০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

আদানীর ঝাড়খন্ড কেন্দ্রের বিদ্যুৎ পুরোটুকু চাওয়া হয়েছে

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৩৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 13

সারাক্ষণ রিপোর্ট  

সারাংশ

  • বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে
  • ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদানি কোম্পানি বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে
  • এটি তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের করা উচ্চমূল্যের একটি চুক্তি বলে সমালোচিত হয়েছে
  • গত কয়েক মাস ধরে তার  মাসে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করছেযা মাসিক বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিলের চেয়েও বেশি

বাংলাদেশ সরকার গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেড কে চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু করা এবং তা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্যে অনুরোধ করছে সরকার

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিপিকয়েকদিন আগে আদানিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে তাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেবলে সারাক্ষণকে জানায়,বিপিডিপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ।

এরপর আদানি তার দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে,” তিনি বলেন।

বিপিডিপির তথ্য অনুযায়ী৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদানি কোম্পানি বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।

সূত্র জানায়ভারতের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি ১ নভেম্বর ২০২৪-এ তার দুটি বিদ্যুৎ ইউনিটের একটি বন্ধ করে দেয়যার ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে। এর কারণ ছিল প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পরিশোধ বকেয়া থাকা।

এটি ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অর্থ পরিশোধ সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ঘটনা।

আদানি সতর্ক করেছিল যে বিপিডিপি যদি অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা না করেতাহলে ৭ নভেম্বর ২০২৪-এ বাকি ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ ইউনিটও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তবে বিপিডিপি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পরিশোধ নিশ্চিত করার পর আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

গত বছর যখন আদানী এই বিদুত কেন্দ্র পূর্ণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছিলতখন বিপিডিপি তাদের দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ রাখতে বলেকারণ শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছিল। তাছাড়া সরকারের ডলার সংকট ছিলো প্রবল আকারে

বিপিডিপি  কর্মকর্তারা জানিয়েছেনগত কয়েক মাস ধরে তার  মাসে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করছেযা মাসিক বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিলের চেয়েও বেশিযাতে পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করা যায়।

আদানি দীর্ঘদিন ধরে বিপিডিপির কাছে তার পাওনা অর্থ পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে।

ডলার সংকটের কারণে বিপিডিপি অনেক স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানতেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওনা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।

বর্তমানে যারা সরকারে আছেন তাদের অনেকে এবং বিগত সরকারের বিরোধীদের কাছে আদানী বিদ্যুৎ ক্রয় শুরু থেকেই বিতর্কিত একটি বিষয় ছিলকারণ এটি তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের করা উচ্চমূল্যের একটি চুক্তি বলে সমালোচিত হয়েছে। এমনকি এই চুক্তি বাতিলের দাবীও তাদের পক্ষ থেকে বার বার করা হয়েছিলো। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) এই চুক্তির পুনর্বিবেচনা এবং প্রয়োজনে বাতিল করার সুপারিশ করেছে।

এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেনআসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকারের হাতে আদানীর কাছে বিদ্যুৎ চাওয়া ছাড়া ভালো কোন অপশন নেই। যে কারণে বাইরে আদানীর এই বিদ্যুৎ নিয়ে ও ভারত নিয়ে যাই বলা হোক না কেন বাস্তবতা মেনে নিয়ে সরকারকে উচ্চমূল্যের এই বিদ্যুৎ এর আদানীকে অনুরোধ করতে হয়েছে

অন্যদিকে ভারতের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও এ নিয়ে কোন আপত্তি করছেন না। দি হিন্দুর বিজনেস লাইনের সাবেক ডেপুটি এডিটর অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিম রঞ্জন বসু মনে করেনবাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে কোন আপত্তি থাকতে পারে না। তবে বকেয়া এবং বর্তমান পাওনা যথাভাবে নিশ্চিত করতে হবে

 এই চুক্তিটি ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ২৫ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্ধারিত হয়েছিল।

অর্থনৈতিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেবাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যখন আদানিকে পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে বলেছেতখন ভারতের আদানি পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার বাজার মূল্য ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে এক পর্যায়ে ৫১১.৮৫ রুপিতে পৌঁছেছে।

এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন গত তিন মাসে অর্থ পরিশোধ সমস্যা কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল।

