সত্যেন্দ্রকুমার বসু
রাজাও ছাড়েন না। এদিকে ভক্তি ও সম্মানের মাত্রা এত বেড়ে গেল যে, রাজা ধর্মগুরুকে নিজের আহার পরিবেশন করতে লাগলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে হিউএনচাঙ প্রায়োপবেশন করবার ভয় দেখালেন। তিনি সোজা নিশ্চলভাবে অবস্থান করলেন; তিনদিন একফোঁটা জলও মুখে দিলেন না। চতুর্থদিনে রাজা দেখলেন যে, ধর্মগুরুর নিঃশ্বাস অতি ক্ষীণভাবে বইছে।
নিজের হঠকারিতায় লজ্জিত ভীত হয়ে তিনি ধর্মগুরুকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত ক’রে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। বুদ্ধদেবের মূর্তির সম্মুখে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তিনি অতিথিকে যেতে দেবেন। শুধু অনুরোধ করলেন যে, ফিরবার পথে যেন তিন বছর তিনি তাঁর রাজ্যে কাটিয়ে যান। আর বললেন, ‘ভবিষ্যতে কোঁনোও কল্পে যদি আপনি বুদ্ধত্ব প্রাপ্ত হন, তা হলে প্রসেনজিত বা বিম্বিসারের মত আমি যেন আপনার সেবা করতে পাই।’
রাজার অনুরোধে হিউএনচাঙ আর একমাস তুরফানে থেকে রাজসভায় ও প্রজাদের ধর্মোপদেশ দিতে রাজী হলেন। রাজা এক চাঁদোয়া টাঙালেন যার তলায় তিন শত লোক বসতে পারে। মহারানী, রাজা স্বয়ং, দেশের সমস্ত মঠের অধ্যক্ষরা আর প্রধান প্রধান রাজকর্ম-চারীরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বসে সশ্রদ্ধভাবে তাঁর উপদেশ গ্রহণ করত। প্রত্যহ উপদেশের সময় হলে স্বয়ং রাজা একটা গন্ধদ্রব্যের পাত্র হাতে নিয়ে আসতেন আর বেদীর কাছে একটা পাদপীঠ স্থাপন করতেন। তার উপরে পা দিয়ে হিউএনচাঙকে প্রত্যহ বেদীতে বসতে হত।
(চলবে)