শ্রী নিখিলনাথ রায়
হেষ্টিংসের সহিত কান্তবাবুর সম্বন্ধ অতি ঘনিষ্ঠ ছিল। যেখানে হেষ্টিংস, সেইখানে কান্তবাবু। যে কার্য্যে হেষ্টিংস হস্ত প্রদান করিয়াছেন, সঙ্গে সঙ্গে কান্তবাবুও তাহাতে অগ্রসর। কি জমিদারী-সংক্রান্ত বন্দোবস্ত, কি কর্মচারিনিয়োগ, সমস্ত কার্য্যেই হেষ্টিংসের সঙ্গে কান্ত বাবুকে দেখিতে পাওয়া যায়। ‘মহামতি বার্ক বলিয়াছেন যে, ভারত-সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে হেষ্টিংসের নাম শুনা যায়, তৎসঙ্গে তাঁহার বেনিয়ান কান্ত বাবুর নামও শ্রুত হওয়া যায়।
কোনরূপ বন্দোবস্ত করিতে হইলে, তৎকালে কোম্পানীর কর্মচারীয়া আপনাদিগের উদর পূর্ণ না করিয়া ক্ষান্ত হইতেন না। সিরাজ উদ্দৌলার সিংহাসনচ্যুতি হইতে আরম্ভ করিয়া, এই সময় পর্যন্ত তাঁহারা এই প্রথা অবলম্বন করিয়া আসিয়াছেন। বাঙ্গলার রাজকোষ শূন্য করিয়া তাঁহারা মীরজাফরকে মসনদে উপবেশন করাইয়াছিলেন। রিক্তকোষে রিক্তহস্তে মীরজাফরের রাজত্বের আরম্ভ!
অবশেষে কোষ পূর্ণ করিতে হতভাগ্য প্রজাগণের উপর অত্যাচার! মীর কাশেমকে নবাব করিবার সময়ও, কোম্পানীর সহিত বন্দোবস্ত ব্যতীত তাঁহাদের কর্মচারিগণের সহিত বন্দোবস্ত পৃথক হয় এবং সেই গুপ্ত বন্দোবস্ত প্রতিপালনে অসমর্থ হওয়ায়, মীর কাশেমকে বিদ্রোহী বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে, হ্যায়বান্ ইংরেজ কর্মচারিগণ ত্রুটি করেন নাই। মীর জাফরের পুনরভিষেকের সময় এবং মীরণের অল্পবয়স্ক পুত্রকে উপেক্ষা করিয়া, নজম উদ্দৌলাকে নবাবীপ্রদানের সময়ও, সেই গুপ্ত বন্দোবস্তপ্রথা প্রবর্তিত হইয়াছিল।
এমন কি সম্রাট শাহ আলম বারংবার কোম্পানীকে বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যা প্রদান করিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন, কিন্তু পাছে আপনা-দের উদরপূরণের ব্যাঘাত ঘটে, এই আশঙ্কায় কোম্পানীর হিতৈষী কর্মচারিগণ ঐরূপ ঝঞ্ঝাট স্কন্ধে লইতে সাহসী হন নাই। দেওয়ানী লইয়া তাঁহাদের একটি বিশেষ লাভের মূলে কুঠারাঘাত পতিত হয়।