আদানীর ঝাড়খন্ড কেন্দ্রের বিদ্যুৎ পুরোটুকু চাওয়া হয়েছে

০৩:৩৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট  

সারাংশ

  • বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে
  • ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদানি কোম্পানি বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে
  • এটি তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের করা উচ্চমূল্যের একটি চুক্তি বলে সমালোচিত হয়েছে
  • গত কয়েক মাস ধরে তার  মাসে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করছেযা মাসিক বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিলের চেয়েও বেশি

বাংলাদেশ সরকার গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেড কে চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু করা এবং তা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্যে অনুরোধ করছে সরকার

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিপিকয়েকদিন আগে আদানিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে তাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেবলে সারাক্ষণকে জানায়,বিপিডিপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ।

এরপর আদানি তার দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে,” তিনি বলেন।

বিপিডিপির তথ্য অনুযায়ী৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদানি কোম্পানি বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।

সূত্র জানায়ভারতের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি ১ নভেম্বর ২০২৪-এ তার দুটি বিদ্যুৎ ইউনিটের একটি বন্ধ করে দেয়যার ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে। এর কারণ ছিল প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পরিশোধ বকেয়া থাকা।

এটি ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অর্থ পরিশোধ সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ঘটনা।

আদানি সতর্ক করেছিল যে বিপিডিপি যদি অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা না করেতাহলে ৭ নভেম্বর ২০২৪-এ বাকি ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ ইউনিটও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তবে বিপিডিপি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পরিশোধ নিশ্চিত করার পর আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

গত বছর যখন আদানী এই বিদুত কেন্দ্র পূর্ণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছিলতখন বিপিডিপি তাদের দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ রাখতে বলেকারণ শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছিল। তাছাড়া সরকারের ডলার সংকট ছিলো প্রবল আকারে

বিপিডিপি  কর্মকর্তারা জানিয়েছেনগত কয়েক মাস ধরে তার  মাসে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করছেযা মাসিক বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিলের চেয়েও বেশিযাতে পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করা যায়।

আদানি দীর্ঘদিন ধরে বিপিডিপির কাছে তার পাওনা অর্থ পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে।

ডলার সংকটের কারণে বিপিডিপি অনেক স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানতেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওনা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।

বর্তমানে যারা সরকারে আছেন তাদের অনেকে এবং বিগত সরকারের বিরোধীদের কাছে আদানী বিদ্যুৎ ক্রয় শুরু থেকেই বিতর্কিত একটি বিষয় ছিলকারণ এটি তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের করা উচ্চমূল্যের একটি চুক্তি বলে সমালোচিত হয়েছে। এমনকি এই চুক্তি বাতিলের দাবীও তাদের পক্ষ থেকে বার বার করা হয়েছিলো। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) এই চুক্তির পুনর্বিবেচনা এবং প্রয়োজনে বাতিল করার সুপারিশ করেছে।

এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেনআসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকারের হাতে আদানীর কাছে বিদ্যুৎ চাওয়া ছাড়া ভালো কোন অপশন নেই। যে কারণে বাইরে আদানীর এই বিদ্যুৎ নিয়ে ও ভারত নিয়ে যাই বলা হোক না কেন বাস্তবতা মেনে নিয়ে সরকারকে উচ্চমূল্যের এই বিদ্যুৎ এর আদানীকে অনুরোধ করতে হয়েছে

অন্যদিকে ভারতের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও এ নিয়ে কোন আপত্তি করছেন না। দি হিন্দুর বিজনেস লাইনের সাবেক ডেপুটি এডিটর অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিম রঞ্জন বসু মনে করেনবাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে কোন আপত্তি থাকতে পারে না। তবে বকেয়া এবং বর্তমান পাওনা যথাভাবে নিশ্চিত করতে হবে

 এই চুক্তিটি ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ২৫ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্ধারিত হয়েছিল।

অর্থনৈতিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেবাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যখন আদানিকে পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে বলেছেতখন ভারতের আদানি পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার বাজার মূল্য ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে এক পর্যায়ে ৫১১.৮৫ রুপিতে পৌঁছেছে।

এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন গত তিন মাসে অর্থ পরিশোধ সমস্যা কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল।