আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
ভালো কথা। এখন তোমরা বাড়ি যেয়ে লিজের লিজের পুজিপাটা গুনে দ্যাখো, জমি কেনার মতো যথেষ্ট সম্বল আছে কিনা হিসেব করি দ্যাখো। তাইলে, তোমাদের মতে বিপ্লব এইজন্যেই হয়েছিল জমিদারবাবুদের কাচ থেকে যাতে তোমরা লিজেদের জমি কিনে লিতে পার, তাইতো? আমোলো যা, জিজ্ঞেসা করি, এইজন্যেই আমরা বিপ্লব চেয়েছিলাম নাকি? বিপ্লব না হলি কি পয়সা খরচা করে লিজে জমি কেনা যেত না?’ জনতার মধ্যে থেকে ক্রুদ্ধ আর চিন্তিত কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘তা, তোমার ওই ‘দায়মুক্ত-হওয়া-বাবদ অর্থ’-এর ব্যাপারটা কী কও দেখি?’
‘ব্যাপারটা হল গিয়ে আর কিছুই লয় এ-ই’ পকেট থেকে একটা দোমড়ানো- মোচড়ানো ইস্তাহার বের করে বাস্কাকভ এবার পড়তে শুরু করে দিলে। ‘জমিদারদের অধীনস্থ যে-জমি কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া হবে তার জন্যে জমিদারদের ক্ষতিপুরণপ্রদান অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত দাবি’। একেই বলা হতে, দায়মুক্ত হওয়া বাবদ অর্থ’। এ কথা বলচে কাদেতদের পার্টি’, আর এই পার্টিও সংবিধান সভায় বসতে যাচ্চে। ওরাও ওদের লিজেদের পাত্তনাগড়া বুঝে লেয়ার জন্যি লড়বে। কিন্তু আমরা, বলশেভিকরা, রাখঢাক না করে খোলাখুলি কচ্চি: সংবিধান সভ্য বসার জন্যি ওপিক্ষে করি লাভ নেই, এখুনি, কোনোরকম আলোচনার কচকচির মধ্যি না গিয়ে, বায়নাক্কা না তুলে, দায়মুক্ত হওয়া বাবদ অর্থ’ ছাড়াই, এখুনি জমি দিয়ে দাও আমাদের। জমিদারদের যথেষ্ট দিয়েচি আমরা, আর লয়।’
‘হ্যাঁ, যথেষ্ট দিয়েচি!’ জনতার মধ্যে থেকে কয়েক শো গলার সাড়া মিলল। ‘চুলোয় যাক আলোচনার কচকচি! মনে লাগচে কিছুই জুটবে না আমাদের কপালে।’
‘আঃ, চুপ কর না কেন! বলশেভিকরে কইতে দাও! মনে নাগছে আরও নতুন কথা কিছু শোনায় বুঝি আমাদের।’
ব্যাপার-স্যাপার দেখে আমি হাঁ হয়ে গেছি তখন। আমাদের বাস্স্কাকভের জন্যে আনন্দে আর গর্বে বুকটা ভরে উঠেছে আমার।
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন দাঁড়কাক। তাঁর জামার হাতাটায় টান দিয়ে আমি প্রায় চে’চিয়ে উঠলুম, ‘সেমিওন ইভানোভিচ। ওকে কী-না-কী ভেবেছিলুম আমি। কী আশ্চর্য, ও তো বক্তৃতা পর্যন্ত করছে না, স্রেফ কথা বলছে ওদের সঙ্গে।’
‘আহা, কী চমৎকার লোক, কী চালাক লোক বাস্কাকভ!’ ধীরস্থির ভাবে ওর ছড়ে-ছড়ে-দেয়া ভারি-ভারি কথাগুলো উত্তেজিত জনতার মধ্যে দাঁড়িয়ে শুনতে শুনতে ভাবলুম আমি।