শ্রী নিখিলনাথ রায়
বিচার-সমিতির ষষ্ঠ দিবসের অধিবেশনে ১৭৮৮ খৃঃ অব্দের ১৯শে ফেব্রুয়ারি মহামনস্বী বার্ক, বাহারবন্দের কথা উল্লেখ করিয়া, বলিয়াছিলেন যে, হেষ্টিংস সাহেব অন্তায়পূর্ব্বক বাঙ্গলাদেশের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বংশের মাননীয়া প্রবীণা রমণী রাণী ভবানীর নিকট হইতে বাহারবন্দ লইয়া কান্ত বাবুর পুত্র লোকনাথকে প্রদান করেন। হেষ্টিংস ইহার এইরূপ কারণ নির্দেশ করেন যে, রাণী উক্ত জমিদারী পরিচালনে অসমর্থা।
মহামতি বার্ক কোন সাক্ষীর প্রমুখাৎ অবগত হন যে, হেষ্টিংস সাহেব ৮২,০০০ বা ৮৩,০০০ টাকার রাজস্ব বন্দোবস্তে বাহারবন্দ লোকনাথকে প্রদান করেন; কিন্তু উক্ত পরগণাতে প্রকৃত যে টাকা আদায় হইত, তাহা অনেক অধিক। কত টাকায় বাহারবন্দের বন্দোবস্ত হয়, আমরা পূর্ব্বেই সে কথার উল্লেখ করিয়াছি। লোকনাথের দর-ইজারাদারগণের সহিত বাহারবন্দ হইতে এক বৎসরে ৩,৫৩,০০০ টাকারও অধিক আদায় করিবার বন্দোবস্ত হয়; প্রজারা ইহাতে আপত্তি করিয়াছিল।
প্রায় সহস্র প্রজা দলবদ্ধ হইয়া কলিকাতার রাজস্ব-সমিতির নিকট আবে- দনের জন্য গমন করে; তাহারা কাশীমবাজারে উপস্থিত হইলে, কান্ত বাবুর ভ্রাতা নৃসিংহ বাবু তাহাদিগকে ক্ষান্ত করিয়া, আপোষে নিষ্পত্তি করিয়া লন। হেষ্টিংস অন্যায়পূর্ব্বক রাণী ভবানীর নিকট হইতে যে বাহারবন্দ লইয়া কান্ত বাবুকে দিয়াছিলেন, বার্ক ভুয়োভূয়ঃ তাহার উল্লেখ করেন। তিনি হেষ্টিংসের ভীষণ চরিত্রের কথা ব্রিটিশ জাতির হৃদয়ে বদ্ধমূল করিবার জন্য অশেষ প্রকারে চেষ্টা পাইয়াছিলেন।
পঞ্চপঞ্চাশত্তম দিবসের অধিবেশনে ১৭৯০ খৃঃ অঃ ১৬ই ফেব্রুয়ারি মহাহতি আনস্ট্রুথার হেষ্টিংসের উৎকোচাদিগ্রহণের আলোচনাপ্রসঙ্গে কোম্পানীর কর্মচারিগণের বেনিয়ানদিগের সহিত জমিদারী বন্দোবস্তের কথা উল্লেখ করিয়া বলেন যে, জমিদারদিগকে বিদূরিত করিয়া হেষ্টিংস বেনিয়ানদিগকে সেই সমত্ত জমিদারী দিয়া, রাজস্ব-সংক্রান্ত বিধির লঙ্ঘন, ও কর্তৃপক্ষগণের অবমাননা করিয়াছেন।