আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
‘ইস, ভারি, ওদের জমায়েতে যেতে বয়ে গেছে আমার!’ নিজের মনে বললেন মামা।
মামা বিছানায় শুয়ে ঘুমনো পর্যন্ত অপেক্ষা করলুম। তারপর চুপিচুপি এক সময়ে বেরিয়ে পড়লুম রাস্তায়।
মনে মনে ভাবলুম, ‘মামাটি আমার দেখছি ফাঁকি দিয়ে এড়িয়ে যেতে ওস্তাদ। নিজেকে একটা মস্ত কেউকেটা মনে করে। তাই বল, মামা ফোরম্যান! আর আমি ভেবেছিলুম, মামা বুঝি পার্টির লোক। কী বলতে চায় মামা, আমায় আবার আর জামাসে ফিরে যেতে হবে নাকি?’
চত্বরে গিয়ে দেখি হাজার দুই-তিন লোক একটা কাঠের মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তাদের কথা শুনছে। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ অতি-উৎসাহী ভাস্কা কোচাগিনের বসন্তের-দাগওয়ালা মুখটা নজরে পড়ল। ডাকলুম, কিন্তু ও শুনতে পেল না।
ওর কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করলুম। একবার-দুবার ভাস্কার কোঁকড়ানো চুলে-ভরা মাথাটা ভিড়ের মধ্যে দেখা গেল, কিন্তু তারপর কোথায় যে হারিয়ে গেল আর দেখতে পেলুম না। মঞ্চের দিকে আর এগোনো যাচ্ছিল না। কাজেই এগোনো বন্ধ করে বক্তৃতা শুনতে লাগলুম। একের-পর-এক বক্তা বক্তৃতা দিয়ে চললেন। তাঁদের মধ্যে একজনের কথা এখনও মনে আছে।
অত্যন্ত সাধারণ চেহারার আর ছোঁড়াখোঁড়া জামাকাপড়-পরা সাধারণ মজুরের মতো দেখতে সেই বক্তাটি। সরমোভোর রাস্তায় অমন কত শয়ে শয়ে লোক ঘুরে বেড়াত তখন। এমনিতে ও-রকম লোকের দিকে নজর পড়ার কথা নয়। আনাড়ির মতো ভঙ্গিতে মাথার থ্যাবড়ানো চাটুর মতো টুপিটা একটানে খুলে ফেলে খাঁকারি দিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে নিলেন উনি, তারপর আবেগভরে গলা চড়িয়ে আর, আমার মনে হল, বেশ তিক্ততা নিয়ে উনি শুরু করলেন:
‘এজিন-তৈরির কারখানার, রেল-কামরা তৈরির কারখানার ও আর-আর কারখানার কমরেডরা, আপনারা সকলে জানেন যে রাজনৈতিক কর্মা বলে দণ্ডিত অপরাধীদের ফাটকে আমায় আট-আটটা বছর কাটাতে হয়েছে। তারপর যেইমাত্তর ছাড়া পেলাম, বুক ভরে খোলা হাওয়া ভালো করে টানবার আগেই, ফের দু-মাস জেল! এবার হল দু-মাসের মেয়াদ। কে এবার আমায় ফাটক দিইছিল জানেন? পুরনো রাজত্বির পুলিশরা নয়, এই নতুন রাজত্বির মোসাহেবরা। জারের আমলে জেল খাটায় কেউ কিছু, মনে করতাম না।