১০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫২) শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত: ডিএসই-তে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড এনসিপি বুলেট নিয়েও প্রস্তুত- নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে সরকার: বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টারের নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সরওয়ার

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১১৫)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • 59

অধ্যাপক এস. সি. সেন

আমাদের মুসলিম ধর্মমত লইয়া তাঁহারা বিশেষ সমালোচনা করিতেন না। একমাত্র বলিতেন, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) শেষ পয়গম্বর নহেন। তিনি মানুষ ছিলেন। সেইজন্য তাঁহার জীবনেও হয়তো কোনো অসম্পূর্ণতা ছিল। আমি তাহা বিশ্বাস করিতাম না। শিশুকালে মনসুর মৌলবি সাহেবের নিকট যে ইসলামি প্রভাবে মানুষ হইয়াছিলাম তাহা ধীরে ধীরে আমার মধ্যে প্রকট হইতে লাগিল।

জেলা স্কুলে পড়িবার সময় আমাদের মুসলিম ছাত্রের সংখ্যা ছিল মাত্র বিশ-ত্রিশজনের মতো। এই ছাত্রদলকে লইয়া আমরা মুসলিম ছাত্রসমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়িয়াছিলাম। সামান্য চাঁদা সংগ্রহ করিয়া আমরা একটি ক্ষুদ্র পাঠাগারও প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলাম। এই পাঠাগারে তখনকার মুসলিম সাহিত্যিকদের রচিত বইগুলি সংগৃহীত হইয়াছিল। প্রতি রবিবারে আমাদের সভার অধিবেশন বসিত।

ছাত্রেরা বড় আসিতে চাহিত না। বাড়ি বাড়ি যাইয়া আমি তাহাদের ডাকিয়া আনিতাম। মৌলবি তমীজউদ্দীন সাহেব ছিলেন আমাদের সভাপতি। তিনি অধিকাংশ সভায়ই উপস্থিত হইয়া আমাদিগকে উৎসাহিত করিতেন। একবার তিনি বলিয়াছিলেন, “একা জসীমের চেষ্টায়ই মুসলিম ছাত্র-সভা জীবন্ত হইয়া আছে।”

এই ছাত্র-সভার তরফ হইতে একবার আমরা মিঃ সেনকে বক্তৃতা করিতে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলাম। বহুদিন এনসাইক্লোপিডিয়া ও অন্যান্য গ্রন্থ ঘাঁটিয়া তিনি যে সারগর্ভ বক্তৃতাটি দিয়াছিলেন, শহরের হিন্দু-মুসলমান সকলেই উহার তারিফ করিয়াছিলেন। আমি মনে মনে ভাবিতেছিলাম, তাঁহার এই সুনাম যেন আমারই সুনাম। কারণ আমিই তাঁহাকে আমানের ছাত্র-সভায় বক্তৃতা করিতে রাজি করাইয়াছিলাম।

মিঃ সেন নিজে খুব সুন্দর কবিতা লিখিতে পারিতেন। দেশী-বিদেশী বহু কবিতা তিনি ভাষান্তরিত করিয়াছিলেন। সেগুলি তিনি আমাকে পড়িয়া শোনাইতেন। আগে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়িয়া বুঝিতে পারিতাম না। গীতাঞ্জলি, বলাকা প্রভৃতি বই হইতে বহু কবিতা পড়িয়া তিনি আমাকে বুঝাইয়া দিতেন। তাঁহার কাছে একখানা ‘ওয়ার্ডসওয়ার্থের’ কবিতা সংকলন ছিল। তিনি তাহা হইতেও আমাকে মাঝে মাঝে পড়িয়া শোনাইতেন।

স্কুলের ছুটি হইলেই আমি তাঁহার বাসায় যাইতাম। সেখানে সামান্য কিছু নাস্তা খাইয়া তাঁহার সঙ্গে মাঠে বেড়াইতে বাহির হইতাম। একদিন তিনি আমাকে বলিলেন, “দেখ, এখানে কোথাও সন্ধ্যাবেলায় আরতির বাজনা হয়? বহুদিন আরতির বাজনা শুনি না। ছোটকালে শুনিতাম। তারপর বিদেশে যাইয়া আর শুনি নাই।” আমি বলিলাম, “এখানে কালীবাড়িতে রোজ সন্ধ্যায় আরতির বাজনা হয়।” তিনি বলিলেন, “কালীবাড়িতে জীবহত্যা হয়। সেখানে যাইতে ইচ্ছা করে না।”

