শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাঁহারা অযোধ্যার বেগম ও চেৎ সিংহের প্রতি পাশৰ অত্যাচারের বিবরণের সহিত বঙ্গদেশের হতভাগ্য জমিদারদিগের প্রতি অবিচারের কথাও উল্লেখ করিতে বিস্তৃত হন নাই এবং তৎসঙ্গে সঙ্গে হেষ্টিংস সাহেবের প্রিয় কান্তের উদরপূরণের কথাটিও উল্লিখিত হইয়া- ছিল। হেষ্টিংস সাহেবের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উপস্থিত হয়, তন্মধ্যে পঞ্চদশ অভিযোগে কান্ত বাবুকে অন্যায়রূপে জমিদারী দেওয়ার কথা দেখিতে পাওয়া যায়।
উক্ত অভিযোগের মর্ম্ম এই;- পূর্ব্বকথিত গবর্ণর জেনেরাল তাঁহার নিজ বেনিয়ান বা প্রধান কালা কর্মচারী কান্ত বাবুকে বৎসরে ১৩ লক্ষ টাকায় ভিন্ন ভিন্ন পরগণার জমিদারী বা জমিদারীর জামীন হইতে দিয়াছেন এবং দুই বৎসর পরে তাহাদের মধ্যে দুইটি পরগণা অলাভকর বলিয়া পরিত্যাগ করিতে অনু- মতি দিয়াছেন। উক্ত অভিযোগের একস্থলে এইরূপ লিখিত আছে যে, ওয়ারেন হেষ্টিংস ডিরেক্টারদিগের আদেশের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কোন কোন জমিদারকে চিরস্থায়িরূপ জমিদারীর বন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছেন এবং বিশেষতঃ কান্তবাবুকে অতি অল্প বন্দোবস্তে বাহারবন্দ প্রদান করিয়াছেন।
সর্ব্বাপেক্ষ। মহামতি বার্ক এই বিষয় লইয়া অধিক আন্দোলন করিয়া- ছিলেন। বিচার-সমিতির পঞ্চম অধিবেশনে ১৭৮৮ খৃঃ অব্দের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তিনি বঙ্গদেশের জমিদারদিগের উপর হেষ্টিংস সাহেবের অবৈধ অত্যাচারের কথা উল্লেখ করেন এবং তাহাতে স্পষ্টই বলিয়া- ছিলেন যে, হেষ্টিংস সাহেব প্রকাশ্যভাবে জমিদারদিগের জমিদারী নীলাম করিয়া, কলিকাতার বেনিয়ানদিগকে তাহা প্রদান করিতেন।
সর্ব্বাপেক্ষা কান্ত বাবুই অধিক পরিমাণে এই সুবিধা ভোগ করেন। যদিও কোম্পানীর কর্মচারিগণের বেনিয়ান প্রভৃতি কোনরূপ জমিদারী বা মহালের ইজারা লইতে পাইত না এবং কাহাকেও বার্ষিক ১ লক্ষ টাকার অধিক রাজস্বে বন্দোবস্ত করার নিয়ম ছিল না, তথাপি তিনি সেই সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করিয়া নিজ বেনিয়ানকে বার্ষিক ১৩ লক্ষ টাকার রাজস্ব বন্দোবস্তে নানাস্থানের জমিদারী প্রদান করিয়াছেন।