০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৫১)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • 16

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

তারপর তিনি দরজা পর্যন্ত আমার সংগে এসে আমার সংগে কোলাকোলি ক’রে, আমার চুমু খেয়ে বললেন, “তুমি একজন সত্যিকারের মুঝিক (চাষা); লেখকদের সংগে বাস করা তোমার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে। কিন্তু সেজন্যে ভয় পেয়োনা। যা অনুভব করবে, তাই বলবে, হোক তা কঠোর-আসে যায় না। যাদের বুদ্ধি আছে, তারা বুঝবে।”

এই প্রথম সাক্ষাতে দুটি বিষয় আমার মনে রেখাপাত করেছিল। টলস্টয়কে দেখে আমি গর্ব এবং আনন্দ বোধ করেছিলাম; কিন্তু তাঁর সংগে আলাপটা আমার কতোকটা শওয়াল-জবাবের মতো মনে হয়েছিল এবং, এক অর্থে বলা যেতে পারে, তাঁর মধ্যে আমি ‘কশাক’, ‘খোলস্ত- নিয়ের’ এবং ‘যুদ্ধ ও শান্তি’র লেখকের সাক্ষাৎ পাই নি।

পেয়েছিলাম একজন ‘বারিনের’ (বাবুর), যিনি আমার প্রতি রূপাপরবশ হ’য়ে জনসাধারণের ভাষায় কথা বলা প্রয়োজন ব’লে ভেবেছিলেন-জন- সাধারণের ভাষা, অর্থাৎ অলিগলির ও হাট-বাজারের ভাষা। ব্যাপারটা তাঁর সম্পর্কে আমার ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিলো-যে ধারণ। দীর্ঘকাল ধ’রে আমার গভীরে মূল সঞ্চারিত করেছিল, যে ধারণা আমার কাছে হ’য়ে উঠেছিল একান্ত প্রিয়।

তাঁর সংগে আবার আমার দেখা হয় ইয়াসনাইয়া পলিয়ানাতে। শরতের মেঘাচ্ছন্ন একটি দিন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তাঁর গায়ে মোটা একটা ওভারকোট, পায়ে হাঁটুভর চামড়ার জুতো। তিনি আমাকে সংগে নিয়ে জংগলের দিকে বেড়াতে চললেন। নালা-নর্দমাগুলো তিনি ছোটো ছেলের মতো লাফ দিয়ে পার হলেন, গাছের ডাল-পালা নেড়ে ঝরিয়ে দিলেন বৃষ্টির ফোঁটাগুলো।

তারপর সেখানে বসে আমাকে প্রাঞ্জল ভাবে ব্যাখ্যা করে জানালেন, ফেট শোফেনহাউয়ের সম্পর্কে কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বার্চগাছের মখমলের মতন ভেজা গুড়িতে তাঁর হাতের সস্নেহ মৃদু আঘাত দিয়ে তিনি বললেন, “সম্প্রতি আমি একটা কবিতা পড়েছিলাম:

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৫১)

০৪:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

তারপর তিনি দরজা পর্যন্ত আমার সংগে এসে আমার সংগে কোলাকোলি ক’রে, আমার চুমু খেয়ে বললেন, “তুমি একজন সত্যিকারের মুঝিক (চাষা); লেখকদের সংগে বাস করা তোমার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে। কিন্তু সেজন্যে ভয় পেয়োনা। যা অনুভব করবে, তাই বলবে, হোক তা কঠোর-আসে যায় না। যাদের বুদ্ধি আছে, তারা বুঝবে।”

এই প্রথম সাক্ষাতে দুটি বিষয় আমার মনে রেখাপাত করেছিল। টলস্টয়কে দেখে আমি গর্ব এবং আনন্দ বোধ করেছিলাম; কিন্তু তাঁর সংগে আলাপটা আমার কতোকটা শওয়াল-জবাবের মতো মনে হয়েছিল এবং, এক অর্থে বলা যেতে পারে, তাঁর মধ্যে আমি ‘কশাক’, ‘খোলস্ত- নিয়ের’ এবং ‘যুদ্ধ ও শান্তি’র লেখকের সাক্ষাৎ পাই নি।

পেয়েছিলাম একজন ‘বারিনের’ (বাবুর), যিনি আমার প্রতি রূপাপরবশ হ’য়ে জনসাধারণের ভাষায় কথা বলা প্রয়োজন ব’লে ভেবেছিলেন-জন- সাধারণের ভাষা, অর্থাৎ অলিগলির ও হাট-বাজারের ভাষা। ব্যাপারটা তাঁর সম্পর্কে আমার ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিলো-যে ধারণ। দীর্ঘকাল ধ’রে আমার গভীরে মূল সঞ্চারিত করেছিল, যে ধারণা আমার কাছে হ’য়ে উঠেছিল একান্ত প্রিয়।

তাঁর সংগে আবার আমার দেখা হয় ইয়াসনাইয়া পলিয়ানাতে। শরতের মেঘাচ্ছন্ন একটি দিন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তাঁর গায়ে মোটা একটা ওভারকোট, পায়ে হাঁটুভর চামড়ার জুতো। তিনি আমাকে সংগে নিয়ে জংগলের দিকে বেড়াতে চললেন। নালা-নর্দমাগুলো তিনি ছোটো ছেলের মতো লাফ দিয়ে পার হলেন, গাছের ডাল-পালা নেড়ে ঝরিয়ে দিলেন বৃষ্টির ফোঁটাগুলো।

তারপর সেখানে বসে আমাকে প্রাঞ্জল ভাবে ব্যাখ্যা করে জানালেন, ফেট শোফেনহাউয়ের সম্পর্কে কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বার্চগাছের মখমলের মতন ভেজা গুড়িতে তাঁর হাতের সস্নেহ মৃদু আঘাত দিয়ে তিনি বললেন, “সম্প্রতি আমি একটা কবিতা পড়েছিলাম: