নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট দেখে হাইকোর্ট বলেছেন, সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া চলছে। এটা তো সিরিয়াস এলিগেশন (গুরুতর অভিযোগ)। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন। পরে হাইকোর্ট এ তদন্ত রিপোর্ট নথিভুক্ত করেন ও এ সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন। আজ বুধবার রুল শুনানির দিন ধার্য করার জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় আসবে বলে আদেশ দেন।
আদালত বলেন, রুল শুনানির সময় আমরা সব বিষয় শুনবো। দেশের সব মানুষের যেন উপকার হয় আমরা এমন আদেশ দিতে চাই। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে আসা তদন্ত প্রতিবেদনে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আয়ানের মা-বাবাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কমিটি অনুমোদনহীন সব হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে নতুন কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনঃপূত হয়নি।
আমরা পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করে দিচ্ছি। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কমিটিতে তিনজন চিকিৎসক, দুইজন সিভিল সোসাইটির ব্যক্তি ও একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে রাখা হয়। সোহওয়ার্দী হাসপাতালের অধ্যাপক ডাক্তার এ বি এম মাকসুদুল আলমকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলা আছে কী না, তার মৃত্যুর ঘটনায় কারা দায়ী এ কমিটি তা খুঁজে বের করবে।
এদিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে , সাতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা উচিত। ক্ষতিপূরণের একটি অংশ আয়ানের পিতামাতাকে প্রদান করা এবং অন্য অংশ দিয়ে দুস্থ শিশু ও কিশোর/কিশোরীদের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ করার জন্য কমিটির সদস্যরা সুপারিশ করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কর্মকান্ড পরিচালনা এবং শিশু আয়ানের মৃত্যুর জন্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ডাক্তার তাসনুভা মাহজাবীন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সৈয়দ সাব্বির আহম্মদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলো। চিকিৎসা সংক্রান্ত লিখিত সম্মতিপত্রটি বাংলায় বড় বড় অক্ষরে স্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে লিখতে হবে, যাতে রোগীর বাবা-মা বা অভিভাবকেরা সেটি সহজে পড়তে পারেন এবং চিকিৎসা ও তার পরবর্তী ফলাফল সম্পর্কে জেনেবুঝে লিখিত সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করতে পারেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য একটি ‘ইউনিফর্ম’ বা একই ধরনের সম্মতিপত্র প্রস্তুত করার জন্য অনুরোধ ও সুপারিশ করা হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা কর্মকান্ড পরিচালনা করছে, সেগুলো খুঁজে বের করে অবিলম্বে সেখানে চিকিৎসা কর্মকান্ড বন্ধ করা, এবং সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
Sarakhon Report 


















