সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকার আমানত আটটি বেসরকারি ব্যাংকে আটকে রেখেছে
- গত চার মাস ধরে বিভিন্ন চিঠি পাঠিয়ে চেষ্টা করলেও ব্যাংকগুলো থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না
- এফডিআর এবং স্বল্প-মেয়াদি নোটিশ আমানত হিসেবে রাখা ছিল, যার সাথে সুদ বা মুনাফা যোগ হয়ে পাওনা আরও বাড়ছে
- বিপিসি নিয়মিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যাতে আটকে থাকা অর্থ উদ্ধার করা যায়
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, তারা আটটি বেসরকারি ব্যাংকে রাখা প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকার আমানত ভাঙাতে পারছে না। বিপুল এই অর্থ দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংক গুলো থেকে কোন সাড়া মিলছে না।
২. পটভূমি
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। এরপর থেকে প্রায় চার মাস ধরে বিপিসি বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে তাদের জমা ফিরিয়ে পেতে চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি। আটটি ব্যাংক যারা এই অর্থ ফেরত দিতে দেরি করছে, সেগুলো হলো:
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি) পিএলসি
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাংক
- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক
- সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
৩. আটকে থাকা আমানত ও সুদের হিসাব
বিপিসির মতে, প্রায় ১,৬৭৭.২৩ কোটি টাকা এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট) ও স্বল্প-মেয়াদি নোটিশ আমানত হিসেবে রাখা ছিল। এতে সুদ বা মুনাফা যোগ হওয়ায় পাওনাও বাড়ছে। প্রধানত তিনটি ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ আটকে আছে:
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি): ৭০১.০৯ কোটি টাকা
- ইউনিয়ন ব্যাংক: ২০৬.৫০ কোটি টাকা
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ১৯৫.৭২ কোটি টাকা
৪. ব্যাংকগুলোর ভাষ্য
ব্যাংকগুলোর দাবি, তারল্য সংকটের কারণে এই মুহূর্তে বিপিসির আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা ধাপে ধাপে সুদ বা মুনাফার কিছু অংশ পরিশোধের চেষ্টা করছে।
৫. উন্নয়ন প্রকল্পে বিলম্ব
বিপিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই আমানতের সুদ বা মুনাফা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং নিয়মিত ব্যয় মেটাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু টাকা আটকে থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেরি হচ্ছে এবং নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
৬. ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা
ইসলামী ব্যাংকে বিপিসির প্রায় ২০৭ কোটি টাকা আটকে আছে। পুরো টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না হলেও, জ্বালানি আমদানি বাবদ এলসি খোলার মাধ্যমে আংশিক সমন্বয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
৭. সামগ্রিক পরিস্থিতি
বিপিসি নিয়মিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যাতে আটকে থাকা অর্থ উদ্ধার করা যায়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারণে পুরো টাকা ফেরত দিতে পারছে না; তবে ধাপে ধাপে সুদ বা মুনাফা পরিশোধ করার চেষ্টা করছে।
৮. উপসংহার
প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকা আটকে থাকার কারণে বিপিসির গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প ও নিয়মিত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারল্য সংকটের মুখে থাকা ব্যাংকগুলো সময়মতো আমানত ফেরত দিতে না পারায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও প্রভাবিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে বিপিসি যথাসময়ে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অন্যান্য দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারে।