সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ৬৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭৯.৩০ বিলিয়ন টাকা) ঋণ অনুমোদন করেছে
- বে অফ বেঙ্গলে স্থাপিত এই টার্মিনাল দেশের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রমে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে
- দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং কন্টেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সম্পন্ন হয়
- জাহাজের অপেক্ষার সময় কমে যাওয়ায় বছরে প্রায় ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতে পারে, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার
ভূমিকা
দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির থাকা বে টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ নতুন করে শুরু করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এই টার্মিনাল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আরও গতিশীল করা এবং দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুত সম্পন্ন করা। সাম্প্রতিক প্রস্তাবে প্রকল্প খরচ ৪৩.০৭ শতাংশ বেড়ে ১৪৯.০৯ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছাতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি
- এর আগে এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৪.২১ বিলিয়ন টাকা (২০২৪ সালের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী)।
- এখন তা ৪৪.৮৮ বিলিয়ন টাকা বাড়িয়ে ১৪৯.০৯ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
- প্রকল্পের বাস্তবায়নের আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
অর্থায়ন ও ঋণ
- চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৬.৩৬ বিলিয়ন টাকা সরবরাহ করবে।
- বিশ্বব্যাংক থেকে ১০২.৭৩ বিলিয়ন টাকার সমপরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
- গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ৬৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭৯.৩০ বিলিয়ন টাকা) ঋণ অনুমোদন করেছে। ফলে এখনও প্রায় ১৯২ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়ে গেছে।
- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মনে করছে, বাকি অর্থ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ঋণ হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। অন্যথায় সিপিএ বা সরকারি তহবিল থেকে ২৩.৪২ বিলিয়ন টাকা বাড়তি সংগ্রহ করতে হতে পারে।
টার্মিনালের সম্ভাবনা
নতুন প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বে অফ বেঙ্গলে স্থাপিত এই টার্মিনাল দেশের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রমে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে। ফলে বড় আকারের প্যানাম্যাক্স জাহাজ (১২.০৪ মিটার ড্রাফট ও ২৮৯.৫৬ মিটার দৈর্ঘ্য) সরাসরি বন্দরে আসতে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ৮.৫০ থেকে ১০.০০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে।
. প্রস্তাবিত অবকাঠামো
- চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিম পাশে স্যান্ডউইপ চ্যানেলের আনোয়ারা বাজার এলাকায় কয়েকটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
- সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয়ে এসব টার্মিনাল গড়ে তোলা হবে।
- একটি টার্মিনাল নির্মাণে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির সঙ্গে ২০১৮ সালে সরকার-থেকে-সরকার (জি২জি) ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
- ২০১৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় বে টার্মিনাল তৈরির জন্য আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।
সম্ভাব্য সাফল্য
এই নতুন টার্মিনাল চালু হলে দেশের মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রায় ৩৬ শতাংশ এখানে সম্পন্ন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বন্দর পরিচালনায় বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কার্যকারিতা বাড়ানোই এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
কী করা হবে
- অন্তত একটি কন্টেইনার টার্মিনাল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত করা হবে।
- ৬.২১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেকওয়াটার এবং ৬.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
- এই কাজে প্রায় ২৯.৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পর্যন্ত ড্রেজিং করার প্রয়োজন হতে পারে।
বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের সীমাবদ্ধতা
- দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং কন্টেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সম্পন্ন হয়।
- চট্টগ্রাম বন্দরের মূল নকশা অনুযায়ী ১.৭ মিলিয়ন টিইইউস (২০ ফুট মাপের কন্টেইনার) হ্যান্ডলিং সামর্থ্য থাকার কথা থাকলেও ২০২২ সালে তা ৩.২৬ মিলিয়ন টিইইউস পেরিয়েছে।
- ২০৪০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১১.৪১ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।
- জাহাজের ড্রাফট সীমিত থাকার কারণে বড় জাহাজগুলো সরাসরি বার্থে ভিড়তে পারে না এবং অনেক সময় পণ্য খালাসে লাইটারেজ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়।
- অতিরিক্ত চাপ ও অপারেশনাল চ্যালেঞ্জের কারণে জাহাজগুলোকে ২-৭ দিন অপেক্ষা করতে হয়, যেখানে ভারতীয় বন্দরে গড়ে ২ দিনের মধ্যে খালাস সম্পন্ন হয়।
সম্ভাব্য ফলাফল ও সুবিধা
- নতুন দুটি টার্মিনাল চালু হলে বছরে মোট ৩.৬৪ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডল করা যাবে (প্রতি টার্মিনালে ১.৮২ মিলিয়ন করে)।
- পাশাপাশি আরও ৬ মিলিয়ন টন নন-কন্টেইনার পণ্য পরিচালনা করা যাবে।
- জাহাজের অপেক্ষার সময় কমে যাওয়ায় বছরে প্রায় ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতে পারে, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার।
পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা
২০২৪ সালের মে মাসে পরিকল্পনা কমিশনের শারীরিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পটির আগের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে জানিয়েছিল, দেশে থাকা তিনটি সমুদ্রবন্দর এখনো সম্পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহৃত হচ্ছে না। তাছাড়া মাতারবাড়িতে বৃহৎ পরিসরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজও চলছে। তাই প্রকল্পটির যৌক্তিকতা আরও বিশদভাবে বিশ্লেষণের সুপারিশ করা হয়েছিল।
ব্যয় বৃদ্ধির কারণ
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “এই টার্মিনালে নতুন কিছু অবকাঠামো যোগ করে ভবিষ্যতে পিপিপি অংশীদারদের উন্নত সেবা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এ কারণেই প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।”