শশাঙ্ক মণ্ডল
বাউল
বৌদ্ধ সহজিয়া সুফি ধর্ম এবং বৈষ্ণব সহজিয়া মতের সম্মেলনে সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে আমাদের দেশে বাউলমতের সৃষ্টি ও পুষ্টি ঘটে। দেহমন্দিরে প্রাণের ঠাকুর খোঁজাই হল বাউল সাধনার লক্ষ্য। সব গুরুবাদী সাধনার মতো বাউলের সাধন ভজন প্রহেলিকাময় ধাঁধায় পূর্ণ। অধিকাংশ বাউল সাধকের জন্ম কুষ্টিয়া যশোর জেলায়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে পরবর্তী কালে এই সাধনার ধারা ছড়িয়ে পড়ে। লৌকিক বাংলার সমাজ-
সংস্কৃতি ও ধর্মে বাউলদের এক বিরাট স্থান রয়েছে। সমাজিক অর্থনৈতিক কারণে মূলত কৃষিজীবী ও কারিগর (তাঁতী) সম্প্রদায়ের মধ্যে বাউলদের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে গোড়া পন্থীরা কোন দিন বাউলদের সুনজরে দেখেনি। উভয়ের কাছ থেকে নিন্দা নিগ্রহ বিদ্বেষ সহ্য করতে হয়েছে বাউলদের। (১) নানারকম বিধান জারি করে বাউলদের একঘরে করার চেষ্টা চলেছে বারবাব, তবু তাদের প্রাণের সঞ্জীবনী মন্ত্রে সমস্ত বাধাকে অপসৃত করে আজও টিকে আছে যদিও বর্তমান যুগে বাউলদের একটা বড় অংশ মাধুকরী ত্যাগ করে নানারকম পেশার মধ্যে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
বাউলদের ভাব বিনিময় করার ক্ষেত্রে হিসাবে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে নানা মেলা আছে। ব্রিটিশযুগে ফরিদপুরের সুরেশ মেলা, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির হরিঠাকুর মেলায় বাউলের সমাবেশ ঘটত। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার লালন শাহ মাজার বাউল ফকিরদের এক মহা মিলনক্ষেত্র হিসাবে আজও অটুট আছে। বসিরহাটের কাজী মৌলভী কেরামাতুল্যাহ এবং গোলাম কিবরিয়া রচিত ‘উচিত কথা’ বইতে বাউলমতে ফকিরীতত্ত্ব চারটি-
তা হল-
আউলে ফকির আল্লাহ বাউলে মোহমদ
দরবেশে আদম ছফি এই তক হদ
তিনমত একসাথ করিয়া যে অলি
প্রকাশ করিয়া দিল সাঁই মত বলি।।