সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বৃহৎ শিল্পখাতের অবদান ১১ শতাংশের বেশি
- চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বড় শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৮৫ শতাংশ
- রকারের সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করেছিল
- বেশি সুদের হার ও এলসি-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে শিল্পখাতে বিনিয়োগের গতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে আবারও আশাব্যঞ্জক উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির পথে ফেরার ঈংগিত দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রদত্ত সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবরে বৃহৎ শিল্পখাতের উৎপাদন সূচক ১১.৩৯ শতাংশ বেড়েছে।মুল্যস্ফীতির কারণে কমতে পারে অভ্যন্তরীন বাজার।
শিল্প খাতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা
- ২৩টি বড় উৎপাদনশীল উপখাতের মধ্যে ১৮টি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
- তামাক, চামড়া, কাগজ, মোটরযান ও লৌহজাত পণ্য খাতে কিছুটা মন্দা দেখা গেছে।
- দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বৃহৎ শিল্পখাতের অবদান ১১ শতাংশের বেশি। এই সূচকের ওঠানামা দেশের সামগ্রিক শিল্পখাতের হালচাল বুঝতে সাহায্য করে।
প্রথম প্রান্তিকের ধীরগতি, পরে ঘুরে দাঁড়ানো
- চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বড় শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৮৫ শতাংশ।
- অক্টোবরে প্রবৃদ্ধির এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে কয়েকটি উপখাতের বড়সড় সাফল্যের ভূমিকা রয়েছে, যেমন:
- যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি: ৩৭.৩৫%
- মুদ্রণ খাত: ৩১.৫%
- কম্পিউটার ও অপটিক্যাল পণ্য: ২৪%
- পোশাক খাত (সূচকে সর্বোচ্চ ওজন রাখে): প্রায় ২০%
- ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট: ১৭.৯২%
- কোক ও রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য: ১১.২৮%
- রাসায়নিক পণ্য: ১১.৫২%
- এক অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শিল্পগুলো হলো:
- খাদ্যপণ্য: ৮%
- বেভারেজ: ৯.৪%
- কাঠ ও কাঠজাত পণ্য: ৯.৯৪%
- বেসিক মেটাল: ৬.৫২%
- আসবাবপত্র: ৫.৬৫%
- ওষুধশিল্প: ২.৬৬%
বেসরকারি সূচক ও শিল্পখাতের অগ্রগতি
বেসরকারি খাতে ক্রয় ব্যবস্থাপকদের সূচক অক্টোবর মাসে ৫৫.৭ পয়েন্টে পৌঁছায়, যা অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করেছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় উৎপাদনও উন্নতির দিকে।
সুদের হার ও এলসি-নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ চেম্বার্স অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার আলম চৌধুরী (পারভেজ) মনে করেন, বেশি সুদের হার ও এলসি-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে শিল্পখাতে বিনিয়োগের গতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি সুদের হার কমানো এবং আমদানি সংক্রান্ত নিয়ম কিছুটা সহজ করার পরামর্শ দেন।
পোশাক খাতের পুনরুজ্জীবন
বাংলাদেশ গার্মেন্ট প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক নেতা এক নেতা ড্রেসের, প্রথম প্রান্তিকের পরে পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও বছরের শুরুতে কিছু অর্ডার ভারত ও পাকিস্তানের দিকে চলে গিয়েছিল, তবে এখন বাজার ফিরতে শুরু করেছে।
অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি
- অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার ফলে ধীরে ধীরে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পাচ্ছে।
- বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক এক অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করেন, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষার্থী আন্দোলনের সাময়িক প্রভাব থাকলেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
- মুদ্রাস্ফীতিকে তিনি বড় ধরনের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আরও বিশ্লেষণ
- “বৃহৎ শিল্পখাতের উৎপাদন সূচকের ৬০ শতাংশের বেশি অবদান পোশাক খাতের। প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এই খাতকে সামগ্রিকভাবে উপরে তুলেছে।”
- সামনের মাসগুলোতে পোশাক রপ্তানির আরও উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ যায়।
ভবিষ্যৎ উদ্বেগ ও আশাবাদ
- উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমতে পারে—এমন আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতি ও বড় শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা মন্থর করে দিতে পারে।
- তবে সরকার ও নীতিনির্ধারকরা সুদের হার নিয়ন্ত্রণ ও আমদানি-সংক্রান্ত বাধা হ্রাসের মতো পদক্ষেপ নিলে বৃহৎ শিল্পখাতের পুনরুজ্জীবন আরো গতিশীল হতে পারে।