০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে চীনের সঙ্গে একই পথে হাঁটছে পশ্চিমা বিশ্ব পোল্যান্ডের বনে বিরল কালো নেকড়ের ক্যামেরাবন্দি দৃশ্য, সংরক্ষণ ও সহাবস্থানের বিতর্ক নতুন করে শিশিতে বন্দি সৌন্দর্যের মোহ: পরীক্ষাহীন পেপটাইড ইনজেকশনের বিপজ্জনক উত্থান তুরস্কের দাবি: আক্কুয়ু পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার নতুন ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬) শাওমির ১৭ আল্ট্রা ‘লাইকা এডিশন’: স্মার্টফোনে ফিরছে ম্যানুয়াল জুম রিং একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ার ওরেনবুর্গে বড় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ড্রোন হামলা দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১১৩)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
  • 36

অধ্যাপক এস. সি. সেন

ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে আসিলেন এক জার্মানি-ফেরত প্রফেসর। সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের লোক। তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের কথা লোকের মুখে-মুখে। এমন পণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে যদি পরিচয় করিতে পারিতাম। কিন্তু কি করিয়া পরিচিত হইব ভাবিয়া কূল পাই না। একদিন তিনি স্থানীয় ব্রাহ্ম-মন্দিরে বক্তৃতা করিলেন। বক্তৃতাটি আমার খুব ভালো লাগিল। আমি যথাসম্ভব তাঁর ভাষার অনুকরণ করিয়া বক্তৃতাটির অনুলিখন তৈরি করিলাম। তারপর একদিন তাঁর বাসায় যাইয়া লেখাটি তাঁহাকে দেখাইলাম। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতার সবকিছু আমার পক্ষে লেখা সম্ভবপর ছিল না।

তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু তাঁর বক্তৃতা যে আমাকে আকৃষ্ট করিয়াছিল ইহাতে তিনি বড়ই খুশি হইলেন। আমার লেখাটি তিনি আদ্যোপান্ত পড়িয়া যে যে স্থানে আমার শ্রুতি-লিখনে ভুল হইয়াছিল তাহা সংশোধনের নির্দেশ দিলেন। এই উপলক্ষে দুই-তিনদিন তাঁহার সঙ্গে দেখা করিবার সুযোগ পাইলাম। একদিন তাঁহাকে আমার কবিতার খাতাখানি দেখাইলাম। তিনি আমার কবিতা পড়িয়া বড়ই খুশি হইলেন। তাঁহার বন্ধু-বান্ধবের সামনেও আমার দুই-একটি কবিতা নিজে আবৃত্তি করিয়া শোনাইলেন। এখন হইতে আমি নূতন কোনো কবিতা লিখিয়াই তাঁহাকে দেখাইতে লাগিলাম।

মাঝে মাঝে তিনি আমার সঙ্গে নানারকম ধর্মমত লইয়া আলাপ করিতেন। আমি তখনও সন্ন্যাসী ঠাকুরের প্রভাব কাটাইয়া উঠিতে পারি নাই। কালী, দুর্গা, শিব প্রভৃতি সকল হিন্দু দেবদেবীর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। তিনি যখন কথা বলিতে বলিতে আমার এই সকল অন্ধবিশ্বাসের উপর খড়গাঘাত করিতেন, আমি বড়ই ব্যথা পাইতাম। প্রাণপণে তাঁহার যুক্তির প্রতিবাদ করিতাম। কিন্তু বাড়ি আসিয়া তাঁহার যুক্তিগুলি আমাকে পাইয়া বসিত। তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় শহরের কয়েকজন ব্রাহ্মসমাজভুক্ত ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হইল।

তাঁহারা আমাকে ব্রাহ্মসমাজ হইতে প্রকাশিত বইগুলি পড়িতে দিতেন। এইভাবে কেশব সেনের জীবনী, রাজা রামমোহন রায়ের জীবনী, অজিতকুমার চক্রবর্তীর মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথের জীবনী, জগদীশবাবুর গৌরাঙ্গ লীলামৃত, গিরিশ বসুর তাপসমালা, কেশব সেনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা প্রভৃতি পুস্তকগুলি পড়িয়া ফেলিলাম।

আমার মন হইতে ধীরে ধীরে হিন্দু দেবদেবী অন্তর্হিত হইতে লাগিল। মিঃ সেন আমাকে সঙ্গে লইয়া মাঝে মাঝে নির্জন স্থানে বেড়াইতে যাইতেন। সেখানে বসিয়া তিনি প্রার্থনা করিতেন। আমি তাঁর সেই প্রার্থনায় যোগ দিতাম।

