আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
কিন্তু আমি তখন বাইরে বেরিয়ে পড়েছি। ঘোড়সওয়ার সৈনিকের ঘোড়া যেমন জোর কদমে ছোটে, তেমনই কাদামাখা রাস্তা ধরে খানাখন্দ ডিঙিয়ে বেপরোয়াভাবে ছুটে চলেছি।
স্থানীয় পার্টি-অফিস তখন ট্রেন ছাড়ার আগে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের মতোই হৈ-হট্টগোলে সরগরম। অফিসের দোরগোড়াতেই লাগল কোরচাগিনের সঙ্গে জোর ধাক্কা। কোরচাগিন না-হয়ে যদি আরেকটু ছোটখাট আর দুর্বলগোছের কেউ হত, তাহলে সে আমার ওই ধাক্কায় উলটে ধরাশায়ী হত নিশ্চয়। কিন্তু ওঁর গায়ে ধাক্কা দিয়ে উলটে আমারই মনে হল যেন টেলিগ্রাফের পোস্টের গায়ে ধাক্কা খেলুম।
কোরচাগিন ব্যস্তসমস্তভাবে বললেন, ‘এত তাড়া কিসের? ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লে নাকি?’
লজ্জা পেয়ে গিয়ে চোট-খাওয়া মাথাটায় হাত বুলোতে-বুলোতে আর জোরে-জোরে নিশ্বাস টানতে-টানতে বললুম, ‘না, তা নয়, এই, মানে, সেমিওন ইভানোভিচ আপনাকে খবর দিতে বললেন যে উনি ভারিখায় যাচ্ছেন…’
‘জানি। ওরা ফোন করি কয়েছিল।’
‘উনি কিছু ইস্তাহারও চেয়ে পাঠিয়েছেন।’
‘তাও পাঠানো হয়েচে। আর কী?’
‘এরশভকে বলতে হবে ছাপাখানায় যেতে। এই-যে একটা চিঠিও আছে।’
‘কেন, ছাপাখানায় আবার কী হল? দেখি, চিঠি দেখি,’ পুরনো একটা জ্যাকেটের ওপর ফৌজী কোট চড়ানো একজন সশস্ত্র মজুর আমাদের কথার মাঝখানে বাধা দিলেন।
চিঠিটা পড়ে তিনি কোরচাগিনকে বললেন, ‘সেমিওনরে কামড়াচ্চে কিসে? ছাপাখানা লিয়ে এত মাথাব্যথার আচে কী? দুপুরের খাওয়ার পরই তো এক দল পাহারাদার পাঠিয়ে দিচ্চি ওখেনে।’
ক্রমেই বেশি-বেশি লোক দরজা দিয়ে ভেতরে আসতে লাগল। বাইরে ঠান্ডা সত্ত্বেও দরজাটা ছিল হাট করে খোলা। ভেতরে দেখা যাচ্ছিল, ফৌজী ওভারকোট, কামিজ আর রঙচটা বাদামী চামড়ার জ্যাকেট গাদাগাদি করে আছে। দরজার ভেতরেই চলাচলের পথটায় দু-জন লোক ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে একটা প্যাকিং বাক্স ভেঙে খুলেছিল। খোলা হলে পর দেখলুম ভেতরে খড়ে-জড়ানো, ঘন-করে-তেল-মাখানো আনকোরা নতুন সব রাইফেল সারি-সারি সাজানো। দরজার বাইরে কাদার ওপর ওইরকম আরও কয়েকটা খালি প্যাকিং বাক্স পড়ে আছে, দেখা গেল।
Sarakhon Report 



















