১০:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি জামায়াতের আহ্বান সংযম ও ঐক্যের পথে থাকার চীনের স্যাটেলাইট ‘সুপার ফ্যাক্টরি’: স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বড় পদক্ষেপ চীনের ড্রোন ঝাঁকের সক্ষমতায় বড় অগ্রগতি চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি জাপানের নিরাপত্তায় ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলতে পারে: টোকিওর সতর্কবার্তা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ট্রাম্প পরিবারের সমর্থিত মিডিয়া ব্যবসা

নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি

ঢাকা — আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই মাসেরও কম সময় বাকি। এর মধ্যেই ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে আগে থেকেই টানাপোড়েন থাকা সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে গেছে। এক ছাত্র রাজনৈতিক নেতার হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে।

জুলাই ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতা শরীফ ওসমান হাদি ১২ ডিসেম্বর মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ সরকারের ধারণা, হামলাকারী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের একজন সদস্য এবং ঘটনার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ওই বিপ্লবের পর থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন।

হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকার রাস্তায় নেমে আসে। এই হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র আকার ধারণ করে।

বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ভারতের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ভেতরে কয়েকজন সাংবাদিক আটকে পড়েন। পরে তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

ঢাকার এক বিক্ষোভকারী আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতেন বলেই হাদিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক ছিলেন। তাঁর দাবি, খুনি খুব সহজেই ভারতে আশ্রয় নিতে পেরেছে, যা প্রমাণ করে এসব হত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া হলে কেউই নিরাপদ নয়।

আরেক বিক্ষোভকারী সোহেল রানা বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে হলে তা অবশ্যই পারস্পরিক হতে হবে। আমাদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করার পর বাংলাদেশি অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া ভারতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা:  কংগ্রেস

ঢাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বুধবার বিকেলে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে একটি গোষ্ঠী ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়। একই দিনে নয়াদিল্লি পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।

এর আগে হত্যাকাণ্ডের পরপরই বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ঘিরে চরমপন্থী গোষ্ঠী যে মিথ্যা বর্ণনা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালায়নি এবং ভারতের কাছে কোনো অর্থবহ প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।

হাদির মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। শনিবার সংসদ ভবনের সামনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই দিন আরও বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক ২০২৪ সালে তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই দ্রুত অবনতির পথে হাঁটে।

ঢাকায় কর্মরত সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রতি তাদের নীতি কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তবে হাদি হত্যাকাণ্ডের পর সেই উদ্যোগগুলো আপাতত স্থগিত হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণই থাকবে। নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে আবার কোনো সমঝোতার পথ খোঁজা হতে পারে।

ড্যানিলোভিচ আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ভারতীয় স্বার্থ, কূটনৈতিক স্থাপনা বা ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে কোনো হামলা না হয়। একই সঙ্গে ভারতেরও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ভারতে আশ্রয় নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নতুন হামলার চেষ্টা না করে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়।

আটলান্টাভিত্তিক ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আসিফ বিন আলী বলেন, অনেক বাংলাদেশি মনে করেন, শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন সমর্থন দিয়ে ভারত সীমা অতিক্রম করেছে। তবে তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষ এখনও ভারতের সঙ্গে স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক সম্পর্কই বেশি চান।

তাঁর ভাষায়, সমাজে অনুভূতিটা মিশ্র। হতাশা আছে, আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে।

হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তে ফের‌‌ সিলমোহর ভারতের সর্বদলীয় সংসদীয়  কমিটির, স্বস্তি আওয়ামী লিগের | India's All Party Parliamentary Committee  again endorsed ...

আসিফ সতর্ক করে বলেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। ২০২৪ সালের বিক্ষোভকারীদের হত্যায় ভূমিকার অভিযোগে গত মাসে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ায় ভারত তাঁকে ফেরত পাঠাবে—এমন সম্ভাবনা কম। ফলে এই বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বয়ানে প্রভাব ফেলতেই থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাতজুড়ে চলা সহিংসতার সময় সরকারের কার্যকর উপস্থিতি না থাকায় নিরাপত্তা রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারির উচ্চঝুঁকির নির্বাচনের আগে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আসিফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ঝুঁকির মধ্যে ছিল এবং অতীতেও হামলার শিকার হয়েছে। যদি সরকার রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে দুটি বড় সংবাদপত্রের কার্যালয় রক্ষা করতে না পারে, তবে কয়েকশ কিলোমিটার দূরের ভোটকেন্দ্রগুলো কীভাবে রক্ষা করবে—সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, সহিংসতা চলতে থাকলে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে। কম ভোটে অনুষ্ঠিত নির্বাচন, কারিগরি দিক থেকে সঠিক হলেও, রাজনৈতিক বৈধতা হারাতে পারে।

ড্যানিলোভিচ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সময় খুব কম থাকায় বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক মেরামতে তারা বড় ধরনের রাজনৈতিক উদ্যোগ নেবে—এমন সম্ভাবনা কম।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে উভয় পক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এমন পরিস্থিতি এড়ানো, যা ভবিষ্যতে আরও ঘটনা ঘটিয়ে দুই দেশের জনমতকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখতে পারে, যদিও নয়াদিল্লি এমন উদ্যোগে আপত্তি জানাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ঝুঁকি কমাতে তৃতীয় পক্ষ সহায়ক হতে পারে এবং এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুললে ঢাকাই তুলনামূলকভাবে বেশি লাভবান হবে।

