০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তান ২০২৫: জাতিকে অবশ্যই রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসান ও অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হবে

  • Sarakhon Report
  • ০৩:০০:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • 22

ফারহান বুখারী

পাকিস্তানের অস্থির রাজনীতি এবং এর অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্ট রূপরেখার অভাব আগামী দিনগুলোতেও দেশের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

ফলস্বরূপ, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের বর্তমান সরকারী কাঠামো এবং খানের নেতৃত্বাধীন বিরোধী পক্ষ বারবার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে—পার্লামেন্টের ভিতরে কথার লড়াই থেকে শুরু করে রাস্তায় শারীরিক সংঘর্ষ পর্যন্ত। সংক্ষেপে, দেশের অভ্যন্তরীণ তীব্র বিভাজন তার সামগ্রিক ভবিষ্যৎকেও কলুষিত করেছে।

সর্বশেষ এই ধরনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে মাত্র গত মাসে, যখন ইসলামাবাদে (পাকিস্তানের রাজধানী) খানের হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর ধাওয়ায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষে কতজন নিহত হয়েছে—তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে। পিটিআই কমপক্ষে ১২ জন সমর্থকের মৃত্যুর দাবি জানালেও সরকারপন্থী সংসদ সদস্যরা কোনো প্রাণহানির ঘটনা অস্বীকার করেছেন।

সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা বহুমুখীভাবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। রাজনৈতিক কোন্দলের বাইরেও এটি সরকারের সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে যে, দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অনিবার্য অক্ষমতার আশঙ্কা যখন প্রবল হচ্ছিল—শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির প্রতিধ্বনি তুলে—সেই সময় থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল।

বর্তমানে, পাকিস্তান সাময়িকভাবে খেলাপির ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছে। সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি অবশেষে নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটি আবারও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে। তবে এর বিনিময়ে কঠোর কিছু শর্ত মানতে হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য আগে নির্ধারিত বিশেষ কর-ছাড় সংবলিত সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বন্ধ করে দেওয়া। এই অঞ্চলগুলো চীন-নির্ভর চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপিইসি) একটি মুখ্য অংশ ছিল, যাকে একসময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রধান গুরুত্ব দেওয়া প্রকল্প হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল।

অতিরিক্ত শর্তের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো ইউটিলিটি চার্জ বৃদ্ধি করা এবং আরও বেশি পাকিস্তানিকে আয়করদাতা হওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা। যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম মানুষ করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত, সেখানে কর ব্যবস্থা সংস্কারে পাকিস্তানকে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়।

এই পদক্ষেপগুলো এমন এক বছরে এসেছে যখন পাকিস্তানের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের সামান্য নিচে থেকে গেছে, যা প্রায় সমান দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির পথ পরিবর্তন করতে হলে প্রধানমন্ত্রী শরিফকে অজনপ্রিয় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে—যেমন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ভূস্বামীদের আয়করদাতা হতে বাধ্য করা এবং কৃষি খাতের জন্য কর মওকুফের যে অনুশীলন প্রচলিত, তা বন্ধ করা।

গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যাও বেড়েছে। সরকার বলছে, এসব হামলার মূল হোতা আফগানিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানে আক্রমণ চালিয়ে সীমান্তের ওপারে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যায়।

এ মুহূর্তে স্পষ্ট যে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে সশস্ত্র হামলা মোকাবিলা করতে একটি জাতীয় ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। পাকিস্তান যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বড়াই করছে—যার মাধ্যমে দেশটি শ্রীলঙ্কার মতো ঋণ খেলাপির আশঙ্কা থেকে কিছুটা মুক্ত হয়েছে—তা এখনো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পথ তৈরি করেনি, যদিও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে সাময়িক কিছু উল্লম্ফন দেখা গেছে।

ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে হলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখাতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন করতে হবে, যাতে সারা দেশে শান্তি ফিরতে পারে। পাকিস্তান আর সংঘর্ষের পথ নিতে পারবে না, কারণ এটি দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে আরও ক্ষুণ্ন করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা থামানোর জন্য বিভিন্ন ফর্মুলা প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে—যেমন সকল দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সরকারের গঠন—কিন্তু কোনো ফর্মুলাই কার্যকর হবে না, যদি বর্তমানে বিদ্যমান তিক্ততার ইতি না ঘটে।

দ্বিতীয়ত, একটি নতুন জাতীয় অর্থনৈতিক রূপরেখা প্রয়োজন, যা বিকলপ্রায় কর ব্যবস্থা সংস্কার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত—এই দুই স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। গত বছরে সরকারের ব্যর্থ নীতির কারণে কৃষির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পাকিস্তানের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও অবনত হয়েছে। সমাজের কোনো খাতই, যত শক্তিশালী প্রভাবই থাকুক না কেন, আর বিশেষ সুবিধা পেতে পারে না। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নতুন উদ্যোগ কখনো সফল হবে না, যদি ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থকে সমগ্র সমাজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখা হয়।

সবশেষে, বছরের শেষ প্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান বেশ কিছু অনন্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা দেশটির আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমমান বজায় রাখতে লড়াইয়ের চিত্রই তুলে ধরে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত পোলিও নির্মূলকরণ কর্মসূচিতে সরকারি নেতারা এর গুরুত্ব ও সাফল্যের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। তবে কঠিন বাস্তবতা হলো, আফগানিস্তানের সঙ্গে একসারি কাতারে এখনও পাকিস্তান বিশ্বের মাত্র দুটি দেশের একটি, যেখানে শিশুদের প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত করা এই মারণ ভাইরাসটি এখনো ফিরে ফিরে আসে।

স্বয়ং-ঘোষিত একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে পাকিস্তান তার জনগণের কঠিন পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করতে পারে না—বিশেষ করে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এসব তীব্র চ্যালেঞ্জ দেশটির নেতাদের বৈশ্বিক পরিসরে পাকিস্তানের মর্যাদা উন্নীত করার উচ্চাশাকে আড়াল করে রেখেছে।

পাকিস্তান ২০২৫: জাতিকে অবশ্যই রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসান ও অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হবে

০৩:০০:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

ফারহান বুখারী

পাকিস্তানের অস্থির রাজনীতি এবং এর অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্ট রূপরেখার অভাব আগামী দিনগুলোতেও দেশের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

ফলস্বরূপ, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের বর্তমান সরকারী কাঠামো এবং খানের নেতৃত্বাধীন বিরোধী পক্ষ বারবার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে—পার্লামেন্টের ভিতরে কথার লড়াই থেকে শুরু করে রাস্তায় শারীরিক সংঘর্ষ পর্যন্ত। সংক্ষেপে, দেশের অভ্যন্তরীণ তীব্র বিভাজন তার সামগ্রিক ভবিষ্যৎকেও কলুষিত করেছে।

সর্বশেষ এই ধরনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে মাত্র গত মাসে, যখন ইসলামাবাদে (পাকিস্তানের রাজধানী) খানের হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর ধাওয়ায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষে কতজন নিহত হয়েছে—তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে। পিটিআই কমপক্ষে ১২ জন সমর্থকের মৃত্যুর দাবি জানালেও সরকারপন্থী সংসদ সদস্যরা কোনো প্রাণহানির ঘটনা অস্বীকার করেছেন।

সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা বহুমুখীভাবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। রাজনৈতিক কোন্দলের বাইরেও এটি সরকারের সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে যে, দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অনিবার্য অক্ষমতার আশঙ্কা যখন প্রবল হচ্ছিল—শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির প্রতিধ্বনি তুলে—সেই সময় থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল।

বর্তমানে, পাকিস্তান সাময়িকভাবে খেলাপির ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছে। সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি অবশেষে নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটি আবারও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে। তবে এর বিনিময়ে কঠোর কিছু শর্ত মানতে হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য আগে নির্ধারিত বিশেষ কর-ছাড় সংবলিত সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বন্ধ করে দেওয়া। এই অঞ্চলগুলো চীন-নির্ভর চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপিইসি) একটি মুখ্য অংশ ছিল, যাকে একসময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রধান গুরুত্ব দেওয়া প্রকল্প হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল।

অতিরিক্ত শর্তের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো ইউটিলিটি চার্জ বৃদ্ধি করা এবং আরও বেশি পাকিস্তানিকে আয়করদাতা হওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা। যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম মানুষ করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত, সেখানে কর ব্যবস্থা সংস্কারে পাকিস্তানকে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়।

এই পদক্ষেপগুলো এমন এক বছরে এসেছে যখন পাকিস্তানের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের সামান্য নিচে থেকে গেছে, যা প্রায় সমান দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির পথ পরিবর্তন করতে হলে প্রধানমন্ত্রী শরিফকে অজনপ্রিয় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে—যেমন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ভূস্বামীদের আয়করদাতা হতে বাধ্য করা এবং কৃষি খাতের জন্য কর মওকুফের যে অনুশীলন প্রচলিত, তা বন্ধ করা।

গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যাও বেড়েছে। সরকার বলছে, এসব হামলার মূল হোতা আফগানিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানে আক্রমণ চালিয়ে সীমান্তের ওপারে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যায়।

এ মুহূর্তে স্পষ্ট যে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে সশস্ত্র হামলা মোকাবিলা করতে একটি জাতীয় ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। পাকিস্তান যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বড়াই করছে—যার মাধ্যমে দেশটি শ্রীলঙ্কার মতো ঋণ খেলাপির আশঙ্কা থেকে কিছুটা মুক্ত হয়েছে—তা এখনো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পথ তৈরি করেনি, যদিও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে সাময়িক কিছু উল্লম্ফন দেখা গেছে।

ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে হলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখাতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন করতে হবে, যাতে সারা দেশে শান্তি ফিরতে পারে। পাকিস্তান আর সংঘর্ষের পথ নিতে পারবে না, কারণ এটি দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে আরও ক্ষুণ্ন করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা থামানোর জন্য বিভিন্ন ফর্মুলা প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে—যেমন সকল দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সরকারের গঠন—কিন্তু কোনো ফর্মুলাই কার্যকর হবে না, যদি বর্তমানে বিদ্যমান তিক্ততার ইতি না ঘটে।

দ্বিতীয়ত, একটি নতুন জাতীয় অর্থনৈতিক রূপরেখা প্রয়োজন, যা বিকলপ্রায় কর ব্যবস্থা সংস্কার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত—এই দুই স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। গত বছরে সরকারের ব্যর্থ নীতির কারণে কৃষির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পাকিস্তানের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও অবনত হয়েছে। সমাজের কোনো খাতই, যত শক্তিশালী প্রভাবই থাকুক না কেন, আর বিশেষ সুবিধা পেতে পারে না। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নতুন উদ্যোগ কখনো সফল হবে না, যদি ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থকে সমগ্র সমাজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখা হয়।

সবশেষে, বছরের শেষ প্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান বেশ কিছু অনন্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা দেশটির আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমমান বজায় রাখতে লড়াইয়ের চিত্রই তুলে ধরে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত পোলিও নির্মূলকরণ কর্মসূচিতে সরকারি নেতারা এর গুরুত্ব ও সাফল্যের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। তবে কঠিন বাস্তবতা হলো, আফগানিস্তানের সঙ্গে একসারি কাতারে এখনও পাকিস্তান বিশ্বের মাত্র দুটি দেশের একটি, যেখানে শিশুদের প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত করা এই মারণ ভাইরাসটি এখনো ফিরে ফিরে আসে।

স্বয়ং-ঘোষিত একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে পাকিস্তান তার জনগণের কঠিন পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করতে পারে না—বিশেষ করে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এসব তীব্র চ্যালেঞ্জ দেশটির নেতাদের বৈশ্বিক পরিসরে পাকিস্তানের মর্যাদা উন্নীত করার উচ্চাশাকে আড়াল করে রেখেছে।