ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
অনেকেই তাঁকে খুশী করবার চেষ্টা করতো, কিন্তু তারা যে কোনো প্রকার নৈপুণ্যের সংগে তা করতো, এমনটি কই আমার চোখে পড়ে নি। বিশ্বজনীন তিতিক্ষা, প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম, যিশুর জীবন- লীলা, বৌদ্ধধর্ম, তাঁর এই সকল সুঅভ্যন্ত বিষয়গুলি সম্বন্ধে তিনি আমার সংগে কদাচিৎ কখনো আলাপ করতেন। কারণ, তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলেন, ওই সব বিষয় আমার পক্ষে বড়ো একটা ‘কার্যকরী’ হবে না। তাঁর এই কাজটির আমি প্রশংসা করি।
তিনি ইচ্ছা করলেই অসাধারণ রকমের অমায়িক, অনুভূতিশীল এবং বিচক্ষণ হ’য়ে উঠতে পারতেন; তাঁর আলাপ-আলোচনাগুলি এমন সরল এবং সুরুচিসম্পন্ন ছিল যে, মানুষকে তা সহজেই মুগ্ধ করতো। তবে মাঝে মাঝে তাঁর মন্তব্যগুলি পীড়াদায়ক-ও হ’তো। মেয়েদের সম্বন্ধে তাঁর মতামতগুলি আমি আদৌ পছন্দ করতাম না-অকথ্য রকমের গ্রাম্য ছিল সেগুলি।
আর তাঁর কথাগুলির মধ্যে এমন একটা জিনিষ থাকতো, যা ছিল কৃত্রিম, কপট, এবং সেই সংগে অত্যন্ত ব্যক্তিগত। মনে হোতো, তিনি যেন কখনো আঘাত পেয়েছিলেন, এবং সেই আঘাতটাকে তিনি কখনো ভুলতে বা ক্ষমা করতে পারেন নি। একদিন সন্ধ্যায়, যেদিন তাঁর সংগে আমার প্রথম পরিচয় হোলো, আমাকে তিনি তাঁর পড়ার ঘরে নিয়ে গেলেন-সেটা ছিল মস্কাও এ, খামোভনিকিতে- তারপর নিজের সামনে বসিয়ে ‘ভারিয়েংকা ওলিয়েসোভ।’ এবং ‘ছাব্বিশ ও এক’ সম্বন্ধে আলাপ করতে লাগলেন।
আমি তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে বিব্রত বিভ্রান্ত হ’য়ে গেলাম। অত্যন্ত সরল এবং নিষ্ঠুরভাবে তিনি কথাগুলি ব’লে গেলেন। বললেন, “কোনো স্বাস্থ্যবতী মেয়ের পক্ষে কুমারীত্বটা স্বাভাবিক বস্তু নয়। কোনো মেয়ে যখন পনেরো বছরে পা দেয়, এবং সে যদি সুস্থ হয়, তবে সে কামনা করে, কেউ তাকে স্পর্শ করুক, আলিংগন করুক। তখনো তার কাছে যা অজ্ঞাত, যা দুর্বোধ্য, সে- সম্বন্ধে ভীরু থাকে তার মন-আর এই ভীরুতাকে লোক বলে কুমারীত্ব, শুদ্ধি।
কিন্তু তার দেহের রক্তমাংস ইতিপূর্বেই সচেতন হ’য়ে ওঠে যে, তার কাছে যা দুর্বোধ্য, তাই হোলো ন্যায়সংগত, নিয়মসংগত, এবং তার মনের বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও সে তীব্রভাবে কামনা করে, এই নিয়মের দাবী পূর্ণ করতে। তুমি ভারিয়েংকা ওলিয়েসোভাকে বর্ণনা করেছ হুস্থ ব’লে। কিন্তু তার মনোভাবটা হোলো রক্তাল্পতা-রোগগ্রন্থ মানুষের মতো-তাই জীবনে সে সত্যি নয়।”