১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৪)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 19

শশাঙ্ক মণ্ডল

ডঃ উপেন ভট্টাচার্য: বাংলার বাউল

(১)

শাস্ত্রতীর্থ ধর্ম আদি

সকলের মূল মানুষ নিধি

তার উপরে নাই রে বিধি,

ভজন পূজন জপমালা।

(২)

জাতাজাতি সৃষ্টি করে ভারতকে শ্মশানে দিলে

যতসব কায়েত বামন অবশেষে এই বুঝিলে শূদ্র বৌদ্ধ ইতর মুসলমান সবি তো এক মায়ের সন্তান ভারতের মাটিতে সবারই প্রাণ কেউ না দেখিলে।’

আমাদের সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা যখন ধর্ম নিয়ে পরস্পর বিবদমান গোষ্ঠী ও পংক্তিতে বিভক্ত, তখন এসব পল্লীগীতির অর্ধশিক্ষিত গায়ক গীতিকাররা এক মহান মিলনের মন্ত্রে নিজেদের আবদ্ধ করেছেন- এর থেকে উচ্চমার্গীয়রা কোন শিক্ষা নেবেন কিনা জানি না। লোকশিক্ষার এমন উদাহরণ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এমন উজ্জ্বল উপস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক মহান দিক।

অষ্টক

বসন্তকালে সাধারণত এই গান পালাকারে শিল্পীরা গেয়ে থাকে। বসন্তকালীন সঙ্গীত বলে এর সুর একটু চড়া। রাধাকৃষ্ণ শিব দুর্গা, রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী নিয়ে পালা গান গাওয়া হয়ে থাকে। অষ্ট সখী সহযোগে নাচ গান হয় বলে অনেকে একে অষ্টক বলে থাকেন। অষ্টকের সূত্রধর হিসাবে সরকারের একটা বড় ভূমিকা থাকে। তিনি পালার মধ্যে যোগসূত্র রচনা করেন। সমকালীন বিষয় নিয়েও অষ্টক রচিত হতে দেখা যায়। পণপ্রথা, সাম্প্রদায়িকতা, কৃষি সমস্যা, অষ্টকের মধ্যে এসে ভিড় করে। যশোর খুলনা জেলায় অষ্টক গানের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। দশ বারো জন শিল্পী তার মধ্যে ছোট ছেলে মেয়ে ৬/৮ জন, সামান্য বাদ্য যন্ত্র এবং পোষাকের বাক্স নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে এই গান পরিবেশন করতে দেখা যায়।

অষ্টকের আসরে পাঁচালী সুরে নাচ গানের সাহায্যে পালা পরিবেশন করা হয়। দোল ও চড়ক উৎসব উপলক্ষে অষ্টক গানের বহুল প্রচলন সুন্দরবনের পূর্বাংশের জেলা গুলিতে বিশেষভাবে লক্ষ করা যেত। দুর্গার বিসর্জন উপলক্ষে অষ্টক গানের এই পদটি সে যুগে লোকের মুখে মুখে ফিরত ‘সোনার কমল ভাসিয়ে জলে আমার মা বুঝি কৈলাসে চলিল।’- বর্তমানে অষ্টক গানের খুব প্রচলন নেই। গাইঘাটা মণ্ডলপাড়া গ্রামে অষ্টক গানের একটি দল বিভিন্ন এলাকায় এখনও অষ্টব পালা পরিবেশন করতে দেখা যায়। পূর্বের শিল্পীরা মারা যাবার ফলে এবং বর্তমানের যুগের সংকট, বঙ্গবিভাগ প্রভৃতির ফলে অষ্টক গানের প্রচলন খুব একটি লক্ষ করা যায় না। বাঙলাদেশে দু একটি অষ্টক গানের দল যশোর জেলায় নড়াইল মহকুমায় আজও পালা গেয়ে চলছে- সে সংবাদ বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি বিদদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই ধারাটি ক্রমক্ষীয়মান তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিলুপ্ত কৃষ্ণ যাত্রার স্মৃতি অষ্টক গানের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৪)

