১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৬৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 18

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তাঁহারা নবাবদিগের নিকট হইতে আর সেরূপ অর্থোপার্জন করিতে পারিতেন না; পরন্তু নবাবকে বৃত্তিস্বরূপ কোম্পানীর কোষ হইতে অর্থ প্রদান করিতে হইত। সেইজন্য তাঁহারা অন্যান্য লোকের সহিত বন্দোবস্তে আপনাদের লাভের সামঞ্জস্য করিয়া লইতেন। কোম্পানীর কর্মচারিগণ এইরূপ যেখানে বন্দোবস্ত করিয়াছেন, তথার অগ্রে হস্তপ্রসারণ করিয়া-ছেন, পরে বন্দোবস্তের অনুমতি দিয়াছেন। প্রধান কর্মচারিগণের ন্যায় তাঁহাদের দেওয়ান বা বেনিয়ানগণও এইরূপ লাভ হইতে বঞ্চিত হন নাই।

সিরাজ উদ্দৌলার ধনাগার লুণ্ঠনের সময় ক্লাইবের দেওয়ান-রামচাঁদ ও মুন্সী নবকৃষ্ণ যথেষ্ট লাভ করিয়াছিলেন। কোম্পানীর প্রত্যেক কর্মচারী আপনাদের উদরপূরণের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের মুৎসুদ্দীদিগের সুবিধা করিয়া দিতেন। হেষ্টিংস সাহেবও পূর্ব্বপ্রথা অবলম্বন করিয়া, নিজের সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় কান্তেরও অর্থাগমের যথেষ্ট সুবিধা করিয়া দেন। কি ভারতবর্ষে, কি ইংলন্ডে, হেষ্টিংসের উৎকোচ গ্রহণব্যাপার জনসাধারণে বিশেষরূপে অবগত আছে।

প্রত্যেক কার্য্যে এরূপ ভীষণ উৎকোচগ্রহণ, অতি অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। তাঁহার উৎকোচগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে, কাস্তও জড়িত ছিলেন। দুই একটির উদাহরণ দেওয়া যাইতেছে। হেটিংসের নামে যে সকল অভিযোগ উপস্থিত হয়, তন্মধ্যে অষ্টম অভিযোগের একস্কুলে লিখিত আছে যে, হেষ্টিংস, খাঁ জাহান খাঁ নামক এক ব্যক্তিকে বার্ষিক ৭২,০০০ টাকায় হুগলীর ফৌজদার নিযুক্ত করিয়া, তাঁহার নিকট হইতে বৎসরে নিজে ৩৬,০০০ টাকা ও তাঁহার বেনিয়ান কান্ত, বৎসরে ৪,০০০ টাকা উৎকোচস্বরূপ লইতেন।

ইহা অপেক্ষা ভয়ানক উৎকোচগ্রহণ আর আছে কি না জানি না। একজন ৭২,০০০ টাকা বার্ষিক বেতন পাইয়া তাহা হইতে যদি ৪০,০০০ টাকা উৎকোচ প্রদান করে, তাহা হইলে, তাহার আয়ের কত লাঘব হয়, ইহা সহজে বুঝা যাইতে পারে। সুতরাং সে ব্যক্তি স্বীয় আয় ঠিক রাখিবার জন্য অবশেষে যে অত্যাচারের সাহায্য লইয়া, হতভাগ্য প্ৰজাৰৰ্গকে উৎপীড়িত করিবে, তাহাতে আর বৈচিত্র্য কি?

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৬৭)

১১:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তাঁহারা নবাবদিগের নিকট হইতে আর সেরূপ অর্থোপার্জন করিতে পারিতেন না; পরন্তু নবাবকে বৃত্তিস্বরূপ কোম্পানীর কোষ হইতে অর্থ প্রদান করিতে হইত। সেইজন্য তাঁহারা অন্যান্য লোকের সহিত বন্দোবস্তে আপনাদের লাভের সামঞ্জস্য করিয়া লইতেন। কোম্পানীর কর্মচারিগণ এইরূপ যেখানে বন্দোবস্ত করিয়াছেন, তথার অগ্রে হস্তপ্রসারণ করিয়া-ছেন, পরে বন্দোবস্তের অনুমতি দিয়াছেন। প্রধান কর্মচারিগণের ন্যায় তাঁহাদের দেওয়ান বা বেনিয়ানগণও এইরূপ লাভ হইতে বঞ্চিত হন নাই।

সিরাজ উদ্দৌলার ধনাগার লুণ্ঠনের সময় ক্লাইবের দেওয়ান-রামচাঁদ ও মুন্সী নবকৃষ্ণ যথেষ্ট লাভ করিয়াছিলেন। কোম্পানীর প্রত্যেক কর্মচারী আপনাদের উদরপূরণের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের মুৎসুদ্দীদিগের সুবিধা করিয়া দিতেন। হেষ্টিংস সাহেবও পূর্ব্বপ্রথা অবলম্বন করিয়া, নিজের সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় কান্তেরও অর্থাগমের যথেষ্ট সুবিধা করিয়া দেন। কি ভারতবর্ষে, কি ইংলন্ডে, হেষ্টিংসের উৎকোচ গ্রহণব্যাপার জনসাধারণে বিশেষরূপে অবগত আছে।

প্রত্যেক কার্য্যে এরূপ ভীষণ উৎকোচগ্রহণ, অতি অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। তাঁহার উৎকোচগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে, কাস্তও জড়িত ছিলেন। দুই একটির উদাহরণ দেওয়া যাইতেছে। হেটিংসের নামে যে সকল অভিযোগ উপস্থিত হয়, তন্মধ্যে অষ্টম অভিযোগের একস্কুলে লিখিত আছে যে, হেষ্টিংস, খাঁ জাহান খাঁ নামক এক ব্যক্তিকে বার্ষিক ৭২,০০০ টাকায় হুগলীর ফৌজদার নিযুক্ত করিয়া, তাঁহার নিকট হইতে বৎসরে নিজে ৩৬,০০০ টাকা ও তাঁহার বেনিয়ান কান্ত, বৎসরে ৪,০০০ টাকা উৎকোচস্বরূপ লইতেন।

ইহা অপেক্ষা ভয়ানক উৎকোচগ্রহণ আর আছে কি না জানি না। একজন ৭২,০০০ টাকা বার্ষিক বেতন পাইয়া তাহা হইতে যদি ৪০,০০০ টাকা উৎকোচ প্রদান করে, তাহা হইলে, তাহার আয়ের কত লাঘব হয়, ইহা সহজে বুঝা যাইতে পারে। সুতরাং সে ব্যক্তি স্বীয় আয় ঠিক রাখিবার জন্য অবশেষে যে অত্যাচারের সাহায্য লইয়া, হতভাগ্য প্ৰজাৰৰ্গকে উৎপীড়িত করিবে, তাহাতে আর বৈচিত্র্য কি?