স্থানীয় ব্রাহ্মসমাজের আচার্য শশীভূষণ মিত্র মহাশয়ের সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় হইয়াছিল। পূর্বে আমার কবিতায় অসমান-মিল থাকিত। মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতায় যুক্তবর্ণকে আমি এক অক্ষর ধরিতাম। সেইজন্য আমার কবিতা কোনো মাসিকপত্রে ছাপা হইত না। শশীবাবু আমার কবিতার খাতাখানি পড়িয়া এই বিষয়ে আমার ভুলগুলি ধরাইয়া দিলেন।

 

চলবে…

জনপ্রিয় সংবাদ

শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে চীনের সঙ্গে একই পথে হাঁটছে পশ্চিমা বিশ্ব

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১১৩)

১১:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

অধ্যাপক এস. সি. সেন

ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে আসিলেন এক জার্মানি-ফেরত প্রফেসর। সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের লোক। তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের কথা লোকের মুখে-মুখে। এমন পণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে যদি পরিচয় করিতে পারিতাম। কিন্তু কি করিয়া পরিচিত হইব ভাবিয়া কূল পাই না। একদিন তিনি স্থানীয় ব্রাহ্ম-মন্দিরে বক্তৃতা করিলেন। বক্তৃতাটি আমার খুব ভালো লাগিল। আমি যথাসম্ভব তাঁর ভাষার অনুকরণ করিয়া বক্তৃতাটির অনুলিখন তৈরি করিলাম। তারপর একদিন তাঁর বাসায় যাইয়া লেখাটি তাঁহাকে দেখাইলাম। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতার সবকিছু আমার পক্ষে লেখা সম্ভবপর ছিল না।

তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু তাঁর বক্তৃতা যে আমাকে আকৃষ্ট করিয়াছিল ইহাতে তিনি বড়ই খুশি হইলেন। আমার লেখাটি তিনি আদ্যোপান্ত পড়িয়া যে যে স্থানে আমার শ্রুতি-লিখনে ভুল হইয়াছিল তাহা সংশোধনের নির্দেশ দিলেন। এই উপলক্ষে দুই-তিনদিন তাঁহার সঙ্গে দেখা করিবার সুযোগ পাইলাম। একদিন তাঁহাকে আমার কবিতার খাতাখানি দেখাইলাম। তিনি আমার কবিতা পড়িয়া বড়ই খুশি হইলেন। তাঁহার বন্ধু-বান্ধবের সামনেও আমার দুই-একটি কবিতা নিজে আবৃত্তি করিয়া শোনাইলেন। এখন হইতে আমি নূতন কোনো কবিতা লিখিয়াই তাঁহাকে দেখাইতে লাগিলাম।

মাঝে মাঝে তিনি আমার সঙ্গে নানারকম ধর্মমত লইয়া আলাপ করিতেন। আমি তখনও সন্ন্যাসী ঠাকুরের প্রভাব কাটাইয়া উঠিতে পারি নাই। কালী, দুর্গা, শিব প্রভৃতি সকল হিন্দু দেবদেবীর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। তিনি যখন কথা বলিতে বলিতে আমার এই সকল অন্ধবিশ্বাসের উপর খড়গাঘাত করিতেন, আমি বড়ই ব্যথা পাইতাম। প্রাণপণে তাঁহার যুক্তির প্রতিবাদ করিতাম। কিন্তু বাড়ি আসিয়া তাঁহার যুক্তিগুলি আমাকে পাইয়া বসিত। তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় শহরের কয়েকজন ব্রাহ্মসমাজভুক্ত ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হইল।

তাঁহারা আমাকে ব্রাহ্মসমাজ হইতে প্রকাশিত বইগুলি পড়িতে দিতেন। এইভাবে কেশব সেনের জীবনী, রাজা রামমোহন রায়ের জীবনী, অজিতকুমার চক্রবর্তীর মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথের জীবনী, জগদীশবাবুর গৌরাঙ্গ লীলামৃত, গিরিশ বসুর তাপসমালা, কেশব সেনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা প্রভৃতি পুস্তকগুলি পড়িয়া ফেলিলাম।

আমার মন হইতে ধীরে ধীরে হিন্দু দেবদেবী অন্তর্হিত হইতে লাগিল। মিঃ সেন আমাকে সঙ্গে লইয়া মাঝে মাঝে নির্জন স্থানে বেড়াইতে যাইতেন। সেখানে বসিয়া তিনি প্রার্থনা করিতেন। আমি তাঁর সেই প্রার্থনায় যোগ দিতাম।

স্থানীয় ব্রাহ্মসমাজের আচার্য শশীভূষণ মিত্র মহাশয়ের সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় হইয়াছিল। পূর্বে আমার কবিতায় অসমান-মিল থাকিত। মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতায় যুক্তবর্ণকে আমি এক অক্ষর ধরিতাম। সেইজন্য আমার কবিতা কোনো মাসিকপত্রে ছাপা হইত না। শশীবাবু আমার কবিতার খাতাখানি পড়িয়া এই বিষয়ে আমার ভুলগুলি ধরাইয়া দিলেন।

 

চলবে…