সত্যেন্দ্রকুমার বসু
চাঙ আন আর লোইয়াঙ, এই দুই রাজধানীতেই যেসব মুখ্য সন্ন্যাসীরা বৌদ্ধধর্মের চর্চা করে থাকেন, তাঁরা সর্বদাই আমার কাছে আসতেন বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা করতে, ধর্ম সম্বন্ধে গভীর ভাবে চিন্তা করতে আর ধার্মিক জীবনের ফললাভ করতে। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, ধর্মের উপদেশ দিয়েছি, বিচার করেছি। যদিও এ কথা বলতে আমি সংকোচ বোধ করচি, তবুও এ সত্য যে, আজকালকার মধ্যে কোনও সন্ন্যাসীরই আমার চেয়ে বেশি খ্যাতি নেই।
আমি যদি ধর্মের আরও অনুশীলন করতে চাই, আমার খ্যাতি আরও বাড়াতে চাই, আপনি কি মনে করেন আমি টুন্ হুয়াঙের সন্ন্যাসীদের শিষ্যত্ব করব?’ এক সামান্য সীমান্তের দুর্গরক্ষীকে এই কঠিন তিরস্কার করবার পর আবার তাকে এই ভাবে বোঝালেন- ‘ধর্মশাস্ত্রগুলি আর তার ভাষ্যগুলির অসম্পূর্ণ অবস্থা আমার গভীর দুঃখের কারণ হয়েছে।
নিজের ক্ষতির আশঙ্কা, বিপদ-আপদ তুচ্ছ করে আমি পণ করেছি যে, বুদ্ধদেব যে ধর্মশিক্ষা মানুষকে দান ক’রে গিয়েছেন, ভারতবর্ষে গিয়ে সেই ধর্ম অন্বেষণ করব। কিন্তু আপনি দয়ালু লোক হওয়া সত্ত্বেও আমার এই আগ্রহে উৎসাহ না দিয়ে আমাকে নিবৃত্ত হতে বলছেন!
এর পর কি আপনি এ কথা বলতে সাহসী হবেন যে, আমার মতন আপনিও সংসারের প্রাণীদের দুঃখে দুঃখী বা আমার মতন আপনিও জীবের মুক্তি ইচ্ছা করেন? আপনি যদি আমার যাত্রায় বাধা দেন, তা হলে আপনার কাছে আমার প্রাণ বলি দেব, তবু হিউএনচাঙ চীনদেশের অভিমুখে এক পাও বাড়াবে না।’
চলবে
হিউএনচাঙ (পর্ব-১২)