০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
অক্ষরের রহস্য: কেন ‘Q’-এর প্রয়োজন ‘U’ — ভাষার আত্মার এক বিস্ময়কর ইতিহাস নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন” ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫২) শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত: ডিএসই-তে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৩১)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • 38

আর্কাদি গাইদার

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

ওই সময়ে ইশকুলে পড়াশুনো হচ্ছিল সামান্যই। শিক্ষকরা সব সময়েই ক্লাবের সভ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা ছিলেন কট্টর রাজতন্ত্রী, তাঁরা আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। তা ছাড়া রেড ক্রশ সমিতি ইশকুলের অর্ধেকটা দখল করেছিল।
মাঝেমাঝেই মা-কে শোনাতুম তখন, ‘মা, আমি কিন্তু ইশকুল ছেড়ে দেব। এখন তো আর ইশকুলে পড়াশুনো হচ্ছে না, তাছাড়া সকলের সঙ্গেই এখন আমার শত্রুতা। এই তো গত কালই কোরেনেভ যুদ্ধে আহতদের সাহায্যের জন্যে একটা কাপে চাঁদা তুলছিল। আমার কাছে বিশ কোপেক ছিল, আমি কাপে ফেলতেই ও একেবারে ভুরু-টুর, কুচকে বললে: ‘হঠকারীদের কাছ থেকে আমার দেশ ভিক্ষা চায় না’।
মনে হল, নিজের ঠোঁটটা কামড়ে রক্ত বের করে ফেলি। সকলের সামনে কিনা এমন কথা বললে। বললুম, ‘আমি না হয় যুদ্ধ-পলাতকের ছেলে। কিন্তু তুই কী? তুই তো চোরের ব্যাটা। তোর বাবা তো ঠিকেদারি করে মিলিটারি ঠকিয়ে খায়। আহতদের জন্যে চাঁদা তুলে তুইও না জানি কত সরাবি এ থেকো। ব্যস, আমাদের মধ্যে মারামারি বেধে যায় আর কী। কয়েক দিনের মধ্যেই নাকি আদালত বসবে এ নিয়ে। বসুক গে, কে পরোয়া করে! হাঁ, ওঁরা নাকি সব আবার বিচারক। মর ব্যাটারা, উনুনের ছাই খা গে’ যা!’
বাবার দেয়া পিস্তলটা সব সময়ে সঙ্গে-সঙ্গে রাখতুম আমি। জিনিসটা ছিল ছোট্ট আর ওটাকে সঙ্গে বয়ে-বেড়ানো ছিল ভারি সুবিধের। নরম শ্যামোয়া-চামড়ার একটা খাপে ভরে রাখতুম ওটাকে। আত্মরক্ষার জন্যে যে আমি ওটা বয়ে বেড়াতুম তা নয়। কারণ, তখনও পর্যন্ত কেউ আমার ওপর হামলা করে নি, কিংবা তা করার চেষ্টাও করে নি। কিন্তু পিস্তলটা বাবার স্মৃতিচিহ্ন, বাবার দেয়া উপহার বলে আমার বড় প্রিয় ছিল। আমার একমাত্র মূল্যবান সম্পত্তি বলতে ছিল ওটাই।
মাওজারটাকে আমার পছন্দ হওয়ার আরেকটা কারণ ছিল এই যে ওটা সঙ্গে থাকলে আমি কেমন যেন একটা রোমাণ্ড, একটা গর্ব অনুভব করতুম। তাছাড়া তখন আমার বয়েস ছিল মাত্র পনেরো বছর, আর ওই বয়েসের একটা ছেলে একটা আন্ত আসল রিভলবার হাতে পেলে ছেড়ে দেবে, এমন কথা তো কখনও শুনি নি। আর একটি লোক যে আমার মাওজারটার কথা জানত সে হল ফেক্কা। যখন আমরা দু-জন বন্ধ ছিলুম তখন একদিন ওকে আমার জিনিসটা দেখিয়েছিলুম। বাবার দেয়া উপহারটা সযত্নে পরীক্ষা করতে-করতে আমার ওপর ওর হিংসে যে কতদূর বেড়ে উঠেছিল তা সেদিনই বুঝেছিলুম।

