১০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি জামায়াতের আহ্বান সংযম ও ঐক্যের পথে থাকার চীনের স্যাটেলাইট ‘সুপার ফ্যাক্টরি’: স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বড় পদক্ষেপ চীনের ড্রোন ঝাঁকের সক্ষমতায় বড় অগ্রগতি চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি জাপানের নিরাপত্তায় ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলতে পারে: টোকিওর সতর্কবার্তা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ট্রাম্প পরিবারের সমর্থিত মিডিয়া ব্যবসা

নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ট্রাম্প পরিবারের সমর্থিত মিডিয়া ব্যবসা

একসময় ছিল ট্রুথ সোশ্যাল। এরপর এলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। পরে যুক্ত হলো আর্থিক সেবার নানা পণ্য এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি মজুতের জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি। এবার সেই ধারাবাহিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নিউক্লিয়ার ফিউশন শক্তি খাতে প্রবেশ করল ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ।

নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিষ্ঠান টিএই টেকনোলজিসের সঙ্গে ৬ বিলিয়ন ডলারের একীভূতকরণ চুক্তি ট্রাম্প পরিবারের জন্য মূলধারার অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এই উদ্যোগ তাদের ব্যবসায়িক বিস্তৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ট্রাম্প মিডিয়ার মূল শক্তি কোম্পানির ব্যবসায়িক কাঠামোর চেয়ে ট্রাম্প নামেই বেশি নির্ভরশীল। ইউরো প্যাসিফিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিটার শিফের মতে, এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মূলত একটি কার্যকর ব্যবসা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের ফলে বিদ্যুৎ চাহিদা যে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে, সেটিকে কেন্দ্র করেই এই চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও ফিউশনের মতো প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ফলে এখনো বাণিজ্যিকভাবে পুরোপুরি পরীক্ষিত না হলেও ফিউশন শক্তির পেছনে রাষ্ট্রীয় সমর্থন জোরালো।

এই উদ্যোগ ট্রাম্প মিডিয়ার জন্যও এক বড় মোড়। ২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর যে মিডিয়া কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটি নানা আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটতে হাঁটতে এখন উচ্চপ্রযুক্তির শক্তি খাতে পা রাখল।

টিএই টেকনোলজিসের পেছনে রয়েছে করপোরেট আমেরিকার প্রভাবশালী বিনিয়োগকারীরা। অ্যালফাবেট, শেভরন, গোল্ডম্যান স্যাকসসহ একাধিক বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পারিবারিক বিনিয়োগ তহবিল এতে যুক্ত। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক নিউক্লিয়ার ফিউশন গবেষণায় অন্যতম পুরোনো ও পরিচিত নাম। তাদের বোর্ডে রয়েছেন সাবেক মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী আর্নেস্ট মনিজের মতো খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকরা।

টিএইয়ের প্রধান নির্বাহী মিখল বিন্ডারবাউয়ার জানিয়েছেন, ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। একীভূত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হচ্ছেন মাইকেল শোয়াব, যিনি চার্লস শোয়াবের পুত্র এবং দীর্ঘদিন ধরে টিএইয়ের বিনিয়োগকারী।

বিন্ডারবাউয়ারের দাবি, দুই দশকের গবেষণায় তাদের প্রযুক্তি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব। তবে এর জন্য বিপুল পুঁজি প্রয়োজন, আর এই একীভূতকরণ সেই অর্থায়নের পথ খুলে দেবে।

চুক্তির বিস্তারিত এখনো খুব স্পষ্ট নয়। নতুন প্রতিষ্ঠানে সহপ্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ট্রাম্প মিডিয়ার বর্তমান প্রধান ডেভিন নুনেস। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক কলের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পাবলিকলি ট্রেডেড নিউক্লিয়ার ফিউশন কোম্পানি গঠনের আশা প্রকাশ করেন এবং ২০৩১ সালের মধ্যে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য জানান।

চুক্তির ঘোষণার পর ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ারের দাম একদিনেই ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যদিও বছরজুড়ে শেয়ারটির দর এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে কম। কোম্পানিটির বড় অংশের মালিকানা ট্রাম্প পরিবারের হাতেই রয়েছে।

নুনেসের ভাষায়, ট্রাম্প মিডিয়া প্রথমে অনলাইন মতপ্রকাশের অবকাঠামো গড়ে তুলেছিল, আর এখন তারা এমন এক বিপ্লবী প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক জ্বালানি নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।

তবে সমালোচনাও রয়েছে। কংগ্রেসের ফিউশন এনার্জি ককাসের সহসভাপতি ডন বেয়ার এই একীভূতকরণে স্বার্থের সংঘাতের ঝুঁকি দেখছেন এবং সরকারি অর্থ যেন জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