১২:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

ডঃ উপেন ভট্টাচার্য: বাংলার বাউল

(১)

শাস্ত্রতীর্থ ধর্ম আদি

সকলের মূল মানুষ নিধি

তার উপরে নাই রে বিধি,

ভজন পূজন জপমালা।

(২)

জাতাজাতি সৃষ্টি করে ভারতকে শ্মশানে দিলে

যতসব কায়েত বামন অবশেষে এই বুঝিলে শূদ্র বৌদ্ধ ইতর মুসলমান সবি তো এক মায়ের সন্তান ভারতের মাটিতে সবারই প্রাণ কেউ না দেখিলে।’

আমাদের সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা যখন ধর্ম নিয়ে পরস্পর বিবদমান গোষ্ঠী ও পংক্তিতে বিভক্ত, তখন এসব পল্লীগীতির অর্ধশিক্ষিত গায়ক গীতিকাররা এক মহান মিলনের মন্ত্রে নিজেদের আবদ্ধ করেছেন- এর থেকে উচ্চমার্গীয়রা কোন শিক্ষা নেবেন কিনা জানি না। লোকশিক্ষার এমন উদাহরণ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এমন উজ্জ্বল উপস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক মহান দিক।

অষ্টক

বসন্তকালে সাধারণত এই গান পালাকারে শিল্পীরা গেয়ে থাকে। বসন্তকালীন সঙ্গীত বলে এর সুর একটু চড়া। রাধাকৃষ্ণ শিব দুর্গা, রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী নিয়ে পালা গান গাওয়া হয়ে থাকে। অষ্ট সখী সহযোগে নাচ গান হয় বলে অনেকে একে অষ্টক বলে থাকেন। অষ্টকের সূত্রধর হিসাবে সরকারের একটা বড় ভূমিকা থাকে। তিনি পালার মধ্যে যোগসূত্র রচনা করেন। সমকালীন বিষয় নিয়েও অষ্টক রচিত হতে দেখা যায়। পণপ্রথা, সাম্প্রদায়িকতা, কৃষি সমস্যা, অষ্টকের মধ্যে এসে ভিড় করে। যশোর খুলনা জেলায় অষ্টক গানের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। দশ বারো জন শিল্পী তার মধ্যে ছোট ছেলে মেয়ে ৬/৮ জন, সামান্য বাদ্য যন্ত্র এবং পোষাকের বাক্স নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে এই গান পরিবেশন করতে দেখা যায়।

অষ্টকের আসরে পাঁচালী সুরে নাচ গানের সাহায্যে পালা পরিবেশন করা হয়। দোল ও চড়ক উৎসব উপলক্ষে অষ্টক গানের বহুল প্রচলন সুন্দরবনের পূর্বাংশের জেলা গুলিতে বিশেষভাবে লক্ষ করা যেত। দুর্গার বিসর্জন উপলক্ষে অষ্টক গানের এই পদটি সে যুগে লোকের মুখে মুখে ফিরত ‘সোনার কমল ভাসিয়ে জলে আমার মা বুঝি কৈলাসে চলিল।’- বর্তমানে অষ্টক গানের খুব প্রচলন নেই। গাইঘাটা মণ্ডলপাড়া গ্রামে অষ্টক গানের একটি দল বিভিন্ন এলাকায় এখনও অষ্টব পালা পরিবেশন করতে দেখা যায়। পূর্বের শিল্পীরা মারা যাবার ফলে এবং বর্তমানের যুগের সংকট, বঙ্গবিভাগ প্রভৃতির ফলে অষ্টক গানের প্রচলন খুব একটি লক্ষ করা যায় না। বাঙলাদেশে দু একটি অষ্টক গানের দল যশোর জেলায় নড়াইল মহকুমায় আজও পালা গেয়ে চলছে- সে সংবাদ বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি বিদদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই ধারাটি ক্রমক্ষীয়মান তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিলুপ্ত কৃষ্ণ যাত্রার স্মৃতি অষ্টক গানের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে।