চীন মহাকাশ প্রযুক্তিতে প্রতিযোগিতার দৌড়ে নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। দেশটি শিগগিরই চালু করছে একটি স্যাটেলাইট ‘সুপার ফ্যাক্টরি’, যেখানে বছরে এক হাজার স্যাটেলাইট তৈরি করা সম্ভব হবে। নিম্ন-কক্ষপথে বিশাল স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ইলন মাস্কের স্টারলিংকের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার পরিকল্পনা বেইজিংয়ের।
হাইনানে অবস্থিত অত্যাধুনিক কারখানা
এই স্যাটেলাইট কারখানাটি অবস্থিত চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাইনান প্রদেশের ওয়েনচ্যাং মহাকাশবন্দরের ভেতরে। এখানে ‘কারখানা থেকে উৎক্ষেপণ’ পর্যন্ত একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। একই স্থানে স্যাটেলাইট সংযোজন, পরীক্ষা এবং রকেটের সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ সম্পন্ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, এটি চীনের একমাত্র এমন ঘাঁটি এবং এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট উৎপাদন কেন্দ্র।
বাণিজ্যিক মহাকাশ খাতে চীনের জোরালো অগ্রগতি
নতুন এই কারখানা এমন এক সময়ে চালু হচ্ছে, যখন চীনের বাণিজ্যিক মহাকাশ খাত দ্রুত সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সহায়তামূলক নীতি, বেসরকারি রকেট উৎক্ষেপণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এমনকি মহাকাশ পর্যটনের প্রাথমিক ভাবনাও এই খাতকে গতি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে বেইজিং তার সক্ষমতা দ্রুত বাড়াচ্ছে।
দ্রুত উৎপাদন ও কম খরচই মূল শক্তি
এই ‘সুপার ফ্যাক্টরি’র সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর দ্রুতগতির উৎপাদন প্রক্রিয়া। সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট চূড়ান্ত সংযোজন থেকে উৎক্ষেপণস্থলে পৌঁছাতে যেখানে আগে কয়েক দিন লাগত, সেখানে এখন মাত্র কয়েক ঘণ্টাই যথেষ্ট হবে। ওয়েনচ্যাং ও হাইনানের বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ কেন্দ্র কাছাকাছি থাকায় সময় ও খরচ দুইই উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
২০২৫ সালে রেকর্ড উৎক্ষেপণের বছর
২০২৫ সালে চীন ইতোমধ্যেই মহাকাশ উৎক্ষেপণে নতুন রেকর্ড গড়েছে। স্পেস স্ট্যাটস অনলাইন ডাটাবেস অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটি ৮০টি উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে, ইলন মাস্কের স্পেসএক্স নভেম্বরের শুরুতেই ১৪৬টি মিশন শেষ করে নিজের বার্ষিক রেকর্ড ভেঙেছে।
এর আগে ২০২৪ সালে চীনের সর্বোচ্চ উৎক্ষেপণের রেকর্ড ছিল ৬৮টি। সেই বছর সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মোট ২০১টি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানো হয়। তুলনায়, একই সময়ে স্পেসএক্স ১৩৪টি রকেট উৎক্ষেপণ করে দুই হাজার তিনশোর বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্থাপন করে, যা দুই দেশের সক্ষমতা ও গতির পার্থক্য স্পষ্ট করে তোলে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















