গাড়িটার চারপাশে ভিড় করে দাঁড়ানো ‘এস-আর’-রাও বলশেভিকদের হাবভাব দেখে কিছুটা যেন ধাঁধায় পড়ে গেল। ওরা ভাবল, বলশেভিকরা বোধহয় কারো এসে পৌঁছনোর অপেক্ষায় আছে। কাজেই ওরা আরেকজন বক্তাকে ঝুলি থেকে বের করল। এই দ্বিতীয় বক্তাটি কিন্তু দেখা গেল কুলিকভের চেয়ে ঢের দুর্বল। মিনমিনে গলায় সে তোলাতে লাগল আর আগে যা বলা হয়েছে তার অনেকখানিই তোতাপাখির মতো ফিরেফিরতি বলে গেল। লোকটি নেমে যাওয়ার সময় হাততালিও পড়ল অনেক কম।
Sarakhon Report 



















