শশাঙ্ক মণ্ডল
এই কালীমায়ের ভক্ত কামিনী সে যুগে গান বেঁধেছিল-
কালো বেটী কত খাঁটি সে যে ফুলের মাথায় পরে চরণ দুটি কত কোটি চাঁদ সূরজে আলো করে কত শলক কত রশ্মি কালী মায়ের পায়।
ধানের খেতে ঢেউ উঠিয়ে কালী কালে ঢেউ দেখায়।।
যশোর জেলার বেরবাড়ী গ্রামে কবি পাগলা কানাই এর জন্ম এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। সামান্য তার শিক্ষা দীক্ষা। পরবর্তী কালে নীলকুঠিতে চাপরাশির কাজ করতেন। তার কবিগানে লালন ফকিরের মতো দার্শণিকতা লক্ষ করা যায়। কবিগানের পাশাপাশি অনেক জারিগানও রচনা করেছিলেন। পাগলা কানাই এর একটি বিশিষ্ট কবিগান-
পুলহি রাত যদি হবি পার তিরিশমাত্র পঞ্চ মাণিক সঙ্গে সাক্ষী কর কত ফকির দরবেশ আলেম ফাজেম তাঁরা পুজি করেছেন বহুতর আমি কানাই সুপথে নাই কি জানি কি করেন পরওয়ার ভোলামন তুই বুঝ্যা কর কারবার।
পাগলা কানাই এর সমকালীন কবিয়াল ইদু বিশ্বাস যশোর জেলার ঝিনাইদহ এর ঘোড়ামারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাগলা কানাই এর গুরু রসুলপুরের নয়ান ফকির। নয়ান ফকির এবং পাগলা কানাই এর নামে কয়েকটি বাউলগানও পাওয়া গেছে। পাগলা কানাই এর প্রতিদ্বন্দ্বী কবিয়াল হিসাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইদু বিশ্বাসের সুনাম ছিল। কানাই এর তুলনায় ইদু বিশ্বাস শিক্ষিত ছিলেন বলে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে। ইদু বিশ্বাস সম্পর্কে পাগলা কানাই এর একটি গান-
রঙ ব্যাছে পাগলা কানাই আর দিত্যাছে ইদু ভাই
নতুন রঙ ছাতের বিশ্বাস কয় মন্দ নয়।।
ইদু বিশ্বাসের এই গানটি খুলনা বাগেরহাটের মানুষের মুখে মুখে ফিরত সে যুগে-
‘শোনার ভাই গোর আজারের কথা আমাদের হৃদে আছে গাঁথা।
থেকে থেকে প্রাণ চমকে উঠে কি হবে বিধাতা। সে সব কেতাব কোরাণের কথা সোনকের নেফীর ওজন করবে গোরে গোরে খাড়া মারবে জুলমতেরই কোড়া,
হাড়ে মাংসে মণি মগজে ছোবেনা তোর জোড়া।’