জনপ্রিয় সংবাদ

অক্ষরের রহস্য: কেন ‘Q’-এর প্রয়োজন ‘U’ — ভাষার আত্মার এক বিস্ময়কর ইতিহাস

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৩১)

০৮:০০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

ওই সময়ে ইশকুলে পড়াশুনো হচ্ছিল সামান্যই। শিক্ষকরা সব সময়েই ক্লাবের সভ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা ছিলেন কট্টর রাজতন্ত্রী, তাঁরা আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। তা ছাড়া রেড ক্রশ সমিতি ইশকুলের অর্ধেকটা দখল করেছিল।
মাঝেমাঝেই মা-কে শোনাতুম তখন, ‘মা, আমি কিন্তু ইশকুল ছেড়ে দেব। এখন তো আর ইশকুলে পড়াশুনো হচ্ছে না, তাছাড়া সকলের সঙ্গেই এখন আমার শত্রুতা। এই তো গত কালই কোরেনেভ যুদ্ধে আহতদের সাহায্যের জন্যে একটা কাপে চাঁদা তুলছিল। আমার কাছে বিশ কোপেক ছিল, আমি কাপে ফেলতেই ও একেবারে ভুরু-টুর, কুচকে বললে: ‘হঠকারীদের কাছ থেকে আমার দেশ ভিক্ষা চায় না’।
মনে হল, নিজের ঠোঁটটা কামড়ে রক্ত বের করে ফেলি। সকলের সামনে কিনা এমন কথা বললে। বললুম, ‘আমি না হয় যুদ্ধ-পলাতকের ছেলে। কিন্তু তুই কী? তুই তো চোরের ব্যাটা। তোর বাবা তো ঠিকেদারি করে মিলিটারি ঠকিয়ে খায়। আহতদের জন্যে চাঁদা তুলে তুইও না জানি কত সরাবি এ থেকো। ব্যস, আমাদের মধ্যে মারামারি বেধে যায় আর কী। কয়েক দিনের মধ্যেই নাকি আদালত বসবে এ নিয়ে। বসুক গে, কে পরোয়া করে! হাঁ, ওঁরা নাকি সব আবার বিচারক। মর ব্যাটারা, উনুনের ছাই খা গে’ যা!’
বাবার দেয়া পিস্তলটা সব সময়ে সঙ্গে-সঙ্গে রাখতুম আমি। জিনিসটা ছিল ছোট্ট আর ওটাকে সঙ্গে বয়ে-বেড়ানো ছিল ভারি সুবিধের। নরম শ্যামোয়া-চামড়ার একটা খাপে ভরে রাখতুম ওটাকে। আত্মরক্ষার জন্যে যে আমি ওটা বয়ে বেড়াতুম তা নয়। কারণ, তখনও পর্যন্ত কেউ আমার ওপর হামলা করে নি, কিংবা তা করার চেষ্টাও করে নি। কিন্তু পিস্তলটা বাবার স্মৃতিচিহ্ন, বাবার দেয়া উপহার বলে আমার বড় প্রিয় ছিল। আমার একমাত্র মূল্যবান সম্পত্তি বলতে ছিল ওটাই।
মাওজারটাকে আমার পছন্দ হওয়ার আরেকটা কারণ ছিল এই যে ওটা সঙ্গে থাকলে আমি কেমন যেন একটা রোমাণ্ড, একটা গর্ব অনুভব করতুম। তাছাড়া তখন আমার বয়েস ছিল মাত্র পনেরো বছর, আর ওই বয়েসের একটা ছেলে একটা আন্ত আসল রিভলবার হাতে পেলে ছেড়ে দেবে, এমন কথা তো কখনও শুনি নি। আর একটি লোক যে আমার মাওজারটার কথা জানত সে হল ফেক্কা। যখন আমরা দু-জন বন্ধ ছিলুম তখন একদিন ওকে আমার জিনিসটা দেখিয়েছিলুম। বাবার দেয়া উপহারটা সযত্নে পরীক্ষা করতে-করতে আমার ওপর ওর হিংসে যে কতদূর বেড়ে উঠেছিল তা সেদিনই বুঝেছিলুম।