মাসুম বিল্লাহ
অবদানকারী লেখক

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ

নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি

০৮:৩৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাকা — আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই মাসেরও কম সময় বাকি। এর মধ্যেই ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে আগে থেকেই টানাপোড়েন থাকা সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে গেছে। এক ছাত্র রাজনৈতিক নেতার হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে।

জুলাই ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতা শরীফ ওসমান হাদি ১২ ডিসেম্বর মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ সরকারের ধারণা, হামলাকারী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের একজন সদস্য এবং ঘটনার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ওই বিপ্লবের পর থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন।

হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকার রাস্তায় নেমে আসে। এই হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র আকার ধারণ করে।

বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ভারতের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ভেতরে কয়েকজন সাংবাদিক আটকে পড়েন। পরে তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

ঢাকার এক বিক্ষোভকারী আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতেন বলেই হাদিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক ছিলেন। তাঁর দাবি, খুনি খুব সহজেই ভারতে আশ্রয় নিতে পেরেছে, যা প্রমাণ করে এসব হত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া হলে কেউই নিরাপদ নয়।

আরেক বিক্ষোভকারী সোহেল রানা বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে হলে তা অবশ্যই পারস্পরিক হতে হবে। আমাদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করার পর বাংলাদেশি অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া ভারতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা:  কংগ্রেস

ঢাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বুধবার বিকেলে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে একটি গোষ্ঠী ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়। একই দিনে নয়াদিল্লি পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।

এর আগে হত্যাকাণ্ডের পরপরই বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ঘিরে চরমপন্থী গোষ্ঠী যে মিথ্যা বর্ণনা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালায়নি এবং ভারতের কাছে কোনো অর্থবহ প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।

হাদির মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। শনিবার সংসদ ভবনের সামনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই দিন আরও বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক ২০২৪ সালে তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই দ্রুত অবনতির পথে হাঁটে।

ঢাকায় কর্মরত সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রতি তাদের নীতি কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তবে হাদি হত্যাকাণ্ডের পর সেই উদ্যোগগুলো আপাতত স্থগিত হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণই থাকবে। নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে আবার কোনো সমঝোতার পথ খোঁজা হতে পারে।

ড্যানিলোভিচ আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ভারতীয় স্বার্থ, কূটনৈতিক স্থাপনা বা ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে কোনো হামলা না হয়। একই সঙ্গে ভারতেরও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ভারতে আশ্রয় নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নতুন হামলার চেষ্টা না করে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়।

আটলান্টাভিত্তিক ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আসিফ বিন আলী বলেন, অনেক বাংলাদেশি মনে করেন, শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন সমর্থন দিয়ে ভারত সীমা অতিক্রম করেছে। তবে তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষ এখনও ভারতের সঙ্গে স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক সম্পর্কই বেশি চান।

তাঁর ভাষায়, সমাজে অনুভূতিটা মিশ্র। হতাশা আছে, আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে।

হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তে ফের‌‌ সিলমোহর ভারতের সর্বদলীয় সংসদীয়  কমিটির, স্বস্তি আওয়ামী লিগের | India's All Party Parliamentary Committee  again endorsed ...

আসিফ সতর্ক করে বলেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। ২০২৪ সালের বিক্ষোভকারীদের হত্যায় ভূমিকার অভিযোগে গত মাসে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ায় ভারত তাঁকে ফেরত পাঠাবে—এমন সম্ভাবনা কম। ফলে এই বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বয়ানে প্রভাব ফেলতেই থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাতজুড়ে চলা সহিংসতার সময় সরকারের কার্যকর উপস্থিতি না থাকায় নিরাপত্তা রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারির উচ্চঝুঁকির নির্বাচনের আগে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আসিফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ঝুঁকির মধ্যে ছিল এবং অতীতেও হামলার শিকার হয়েছে। যদি সরকার রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে দুটি বড় সংবাদপত্রের কার্যালয় রক্ষা করতে না পারে, তবে কয়েকশ কিলোমিটার দূরের ভোটকেন্দ্রগুলো কীভাবে রক্ষা করবে—সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, সহিংসতা চলতে থাকলে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে। কম ভোটে অনুষ্ঠিত নির্বাচন, কারিগরি দিক থেকে সঠিক হলেও, রাজনৈতিক বৈধতা হারাতে পারে।

ড্যানিলোভিচ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সময় খুব কম থাকায় বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক মেরামতে তারা বড় ধরনের রাজনৈতিক উদ্যোগ নেবে—এমন সম্ভাবনা কম।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে উভয় পক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এমন পরিস্থিতি এড়ানো, যা ভবিষ্যতে আরও ঘটনা ঘটিয়ে দুই দেশের জনমতকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখতে পারে, যদিও নয়াদিল্লি এমন উদ্যোগে আপত্তি জানাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ঝুঁকি কমাতে তৃতীয় পক্ষ সহায়ক হতে পারে এবং এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুললে ঢাকাই তুলনামূলকভাবে বেশি লাভবান হবে।

মাসুম বিল্লাহ
অবদানকারী লেখক