০২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৩০)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • 16

আর্কাদি গাইদার

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

আমার বাবার ব্যাপারটা সকলে প্রায় ভুলতে বসেছিল আর আমার ও বন্ধুদের মধ্যে ওই ব্যাপার নিয়ে যে-সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটেছিল তা আবার জোড়া লাগার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছিল, এমন সময় রাজধানী থেকে এই নতুন পরিবর্তনের হাওয়া এসে লাগল গাঁয়ে। আমাদের শহরের বাসিন্দারা বলশেভিকদের ওপর হঠাৎ সাংঘাতিক খেপে উঠল। ক্লাবটাকে তারা দিলে বন্ধ করে।
মিউনিসিপ্যালিটির অধীনস্থ স্থানীয় সামরিক বাহিনী বাস্কাকভকে গ্রেপ্তার করল। আর ইশকুলে এজন্যে যত দোষ সব এসে পড়ল আমার ঘাড়ে। কেন আমি বলশেভিকদের সঙ্গে অত মেশামেশি করেছি, মে-দিবসে কেন আমি ওদের ক্লাবঘরের ছাদের ওপর পতাকা টাঙিয়েছি, কেন আমি কামেনকার সেই সভায় যুদ্ধকে জয়যুক্ত করার আবেদন জানিয়ে ফেন্দকার-দেয়া ইস্তাহারগুলো বিলি করতে অশ্বীকার করেছি, এই সব অভিযোগ।
আমাদের ইশকুলের সব ছেলেই তখন ইস্তাহার বিলি করত। ওদের মধ্যে কেউ- কেউ আবার যে কারো ইস্তাহার পেলেই মহা খুশি হয়ে গোছা গোছা তাই নিয়ে রাস্তায় ছুটোছুটি করে এর-ওর-তার হাতে গুঁজে দিতে থাকত। তা সে ইস্তাহার কাদেত, নৈরাজ্যবাদী, খাস্টিয়ান সোশ্যালিস্ট কিংবা বলশেভিক যারই হোক না কেন। অথচ এটা যেন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার এমন ভাব করে ওই ছেলেগুলোকে কেউ কিছু বলল না। কেবল আমারই হল যত দোষ! যাঃ বাবা!
কিন্তু কামেন্‌কার ওই সভায় আমি ফেক্কার দেয়া ‘এস-আর’দের ইস্তাহার বিলি করতুমই বা কী করে? বাস্কাকভ যে তার আগেই তার একগাদা ইস্তাহার দিয়ে আমায় বিলি করতে বলেছিল। একই সঙ্গে দুই পার্টির ইস্তাহার কি বিলি করা সম্ভব? তবু যদি ইস্তাহার দুটোর বক্তব্য এক ধরনের হত তাহলেও না হয় কথা ছিল। কিন্তু ওর একটায় যেখানে বলা হচ্ছিল ‘জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের গৌরব দীর্ঘজীবী হোক’, সেখানে অপরটা বলছিল, ‘লুঠেরা যুদ্ধ ধ্বংস হোক’।
একটা বলছিল, ‘অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন কর’, আর অন্যটা ডাক দিচ্ছিল সরকারের ‘দশজন পুঁজিবাদী মন্ত্রী ধ্বংস হোক’ বলে। কাজেই, কী করে তখন দুটো ইস্তাহার একসঙ্গে বিলি করা সম্ভব হত, বিশেষ করে যখন একটা ইস্তাহার অপরটাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিচ্ছিল?

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৩০)

০৮:০০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

আমার বাবার ব্যাপারটা সকলে প্রায় ভুলতে বসেছিল আর আমার ও বন্ধুদের মধ্যে ওই ব্যাপার নিয়ে যে-সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটেছিল তা আবার জোড়া লাগার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছিল, এমন সময় রাজধানী থেকে এই নতুন পরিবর্তনের হাওয়া এসে লাগল গাঁয়ে। আমাদের শহরের বাসিন্দারা বলশেভিকদের ওপর হঠাৎ সাংঘাতিক খেপে উঠল। ক্লাবটাকে তারা দিলে বন্ধ করে।
মিউনিসিপ্যালিটির অধীনস্থ স্থানীয় সামরিক বাহিনী বাস্কাকভকে গ্রেপ্তার করল। আর ইশকুলে এজন্যে যত দোষ সব এসে পড়ল আমার ঘাড়ে। কেন আমি বলশেভিকদের সঙ্গে অত মেশামেশি করেছি, মে-দিবসে কেন আমি ওদের ক্লাবঘরের ছাদের ওপর পতাকা টাঙিয়েছি, কেন আমি কামেনকার সেই সভায় যুদ্ধকে জয়যুক্ত করার আবেদন জানিয়ে ফেন্দকার-দেয়া ইস্তাহারগুলো বিলি করতে অশ্বীকার করেছি, এই সব অভিযোগ।
আমাদের ইশকুলের সব ছেলেই তখন ইস্তাহার বিলি করত। ওদের মধ্যে কেউ- কেউ আবার যে কারো ইস্তাহার পেলেই মহা খুশি হয়ে গোছা গোছা তাই নিয়ে রাস্তায় ছুটোছুটি করে এর-ওর-তার হাতে গুঁজে দিতে থাকত। তা সে ইস্তাহার কাদেত, নৈরাজ্যবাদী, খাস্টিয়ান সোশ্যালিস্ট কিংবা বলশেভিক যারই হোক না কেন। অথচ এটা যেন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার এমন ভাব করে ওই ছেলেগুলোকে কেউ কিছু বলল না। কেবল আমারই হল যত দোষ! যাঃ বাবা!
কিন্তু কামেন্‌কার ওই সভায় আমি ফেক্কার দেয়া ‘এস-আর’দের ইস্তাহার বিলি করতুমই বা কী করে? বাস্কাকভ যে তার আগেই তার একগাদা ইস্তাহার দিয়ে আমায় বিলি করতে বলেছিল। একই সঙ্গে দুই পার্টির ইস্তাহার কি বিলি করা সম্ভব? তবু যদি ইস্তাহার দুটোর বক্তব্য এক ধরনের হত তাহলেও না হয় কথা ছিল। কিন্তু ওর একটায় যেখানে বলা হচ্ছিল ‘জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের গৌরব দীর্ঘজীবী হোক’, সেখানে অপরটা বলছিল, ‘লুঠেরা যুদ্ধ ধ্বংস হোক’।
একটা বলছিল, ‘অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন কর’, আর অন্যটা ডাক দিচ্ছিল সরকারের ‘দশজন পুঁজিবাদী মন্ত্রী ধ্বংস হোক’ বলে। কাজেই, কী করে তখন দুটো ইস্তাহার একসঙ্গে বিলি করা সম্ভব হত, বিশেষ করে যখন একটা ইস্তাহার অপরটাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিচ্ছিল?