বিশ্বজুড়ে ফিউশন খাতে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছরে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে কয়েক বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঢুকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগও ফিউশন উন্নয়নে নতুন কৌশল ও দপ্তর গঠন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প মিডিয়া ও টিএইয়ের এই জোট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি রাজনীতির সংযোগস্থলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ

নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ট্রাম্প পরিবারের সমর্থিত মিডিয়া ব্যবসা

০৮:১০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

একসময় ছিল ট্রুথ সোশ্যাল। এরপর এলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। পরে যুক্ত হলো আর্থিক সেবার নানা পণ্য এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি মজুতের জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি। এবার সেই ধারাবাহিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নিউক্লিয়ার ফিউশন শক্তি খাতে প্রবেশ করল ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ।

নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিষ্ঠান টিএই টেকনোলজিসের সঙ্গে ৬ বিলিয়ন ডলারের একীভূতকরণ চুক্তি ট্রাম্প পরিবারের জন্য মূলধারার অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এই উদ্যোগ তাদের ব্যবসায়িক বিস্তৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ট্রাম্প মিডিয়ার মূল শক্তি কোম্পানির ব্যবসায়িক কাঠামোর চেয়ে ট্রাম্প নামেই বেশি নির্ভরশীল। ইউরো প্যাসিফিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিটার শিফের মতে, এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মূলত একটি কার্যকর ব্যবসা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের ফলে বিদ্যুৎ চাহিদা যে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে, সেটিকে কেন্দ্র করেই এই চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও ফিউশনের মতো প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ফলে এখনো বাণিজ্যিকভাবে পুরোপুরি পরীক্ষিত না হলেও ফিউশন শক্তির পেছনে রাষ্ট্রীয় সমর্থন জোরালো।

এই উদ্যোগ ট্রাম্প মিডিয়ার জন্যও এক বড় মোড়। ২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর যে মিডিয়া কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটি নানা আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটতে হাঁটতে এখন উচ্চপ্রযুক্তির শক্তি খাতে পা রাখল।

টিএই টেকনোলজিসের পেছনে রয়েছে করপোরেট আমেরিকার প্রভাবশালী বিনিয়োগকারীরা। অ্যালফাবেট, শেভরন, গোল্ডম্যান স্যাকসসহ একাধিক বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পারিবারিক বিনিয়োগ তহবিল এতে যুক্ত। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক নিউক্লিয়ার ফিউশন গবেষণায় অন্যতম পুরোনো ও পরিচিত নাম। তাদের বোর্ডে রয়েছেন সাবেক মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী আর্নেস্ট মনিজের মতো খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকরা।

টিএইয়ের প্রধান নির্বাহী মিখল বিন্ডারবাউয়ার জানিয়েছেন, ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। একীভূত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হচ্ছেন মাইকেল শোয়াব, যিনি চার্লস শোয়াবের পুত্র এবং দীর্ঘদিন ধরে টিএইয়ের বিনিয়োগকারী।

বিন্ডারবাউয়ারের দাবি, দুই দশকের গবেষণায় তাদের প্রযুক্তি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব। তবে এর জন্য বিপুল পুঁজি প্রয়োজন, আর এই একীভূতকরণ সেই অর্থায়নের পথ খুলে দেবে।

চুক্তির বিস্তারিত এখনো খুব স্পষ্ট নয়। নতুন প্রতিষ্ঠানে সহপ্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ট্রাম্প মিডিয়ার বর্তমান প্রধান ডেভিন নুনেস। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক কলের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পাবলিকলি ট্রেডেড নিউক্লিয়ার ফিউশন কোম্পানি গঠনের আশা প্রকাশ করেন এবং ২০৩১ সালের মধ্যে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য জানান।

চুক্তির ঘোষণার পর ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ারের দাম একদিনেই ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যদিও বছরজুড়ে শেয়ারটির দর এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে কম। কোম্পানিটির বড় অংশের মালিকানা ট্রাম্প পরিবারের হাতেই রয়েছে।

নুনেসের ভাষায়, ট্রাম্প মিডিয়া প্রথমে অনলাইন মতপ্রকাশের অবকাঠামো গড়ে তুলেছিল, আর এখন তারা এমন এক বিপ্লবী প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক জ্বালানি নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।

তবে সমালোচনাও রয়েছে। কংগ্রেসের ফিউশন এনার্জি ককাসের সহসভাপতি ডন বেয়ার এই একীভূতকরণে স্বার্থের সংঘাতের ঝুঁকি দেখছেন এবং সরকারি অর্থ যেন জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

বিশ্বজুড়ে ফিউশন খাতে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছরে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে কয়েক বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঢুকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগও ফিউশন উন্নয়নে নতুন কৌশল ও দপ্তর গঠন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প মিডিয়া ও টিএইয়ের এই জোট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি রাজনীতির সংযোগস্থলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।