চলবে…

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১১৫)

১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

অধ্যাপক এস. সি. সেন

আমাদের মুসলিম ধর্মমত লইয়া তাঁহারা বিশেষ সমালোচনা করিতেন না। একমাত্র বলিতেন, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) শেষ পয়গম্বর নহেন। তিনি মানুষ ছিলেন। সেইজন্য তাঁহার জীবনেও হয়তো কোনো অসম্পূর্ণতা ছিল। আমি তাহা বিশ্বাস করিতাম না। শিশুকালে মনসুর মৌলবি সাহেবের নিকট যে ইসলামি প্রভাবে মানুষ হইয়াছিলাম তাহা ধীরে ধীরে আমার মধ্যে প্রকট হইতে লাগিল।

জেলা স্কুলে পড়িবার সময় আমাদের মুসলিম ছাত্রের সংখ্যা ছিল মাত্র বিশ-ত্রিশজনের মতো। এই ছাত্রদলকে লইয়া আমরা মুসলিম ছাত্রসমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়িয়াছিলাম। সামান্য চাঁদা সংগ্রহ করিয়া আমরা একটি ক্ষুদ্র পাঠাগারও প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলাম। এই পাঠাগারে তখনকার মুসলিম সাহিত্যিকদের রচিত বইগুলি সংগৃহীত হইয়াছিল। প্রতি রবিবারে আমাদের সভার অধিবেশন বসিত।

ছাত্রেরা বড় আসিতে চাহিত না। বাড়ি বাড়ি যাইয়া আমি তাহাদের ডাকিয়া আনিতাম। মৌলবি তমীজউদ্দীন সাহেব ছিলেন আমাদের সভাপতি। তিনি অধিকাংশ সভায়ই উপস্থিত হইয়া আমাদিগকে উৎসাহিত করিতেন। একবার তিনি বলিয়াছিলেন, “একা জসীমের চেষ্টায়ই মুসলিম ছাত্র-সভা জীবন্ত হইয়া আছে।”

এই ছাত্র-সভার তরফ হইতে একবার আমরা মিঃ সেনকে বক্তৃতা করিতে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলাম। বহুদিন এনসাইক্লোপিডিয়া ও অন্যান্য গ্রন্থ ঘাঁটিয়া তিনি যে সারগর্ভ বক্তৃতাটি দিয়াছিলেন, শহরের হিন্দু-মুসলমান সকলেই উহার তারিফ করিয়াছিলেন। আমি মনে মনে ভাবিতেছিলাম, তাঁহার এই সুনাম যেন আমারই সুনাম। কারণ আমিই তাঁহাকে আমানের ছাত্র-সভায় বক্তৃতা করিতে রাজি করাইয়াছিলাম।

মিঃ সেন নিজে খুব সুন্দর কবিতা লিখিতে পারিতেন। দেশী-বিদেশী বহু কবিতা তিনি ভাষান্তরিত করিয়াছিলেন। সেগুলি তিনি আমাকে পড়িয়া শোনাইতেন। আগে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়িয়া বুঝিতে পারিতাম না। গীতাঞ্জলি, বলাকা প্রভৃতি বই হইতে বহু কবিতা পড়িয়া তিনি আমাকে বুঝাইয়া দিতেন। তাঁহার কাছে একখানা ‘ওয়ার্ডসওয়ার্থের’ কবিতা সংকলন ছিল। তিনি তাহা হইতেও আমাকে মাঝে মাঝে পড়িয়া শোনাইতেন।

স্কুলের ছুটি হইলেই আমি তাঁহার বাসায় যাইতাম। সেখানে সামান্য কিছু নাস্তা খাইয়া তাঁহার সঙ্গে মাঠে বেড়াইতে বাহির হইতাম। একদিন তিনি আমাকে বলিলেন, “দেখ, এখানে কোথাও সন্ধ্যাবেলায় আরতির বাজনা হয়? বহুদিন আরতির বাজনা শুনি না। ছোটকালে শুনিতাম। তারপর বিদেশে যাইয়া আর শুনি নাই।” আমি বলিলাম, “এখানে কালীবাড়িতে রোজ সন্ধ্যায় আরতির বাজনা হয়।” তিনি বলিলেন, “কালীবাড়িতে জীবহত্যা হয়। সেখানে যাইতে ইচ্ছা করে না।”

চলবে…