০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
‘গ্রিন ট্রি সাপ’—সবুজ পাতার আড়ালে লুকানো নীরব সৌন্দর্য আরব আমিরাতের আল আইন জাদুঘর—পাথর যুগ থেকে ইসলামি যুগের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন মিশরে সূচালো দাঁতওয়ালা ৮ কোটি বছর আগের সামুদ্রিক কুমিরের জীবাশ্ম আবিষ্কার আমেরিকার জন্মকথা—ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, স্বাধীনতার গল্প ও মানবতার প্রতিচ্ছবি প্রযুক্তির অবক্ষয় ও পুনর্জাগরণের প্রশ্নে কোরি ডাক্টরোর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৫) দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আসিয়ান ঐক্যবদ্ধ কিস্তিতে কেনাকাটার নতুন যুগে তরুণ প্রজন্মের সহজ ঋণে গভীর ফাঁদ শ্রদ্ধাঞ্জলি: বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান এর ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী সিরাজগঞ্জ কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

আর কতজনকে মরতে হবে?

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • 55

সারাক্ষণ ডেস্ক

 মাসের পর মাস ধরে খনি শ্রমিক ও তাদের পরিবার সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু যখন সাহায্য আসেততক্ষণে খনি যেন এক সমাধিতে পরিণত হয়েছে।

গত সপ্তাহে উদ্ধারকর্মীরা ৭৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে এবং ২৪৬ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেতাদের অনেকেই দুর্বল ও অপুষ্টিতে ভুগছিলস্টিলফন্টেইনের বাফেলসফন্টেইন খনি থেকে। উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের এই খনিতে পুলিশের সাথে অবৈধ খনি শ্রমিকদের সংঘর্ষ ঘটে।

এই ছোট শহরটি একসময় স্বর্ণখনির প্রাণকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুর দিকে খনিজ সম্পদ কমে আসার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং বেকারত্ব ৯০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। কাজের অভাবে স্থানীয়রা অবৈধ খনির দিকে ঝুঁকে পড়েএখনও শিলার ভেতর লুকিয়ে থাকা সম্পদ খুঁজতে তারা মাটির নিচে নেমে যায়।

এখানে কাজ করা পুরুষদের বলা হয় জামা জামা। এই জুলু শব্দের অর্থ হলো “সুযোগ খোঁজা”। তারা খুমার কাছাকাছি বসবাস করেযেখানে অধিকাংশ বাড়িঘর অস্থায়ী। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ জামা জামা হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেযা একটি বিপজ্জনক এবং নিয়ন্ত্রণহীন শিল্প।

গত আগস্টেদক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ অবৈধ খনি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। পুলিশ খনি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় এবং শ্রমিকদের খাবারপানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তাদের লক্ষ্য ছিল শ্রমিকদের মাটি থেকে বের করে আনা। শুরুতে প্রায় ২,০০০ শ্রমিক আত্মসমর্পণ করলেও শত শত মানুষযার সঠিক সংখ্যা কেউ জানে নাভূগর্ভেই রয়ে যায়।

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ একটি ধীর গতির মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়। খাদ্য ফুরিয়ে যায়পুলিশ পিছু হটতে অস্বীকার করে এবং মরিয়া পরিবারগুলো আদালতে আবেদন জানায়। অথচকর্তৃপক্ষ খাবার ও পানির সরবরাহ বন্ধ রাখাকে অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

বেঁচে থাকা শ্রমিকদের কথা

আয়ান্দা ন্দাবেনি৩৫এর আগে কখনো খনির ভেতরে যাননি। কিন্তু তার স্ত্রী এবং চার সন্তানকে সাহায্য করার জন্য তিনি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে খনিতে প্রবেশ করেন। ন্দাবেনি বলেন, “মাটির গভীরেযেখানে প্রচণ্ড গরমসেখানেই সোনা পাওয়া যায়।

কিন্তু খাবার এবং পানি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। দুই সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকরা তীব্র ক্ষুধার্ত হয়ে তেলাপোকা খেতে শুরু করে। কেউ কেউ ক্ষুধা মেটাতে দাঁত মাজার পেস্টের সাথে লবণ ও ভিনেগার মিশিয়ে খেত।

খনি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় নভেম্বরে। তবে উদ্ধার হওয়ার পর ন্দাবেনি পুলিশের কাছে অপমানিত হন। আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই,” তিনি বলেন।

পরিবারগুলোর আর্তি

জিনজি টম৩১জুলাই থেকে তার ভাই আয়ান্দার কোনো খোঁজ পাননি। তার ভাই দুই সন্তানের বাবা এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। পরিবারের দাবিপুলিশের অভিযান শ্রমিকদের জন্য একপ্রকার মৃত্যুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টম এবং স্থানীয় সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতকে বাধ্য করে খাবার সরবরাহ করতে। তবে এ উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না।

উদ্ধারকর্মীদের অভিজ্ঞতা

উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা জানান, “এটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। মৃতদেহগুলো পচে গিয়েছিল এবং শনাক্ত করার অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতেখনি শ্রমিকতাদের পরিবার এবং উদ্ধারকর্মীরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে।

আর কতজনকে মরতে হবে?” —এই প্রশ্ন এখনো উত্তরহীন।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘গ্রিন ট্রি সাপ’—সবুজ পাতার আড়ালে লুকানো নীরব সৌন্দর্য

আর কতজনকে মরতে হবে?

