১১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি জামায়াতের আহ্বান সংযম ও ঐক্যের পথে থাকার চীনের স্যাটেলাইট ‘সুপার ফ্যাক্টরি’: স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বড় পদক্ষেপ চীনের ড্রোন ঝাঁকের সক্ষমতায় বড় অগ্রগতি চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি জাপানের নিরাপত্তায় ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলতে পারে: টোকিওর সতর্কবার্তা

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ

বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর অস্ট্রেলিয়া এখন গভীর শোক আর কঠিন আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। রবিবারের ওই হামলায় অন্তত পনেরোজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটি যেমন স্তব্ধ, তেমনি নতুন করে সামনে এসেছে অভিবাসন, ধর্মবিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরোনো প্রশ্ন। এই হামলা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে

ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানান, হামলার পেছনে উগ্রবাদী মতাদর্শের প্রভাব ছিল। সন্দেহভাজনদের একজন ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন এবং তার ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। তদন্তে পাওয়া আলামত দেশজুড়ে নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জাতীয় শোক আর নায়কোচিত মানবতা
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরেকটি দৃশ্য অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে নাড়া দেয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক সিরীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী হামলাকারীর হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বহু প্রাণ বাঁচান। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে তাকে জাতীয় নায়ক হিসেবে অভিহিত করেন। এই ঘটনা দেখিয়ে দেয়, একই সময়ের ভেতর অস্ট্রেলিয়া কেমন করে নৃশংসতা আর মানবতার দুই বিপরীত গল্প বহন করছে।

Photos show Australians mourning the victims of the Hanukkah attack on Bondi Beach - Yahoo News Canada

বিদ্বেষের আশঙ্কা ও সমাজের টানাপোড়েন
এই হামলার পর দেশজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষ ও মুসলিমবিদ্বেষ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত দেড় বছরে সিনাগগে অগ্নিসংযোগ, দেয়ালে ঘৃণামূলক লেখা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক আহ্বানও প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ সহিংস প্রতিক্রিয়া ঠেকিয়ে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার পক্ষে কথা বলছেন।

রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার পথ
বিরোধী দলও এই সংকটে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। অভিবাসন নীতি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর বদলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ দমনে জোর দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে বাধ্যতামূলক ভোট ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থার কারণে চরমপন্থা সাধারণত প্রান্তেই থাকে, আর এই ঘটনার পরেও সেই প্রবণতা বজায় রাখার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

অতীতের শিক্ষা, বর্তমানের পরীক্ষা
উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের তাসমানিয়ার গণহত্যার পর কঠোর অস্ত্র আইন প্রণয়ন করে অস্ট্রেলিয়া যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, তা আজ আবার স্মরণ করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সংকটেও দেশটি প্রতিশোধ নয়, বরং নৈতিক ও বাস্তব সংস্কারের পথেই এগোবে। শোকাহত ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্যরাও প্রতিহিংসার বদলে নিরাপদ ও ন্যায্য সমাজের প্রত্যাশার কথা বলছেন।

এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষত সারানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভাজনের আগুন যেন না ছড়ায়, সেই ভারসাম্য রক্ষা করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ

১০:০০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর অস্ট্রেলিয়া এখন গভীর শোক আর কঠিন আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। রবিবারের ওই হামলায় অন্তত পনেরোজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটি যেমন স্তব্ধ, তেমনি নতুন করে সামনে এসেছে অভিবাসন, ধর্মবিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরোনো প্রশ্ন। এই হামলা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে

ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানান, হামলার পেছনে উগ্রবাদী মতাদর্শের প্রভাব ছিল। সন্দেহভাজনদের একজন ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন এবং তার ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। তদন্তে পাওয়া আলামত দেশজুড়ে নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জাতীয় শোক আর নায়কোচিত মানবতা
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরেকটি দৃশ্য অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে নাড়া দেয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক সিরীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী হামলাকারীর হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বহু প্রাণ বাঁচান। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে তাকে জাতীয় নায়ক হিসেবে অভিহিত করেন। এই ঘটনা দেখিয়ে দেয়, একই সময়ের ভেতর অস্ট্রেলিয়া কেমন করে নৃশংসতা আর মানবতার দুই বিপরীত গল্প বহন করছে।

Photos show Australians mourning the victims of the Hanukkah attack on Bondi Beach - Yahoo News Canada

বিদ্বেষের আশঙ্কা ও সমাজের টানাপোড়েন
এই হামলার পর দেশজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষ ও মুসলিমবিদ্বেষ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত দেড় বছরে সিনাগগে অগ্নিসংযোগ, দেয়ালে ঘৃণামূলক লেখা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক আহ্বানও প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ সহিংস প্রতিক্রিয়া ঠেকিয়ে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার পক্ষে কথা বলছেন।

রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার পথ
বিরোধী দলও এই সংকটে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। অভিবাসন নীতি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর বদলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ দমনে জোর দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে বাধ্যতামূলক ভোট ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থার কারণে চরমপন্থা সাধারণত প্রান্তেই থাকে, আর এই ঘটনার পরেও সেই প্রবণতা বজায় রাখার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

অতীতের শিক্ষা, বর্তমানের পরীক্ষা
উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের তাসমানিয়ার গণহত্যার পর কঠোর অস্ত্র আইন প্রণয়ন করে অস্ট্রেলিয়া যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, তা আজ আবার স্মরণ করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সংকটেও দেশটি প্রতিশোধ নয়, বরং নৈতিক ও বাস্তব সংস্কারের পথেই এগোবে। শোকাহত ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্যরাও প্রতিহিংসার বদলে নিরাপদ ও ন্যায্য সমাজের প্রত্যাশার কথা বলছেন।

এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষত সারানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভাজনের আগুন যেন না ছড়ায়, সেই ভারসাম্য রক্ষা করা।