০৭:০০:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ ডেস্ক

 মাসের পর মাস ধরে খনি শ্রমিক ও তাদের পরিবার সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু যখন সাহায্য আসেততক্ষণে খনি যেন এক সমাধিতে পরিণত হয়েছে।

গত সপ্তাহে উদ্ধারকর্মীরা ৭৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে এবং ২৪৬ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেতাদের অনেকেই দুর্বল ও অপুষ্টিতে ভুগছিলস্টিলফন্টেইনের বাফেলসফন্টেইন খনি থেকে। উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের এই খনিতে পুলিশের সাথে অবৈধ খনি শ্রমিকদের সংঘর্ষ ঘটে।

এই ছোট শহরটি একসময় স্বর্ণখনির প্রাণকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুর দিকে খনিজ সম্পদ কমে আসার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং বেকারত্ব ৯০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। কাজের অভাবে স্থানীয়রা অবৈধ খনির দিকে ঝুঁকে পড়েএখনও শিলার ভেতর লুকিয়ে থাকা সম্পদ খুঁজতে তারা মাটির নিচে নেমে যায়।

এখানে কাজ করা পুরুষদের বলা হয় জামা জামা। এই জুলু শব্দের অর্থ হলো “সুযোগ খোঁজা”। তারা খুমার কাছাকাছি বসবাস করেযেখানে অধিকাংশ বাড়িঘর অস্থায়ী। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ জামা জামা হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেযা একটি বিপজ্জনক এবং নিয়ন্ত্রণহীন শিল্প।

গত আগস্টেদক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ অবৈধ খনি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। পুলিশ খনি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় এবং শ্রমিকদের খাবারপানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তাদের লক্ষ্য ছিল শ্রমিকদের মাটি থেকে বের করে আনা। শুরুতে প্রায় ২,০০০ শ্রমিক আত্মসমর্পণ করলেও শত শত মানুষযার সঠিক সংখ্যা কেউ জানে নাভূগর্ভেই রয়ে যায়।

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ একটি ধীর গতির মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়। খাদ্য ফুরিয়ে যায়পুলিশ পিছু হটতে অস্বীকার করে এবং মরিয়া পরিবারগুলো আদালতে আবেদন জানায়। অথচকর্তৃপক্ষ খাবার ও পানির সরবরাহ বন্ধ রাখাকে অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

বেঁচে থাকা শ্রমিকদের কথা

আয়ান্দা ন্দাবেনি৩৫এর আগে কখনো খনির ভেতরে যাননি। কিন্তু তার স্ত্রী এবং চার সন্তানকে সাহায্য করার জন্য তিনি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে খনিতে প্রবেশ করেন। ন্দাবেনি বলেন, “মাটির গভীরেযেখানে প্রচণ্ড গরমসেখানেই সোনা পাওয়া যায়।

কিন্তু খাবার এবং পানি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। দুই সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকরা তীব্র ক্ষুধার্ত হয়ে তেলাপোকা খেতে শুরু করে। কেউ কেউ ক্ষুধা মেটাতে দাঁত মাজার পেস্টের সাথে লবণ ও ভিনেগার মিশিয়ে খেত।

খনি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় নভেম্বরে। তবে উদ্ধার হওয়ার পর ন্দাবেনি পুলিশের কাছে অপমানিত হন। আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই,” তিনি বলেন।

পরিবারগুলোর আর্তি

জিনজি টম৩১জুলাই থেকে তার ভাই আয়ান্দার কোনো খোঁজ পাননি। তার ভাই দুই সন্তানের বাবা এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। পরিবারের দাবিপুলিশের অভিযান শ্রমিকদের জন্য একপ্রকার মৃত্যুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টম এবং স্থানীয় সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতকে বাধ্য করে খাবার সরবরাহ করতে। তবে এ উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না।

উদ্ধারকর্মীদের অভিজ্ঞতা

উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা জানান, “এটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। মৃতদেহগুলো পচে গিয়েছিল এবং শনাক্ত করার অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতেখনি শ্রমিকতাদের পরিবার এবং উদ্ধারকর্মীরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে।

আর কতজনকে মরতে হবে?” —এই প্রশ্ন এখনো উত্তরহীন।